স্থানীয় সংবাদ

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী!

# নগরবাসি বলছেন, মশা নিধনে কেসিসি যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও নামমাত্র #

মোঃ আশিকুর রহমান ঃ সম্প্রতি সময় খুলনার সর্বত্র মশার রাজত্ব বেড়েই চলছ। সকাল নেই, সন্ধ্যা নেই, রাত নেই, মশা কামড়ে চলছেই। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। ঘরে বা বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছেনা মশার কামড়ের হাত থেকে। বিশেষ করে সন্ধ্যা হতে না হতেই মশার কামড় শরীর ফুলিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযাগ করেছেন নগরবাসী। মশার কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও কোন সুফল পাওয়া যায় যাচ্ছে না মশার কামড়ে হাত থেকে । মশক নিধনে সিটি কর্পোশেনের কোন প্রোগ্রাম কাজে আসছেনা বলে নাগরিক নেতারা মনে করেন। তাছাড়া মশা নিধনের জন্য কেসিসি যে ওষুধ ব্যবহার করছে তার মান নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। তাছাড়া প্রায় সমুদ্র সৃষ্ট লঘুচাপ বা নি¤œ চাপের কারণে খুলনায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের কারণে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতায় যেখানে সেখানে পানি জমার কারণে নগরবাসী আতঙ্কগ্রস্থ ডেঙ্গু নিয়েও।
ঘুরে দেখা গেছে, খুলনার অধিকাংশ এলাকায় চলছে ড্রেন ও রাস্তার সংস্কার কাজ। এ কাজের সময় ড্রেনের মুখবন্ধ রেখে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। সেখানে জমে থাকে নোংরা পানি। বদ্ধ নোংরা পানি থেকে জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা ।ড্রেনগুলোতে পলিথিন, কাগজ ও বিভিন্ন ধরনের ময়লা জমে রয়েছে। এগুলো পরিস্কার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রয়েছে উদাসীনতা বলে জানিয়েছেন নগরীর একাধিক এলাকার বাসিন্দারা। যদিও কেসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্হাপনা বিভাগ বলছে তারা নিয়মিত নগরীর বিভিন ওয়ার্ড পানি নিষ্কাশনের পথ, বর্জ্য অপসারণ, যেখানে সেখানে আবাসিক গৃহস্থালির ব্যবহৃত বর্জ্য অপসারণসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থা উনতকরণে কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর মশা নিধনে নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি বাড়তি কার্যক্রমও অব্যহত রেখেছেন। তবে তাদের চলমান কার্যক্রমের বিপরীত ভুক্তভােগী নগরবাসী বলছেন, কেসিসি মশা নিধনে যে ব্যবস্হা গ্রহন করছেন, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, অনেকটাই নামমাত্র ব্যবস্হা গ্রহন। যেমন ১/২ সপ্তাহ পর পর ফগার দ্বারা স্প্রে করা। এতে মশা তাে মরেই না, বরং বাইরের মশা ঘর এসে হাজির হয়। দৌলতপুর কল্পতরু মার্কেট সংলগ্ন চা বিক্রেতা লিটন জানান , সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মশার উৎপাত শুরু হয়। সন্ধ্যার পর এমন পরিমান মশার উৎপাত বেড়েছে দোকানে দাঁড়িয়ে কেনাবেচা করা দুস্কর হয়ে পড়েছে। মশার কামড় দোকানের কাস্টমার বেশিক্ষন বসে থাকতে পারছেনা। ফলে রাতে কেনাবেচা কমে গেছে। কয়েল জ্বালিয়ে রাখলেও মশা যায় না। দেয়ানা উত্তর পাড়া এলাকার বাসিন্দা আনিস জানান, গত কয়েকদিন ধরে মশার উপদ্রব চরম আকারে বেড়েছে। দিন ও রাতে সমান তালে চলে এদের অত্যাচার। ঘরের জানাল ও দরজা ঠিক মতো খোলা যায় না। জানালা খুললে ঘরে মশা প্রবেশ করে, শুরু হয় অত্যাচার। কয়েল জ্বালিয়েও মশার হাত থেকে রক্ষা মিলছে না। মঝেমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ওষুধ ছিটানো হয়, কিন্তু তাতে কোন কাজ হয় না। দৌলতপুর ইস্পাহী কােলনীর বাসিদা তৌকির জানান, বর্তমানে ব্যাপক আকারে মশার অত্যাচার বেড়েছে। ঘর বসে কাজ করার উপায় নেই, মশা কামড়িয়ে ফুলিয়ে দিচ্ছে। মশার কয়েল জ্বালিয়েও কাজ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের নিকট মশা নিধন কার্যক্রম বৃদ্ধির দাবি জানাছি। দৌলতপুর ঋষিপাড়া এলাকার বাসিদা সুজন জানান, কয়েকদিন হলো ঋষিপাড়ায় ঘর ভাড়া নিছি। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে জানালা খোলা রাখা যায় না। হুড়হুড় কর ঘরের ভেতর মশা ঢোকে। গা কামড়ে ফুলিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে ঘনঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে, মশার জন্য দরজা-জান্নাত বন্ধ রাখায় ঘর আগুন হয়ে যাচ্ছে। একদিকে মশার কামড়, অন্যদিকে গরম, মহা বিপদে আছি। বাঁচার উপায় কি? গৃহিনী তানিয়া রহমান জানান, আমরা বাচার বয়স প্রায় সাড় ৬ মাস। ঘরে বাইরে এতো মশা, জানালা-দরজা খোলা যায় না। বাচ্চা রেখে বাসার সব কাজ করা লাগে। তাই সারাদিন মশারি টাঙ্গিয়ে রাখি মশার কামড়ের হাত হতে বাচতে। বাচ্চাটার গায়ে মশা কামড় বসিয়ে লাল করে ফলেছে। তাছাড়া ডেঙ্গুর ব্যাপারে আতংকিত। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সা: সম্পাদক এড.কুদরত-ই খুদা জানান, খুলনায় বরাবরই মশার উপদ্রব। এ ব্যাপারে নতুন কিছু বলার নাই। মশা নিধনের সিটি কর্পোরেশনের যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত তা কখনোই নেয় না। প্রথম পদক্ষেপ নেয়া উচিত মশার যখন ডিম পাড়ে, ওই সময় ওষুধ ছিটানো। শহরের প্রতিটি অলিগলিতে আনাচে-কানাচে নিয়মিত ওষুধে স্প্রে করা উচিত। প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা নিধনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। মশা নিধনে মানসম্মত ওষুধ ছিটানে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কেসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান আব্দুল আজিজ জানান, গেল মাসের ৩০ তারিখে আমি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান হিসেবে যোগদান করেছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি, তাড়াছা মশার নিধনে নিয়মিত কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। মশার উপদ্রব থেকে বাচার জন্য তিনি নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি নগরবাসীকে নিজ বাড়ির জঙ্গল ও আশপাশের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার করার তাগিদ দিয়েছেন। পাশাপাশি তার সংশ্লিষ্ট বিভাগ মশা নিধনে নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে আশ্বাস প্রদান করেছেন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button