অভয়নগরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হোসেন দ্বীপের হাহাকার কারো কানে পৌছায়না

# ভবদহের জ¦লাবদ্ধতা #
এসএম মুজিবর রহমান, অভয়নগর যশোর থেকে ঃ যশোরের অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের বিচ্ছিন্ন একটি এলাকার নাম হোসেনদ্বীপ। যেখানে বসবাস করেন হোসেন আলীর বংশধর, যা হোসেনদ্বীপ নামেই পরিচিত। ১৯৮১ সালে পারিবারিক কলহের জেরে বাবা ভাইদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা এবং বলারাবাদের মাঝামাঝি স্থানে ফাঁকা বিলের মধ্যে বসতি স্থাপন করেন হোসেন আলী খন্দকার। তবে এখনকার মত তখন ভবদহ অঞ্চলের এমন করুণদশা ছিলনা। কৃষিকাজের সুবিদার্থে বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছিলেন নিরিবিলি এমন নির্জন জনপদ। তবে যে আশায় বুক বেধে বাপ দাদার পৈতৃক ভিটা ছেড়েছিলেন হোসেন আলী খন্দকার, সে আশা নিরাশায় পরিনত হয় অল্পকিছুদিনের মধ্যে। সাগর এবং নদ নদীর জোয়ারের পানিতে পলি এসে ভবদহ অঞ্চলের নদ নদী ভরাট হয়ে যায়। বিলের চেয়ে নদির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে হারিয়ে যায় নদির নাব্যতা। নব্বই দশকে এসে দেখা দেয় স্থায়ী জ¦লাবদ্ধতা।
সেই থেকে পানির সাথে যুদ্ধ করে কোনমতে বেঁচে আছে হোসেন আলীর পরিবার। কয়েক বছর আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায় হোসেন আলী। দুর্ভোগের হাত থেকে মৃত বাবার মুক্তি মিললেও বাবার স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়ি আকড়ে ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন সন্তানরা। জনবসতি এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দুরে অবস্থিত সেই হোসেন দ্বীপে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হোসেন আলী খন্দকারের ছেলে ওমর আলী খন্দকার, ভাই আজগর আলী খন্দকার ও বোন জাহানারা বেগমসহ মোট ৪ টি পরিবারের ১৫ জন সদস্য মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাতে জ¦লাবদ্ধতার শিকার হয় অভয়নগরের ২৫ গ্রামের মানুষ। আর তাতেই হোসেনদ্বীপের বাড়িগুলো পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে যায়। গত দু’মাস ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে দ্বীপটি। হোসেন আলীর ছেলে ওমর আলী জানান, আমাদের সবার ঘরের মধ্যে এখন হাটু পানি, উঠানে বুক সমান পানি। যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। বিলের মাঝখানে বাড়ি হওয়ায় কেউ আসেনা, খোঁজখবর নেয়না। এমনকি আমরা কোন সাহায্য সহযোগিতা পায়না। জাহানারা বেগম নামের অপর এক বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, আমরা কি এই জ¦লাবদ্ধতা থেকে কোনদিন মুক্তি পাবনা। গরু ছাগল হাস মুরগী ছেড়ে কোথাও যায়নি, ঘরের মধ্যে মাচা কওে বসবাস করছি। আয় ইনকাম না থাকায় বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, পানির কারণে আমরা টয়লেটে যেতে পারিনা, নৌকার উপর বসে সব ধরনের প্রয়োজন সারতে হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান জানান, যারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়েছে। এর বাইরে সবাইকে ১০ কেজি করো চাল দিয়েছি। আশ্রয়কেন্দ্রে না আসলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ দেওয়াটা অসম্ভব।