সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত
খবর বিজ্ঞপ্তি ঃ কাজের অধিকার, ন্যায্য মজুরি, শ্রমিকের মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের আন্দোলনকে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে পরিণত করার আহ্বান সামনে রেখে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিএমএ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের খুলনা জেলা সভাপতি আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জনার্দন দত্ত নান্টুর সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) কেন্দ্রীয় নেতা খালেকুজ্জামান লিপন। প্রতিনিধি সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক ফ্রন্ট কুষ্টিয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন, ঝিনাইদহ জেলা নেতা এ্যাড. আসাদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা নেতা নিত্যানন্দ সরকার, খুলনা জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ কোহিনুর আক্তার কনা, শার্শা উপজেলা ইলেক্ট্রিশিয়ান শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি নং ২৩২৭) সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, উত্তর খুলনা নির্মান শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি নং ১৬৩৮) সভাপতি বাবুল খলিফা, রিকশা ব্যাটারী রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ খুলনা মহানগর কমিটির সদস্য নুর আলম, যশোর সদর উপজেলা কমিটির নেতা উজ্জ্বল বিশ্বাস, অভয়নগর উপজেলা কমিটির সভাপতি কারিমুল হোসেন, চৌগাছা উপজেলা কমিটি সদস্য জাহিদুল ইসলাম, দাকোপ উপজেলা কমিটির নেতা প্রলয় মজুমদার, প্রবাসী শ্রমিক সেল সদস্য ইয়াসমিন প্রমুখ। প্রতিনিধি সভার শুরুতে সাম্প্রতিক ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যূত্থানে শহীদদের স্মরণে শোক জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমজীবী মানুষ জীবন দেয় অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায় আর শ্রম দেয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু ন্যায্য মজুরি এবং অধিকার উভয় ক্ষেত্রেই সে বঞ্চিত থাকে বারবার। ছাত্র শ্রমিক গণ অভুত্থানেও শত শত শ্রমিক জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। অন্তর্র্বতীকালীন যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা প্রতিষ্ঠায় শ্রমজীবী মানুষের রক্ত আছে ফলে তাদের দাবি যেন অস্বীকার করা না হয়। নেতৃবৃন্দ নিহত আহত শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানান। জাতীয় ন্যুনতম মজুরী নির্ধারণ, মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন, বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে মজুরি নির্ধারণ, শ্রমিকদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, নিহতদের পরিবারকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, নারী শ্রমিকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা, সার্বজনীন পেনশন চালু, প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা স্কিম চালু, শ্রম আইনের অগণতান্ত্রিক ধারাসমুহ বাতিল, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে অন্তর্র্বতীকালিন সরকারের পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, শ্রমিকের মজুরি আত্মসাৎকারী অসৎ শিল্প মালিক আর তার পোষা দালাল, অসৎ শ্রম কর্মকর্তা এবং দুর্নীতিগ্রস্থ পুলিশ প্রশাসন আর স্থানীয় ঝুঁট সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের দানবীয় আক্রমন থেকে মুক্তি পেতে, শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আকাঙ্খা থেকে শ্রমিকরা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার উচ্ছেদের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল, প্রাণ দিয়েছিল। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রক্তের উপর প্রতিণ্ঠিত বর্তমান সরকারের কাছে বঞ্চিতদের ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। অথচ সরকারের পুলিশ বাহিনি আন্দোলনকারী শ্রমিক যারা চার মাস বেতন না পেয়ে বেতন পরিশোধের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে তাদের বেতন আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে শ্রমিকদের উপর গুলি চালায় যা জুলাই আন্দোলনের বৈষম্য বিলোপের প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে নিহত শ্রমিক পরিবারকে আজীবন আয়ের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান।