খুলনার বিতর্কিত শিক্ষক কিরীটী রায়ের গুরুদণ্ড হতে যাচ্ছে!
# বিনা অনুমতিতে বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ বিনা অনুমতিতে বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগে খুলনার বিতর্কিত প্রাইমারী শিক্ষক কিরীটী রায়ের গুরুদন্ড হতে যাচ্ছে! বাংলাদেশ পুলিশের রাজারবাগের ইমিগ্রেশন শাখার স্পেশাল ব্রাঞ্জের তথ্য অনুযায়ী কিরীটী রায় বিনা অনুমতিতে ১২ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি BP0835365 এবং B00139010 নম্বরের ২টি পাসপোর্টে ভারত ভ্রমণ করেছেন। ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর তালতলা উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুক্তি বিশ^াস তার বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণের লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আমি কিরীটী রায়ের প্ররোচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২২ সালের ১০ জুলাই ও ২৯ সেপ্টেম্বর দুইবার তার সাথে বিনা অনুমতিতে ভারত ভ্রমণ করেছি। আমি কিরীটী রায়ের সাজা চাই। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তদন্তে এই সত্যতা মিলেছে। এর আগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে কিরীটী রায়ের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে আরও একটি গুরুদন্ড প্রমাণিত হয়েছিল। তখন তাকে মানবিক বিবেচনায় চাকরি থেকে বরখাস্ত না করে বেতন স্কেল কর্তন করে লঘুদন্ড দেওয়া হয়।
কিরীটী রায় বিনা অনুমতিতে বিদেশ ভ্রমণ করায় তার বিরুদ্ধে ২০১৮ এর ৩(খ) ও ৩(গ) এর বিধি মোতাবেক অসদাচারণ ও পলায়নের আওতায় শাস্তি হবে। সেক্ষেত্রে তাকে বাধ্যতামূল অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ, বরখাস্ত ও বেতন গ্রেডের অবনমিতকরণ করার বিধান আছে। যেহেতু তাকে পূর্বে ২বার (২০১৩, ২০২৩) লঘুদন্ড দিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং একাধিকবার বেতন গ্রেড কর্তন করা হয়েছে। এখনও তার বিরুদ্ধে ৬টি বিভাগীয় মামলা ঝুলে আছে। এখন কী হবে?
২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির দুইজন ছাত্রীর বিরুদ্ধে যৌন পীড়নের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে খুলনা থানায় মামলা হয়। এই মামলায় তিনি কয়েক মাস জেল খাটেন। ঐ দিন পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে কিরীটী রায়ের মোবাইলে অসংখ্য বিতর্কিত ছবি ও একজন নারী শিক্ষকের সাথে বিদেশ ভ্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর ঐ স্কুলের ৫জন নারী সহকারী শিক্ষক তার বিরুদ্ধে কয়েকটি বিভাগীয় মামলা করেন। এরপর এলাকাবাসী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগে গণস্বাক্ষর করে কিরীটী রায়কে এই স্কুলে যোগদান না করানোর দাবি জানান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর কিরীটী রায়কে আড়ংঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি ক্ষুব্ধ এলাবাসী ও অভিভাবকদের বাধার মুখে যোগদান করতে পারেননি। পদ খালি থাকার পরও তাকে যোগদান না করানোর জন্য নগরীর নুরানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাউজিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্যাটেলাইট টাউন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে দরখাস্ত দেওয়া হয়।
সম্প্রতি তাকে অতি সংগোপনে রায়েলমহল বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করানো হয়েছে। যদিও এলাকাবাসী তাকে এই স্কুলে না রাখার জন্য ইতোমধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছেন। কিরীটী রায় ২০০৯ সালে প্রথমবার উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ২০১২ সালে তিনি উদয়ন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জয় কুমার শীলকে অমানবিক প্রহার করে অভিযুক্ত হন। তখন তাকে অন্য স্কুলে বদলি করা হয়। আবার তিনি ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফায় এই স্কুলে যোগদানের পর থেকে নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করাই তার কাজ। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামকে তিনি বদলি করিয়েছেন। তিনি ৫ জন নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ১শত পৃষ্ঠার মিথ্যা অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে তাদেরকে বদলির ব্যবস্থা করছেন। নগরীর কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানিয়েছেন, ১৭ বছরের চাকরি জীবনে তিনি ৭বার স্কুল পরিবর্তন করেছেন, ২বার বরখাস্ত হয়েছেন। গুরুতর অপরাধে ২বার শাস্তিযোগ্য বদলী হয়েছেন, এখন সামান্য কিছু বেতন পান। বাকী বেতন বিভিন্ন সাজায় কর্তন হয়। এখন বিদেশ ভ্রমণের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এতো অপরাধের পরও এই শিক্ষকের চাকরি থাকে কী করে? উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের পর এক অদৃশ্য শক্তিবলে তার বিরুদ্ধে আর কোন বিভাগীয় মামলার শাস্তি হয়নি।