স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় দাহ্য পদার্থের বিপজ্জনক কারবার : নির্বিকার বিস্ফোরক দপ্তর

কাগজ কলমে আইন-শাস্তির বিধান থাকলেও বাস্তবায়ন নেই

শেখ ফেরদৌস রহমান ঃ নগরীর বিভিন্ন মুদি দোকান, লন্ডি, বিকাশ ফা¬ক্সি লোড ও মোবাইল সার্ভিসিং দোকানসহ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার। কাগজ-কলমে আইন আর শাস্তির বিধান থাকলেও মানা হচ্ছে না বিস্ফোরক আইন। এমনকি খুলনা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কোন তদারকিও নেই। ফলে দাহ্য পদার্থের বিপজ্জনক কারবার চলছে।
সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ি ১০টি এলপি গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার বিক্রি করতে হলে ফায়ার সার্ভিস থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। আবার ১০টির বেশি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে হলে অবশ্যই বিস্ফোরক পরিদপ্তর হতে লাইসেন্স নিতে হবে। তবে, প্রায় অধিকাংশ বিক্রেতারা মানছেনা এই আইন। এতে করে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
খুলনা বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্রে জনাগেছে, খুলনা মহানগর ও জেলায় মোট ৮৮০টি বিস্ফোরক লাইসেন্স রয়েছে। যার মধ্যে পেট্রোল, কেরোসিন ও অকটেন বিক্রির লাইসেন্স আছে ১১৩টি। এর মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৬৩টি। আর প্রস্তাবিত রয়েছে ১টি। এছাড়া মোট ফিলিং স্টেশনের লাইসেন্স নিবন্ধন আছে ৩৯টি। পাশাপাশি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার লাইসেন্স নিবন্ধন আছে ৫৯৫টি। যার মধ্যে প্রস্তাবিত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ১৩৯টি। যার মধ্যে বাতিল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ১০৯টি।
এদিকে, বিনা অনুমোদনে বিভিন্ন গুদামে মজুদ রয়েছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার, জ¦ালানি তেল অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেলসহ দাহ্য পদার্থ। যার কোন তদারকি নেই। পাশাপাশি বিস্ফোরক লাইসেন্স বিহীন অবস্থায় নগরীর সহ¯্রাধিক পয়েন্ট ও খোলা বাজারে এলপিজি গ্যাস ও জ¦ালানি তেল যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে খুলনা সদরের ময়লাপোতা মোড়, টুটপাড়া কবরখানার মোড়, বয়রা পূজা খোলার মোড়, খালিশপুর আলম নগর, পোড়া মসজিদ মোড়, বটিয়াঘাটার মল্লিকের মোড়, চক্রাখালী বাজার, বটিয়াঘাটা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে লাইসেন্সবিহীন খোলা তেলের ব্যবসা। যার অধিকাংশ দোকানীর নেই বিস্ফোরক লাইসেন্স। এছাড়া দেখা যায় বিভিন্ন ছোট, বড়, কারখানা ও হোটেল-রেস্তোরায় ঝুঁিকপূর্ণভাবে ব্যবহার হচ্ছে এলপিজি গ্যাস। যা দেখার কেউ নেই। তবে কোন ব্যবস্থা নেয়না খুলনা বিস্ফোরক পরিদপ্তর। ফলে এ ধরণের কোন দপ্তরের অস্তিত্ব নগরীতে আছে বলে পরিলক্ষিত হয় না।
অভিযোগের বিষয়ে নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ের খোলা জ¦ালানি তেলের দোকানী মোহাম্মদ মিজান বলেন, আমরা দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই মোড়ে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনসহ প্রক্রিয়াজাত মবিলের ব্যবসা করে আসছি। বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ যথাযথ লাইসেন্স ব্যবহার করেই আমরা ব্যবসা পরিচালনা করি। কিন্তু খুলনার বিভিন্ন মোড়ে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা খোলা তেলের ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই কোন লাইসেন্স নেই।
নগরীর খালিশপুরের খালিশপুর ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী রাকিব হাসান বলেন, আমাদের সঠিক কাগজপত্র ও লাইসেন্স থাকায় একটা জবাবদিহিতার জায়গা রয়েছে। তবে যারা লাইসেন্সবিহীনভাবে ব্যবসা করছে তাদের বৈধতা নিয়ে কথা রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, কোন ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কর্তৃপক্ষের মনিটরিং না থাকায় গেল ২০ অক্টোবর নগরীর দৌলতপুরস্থ খুলনা-যশোর মহাসড়ক সংলগ্ন নিউ গাউছিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে (ঝিনাইদহ-ঢ-৪১-০০৪১) একটি ট্যাংকলরি রিপিয়ারিংকালে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় ট্যাংকলরিটি খন্ড বিখ-িত অংশ বিভিন্ন দিকে গিয়ে ছুটে পড়ে আশপাশের ঘর বাড়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ট্যাংকলরি বিস্ফোরণের বিকট শব্দে পথচারীসহ আবাসিক বাসা-বাড়ীর লোকজন চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে খুলনা বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, পেট্রোলিয়াম (হাইড্রোকার্বন) হতে সৃষ্ট উচ্চ ঘণমাত্রার গ্যাস মিশ্রণ এবং অক্সিজেনের লেবেল বেশি (৩০-৪০ পার্সেন্ট) থাকায় ট্যাংকলরীর কেবিনের পিছনের চেম্বারের সম্মুখ পার্টিশনসহ মধ্যবর্তী আরো দুটি পার্টিশন উড়ে খুলনা-যশোর মহাসড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত তিনতলা ভবনে একটি/দুটি এবং তিনতলা ভবনের দক্ষিণে হাস-মুরগী খামারের পুকুরে গিয়ে পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকার সচেতন মহল আবাসিক এলাকার মধ্যেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনাস্থলসহ খুলনায় এমন অপরিকল্পিত অনুমোদনহীন আবাসিক এলাকার বা যত্রতত্র জায়গা থেকে এই সকল প্রতিষ্ঠান অবসরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নাহলে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস’র মালিক মাসুদ পারভেজ মুঠোফোনে জানান, ট্যাংকলরীটি মেরামতের জন্য আমার ওয়ার্কশপে ছিল। আমাদের কোন বিস্ফোরক লাইসেন্স লাগে না।
এ বিষয়ে খুলনা বিস্ফোরক পরিদর্শক ড. আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান ও তদারকি করছি। এছাড়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষনিক ভাবে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিব।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button