নতুন কমিটি ঘোষণার প্রতিক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না ! সম্ভাব্য নেতৃত্বের আলোচনায় যারা
খুলনা জেলা বিএনপি
আনিছুর রহমান কবির ঃ খুব দ্রুতই ঘোষণা হতে যাচ্ছে খুলনা জেলা বিএনপি’র কমিটি- এমন আলোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। কিন্তু ঘোষণা হয়নি এখনও। যদিও এরই মধ্যে সোমবার ঢাকাসহ ১০ জেলার কমিটি ঘোষণা করেছে দলটি। কিন্তু খুলনার কমিটির ঘোষণা না আসায় দলটির নেতা-কর্মীদের প্রতিক্ষার প্রহর যেণ শেষই হচ্ছে না।
এদিকে, খুলনা জেলা বিএনপি’র নতুন কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা এখন তুঙ্গে। আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে দলের একাধিক নেতার নামও।
এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলা বিএনপি’র মেয়াদোত্তীর্ণ আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে নতুন কমিটিতে কারা জায়গা পাবেন তা নিয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। আর দল ও নেতাকর্মীদের কাছে যাদের ক্লিন ইমেজ রয়েছে তাদেরই নতুন কমিটিতে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে- এমন আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নানামুখী তৎপরতা, তদবির, জল্পনা-কল্পনা চলছে। বিএনপির খুলনা জেলাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে যারা সক্রিয়, তারা নিজ নিজ বলয় থেকে নেতৃত্ব উঠিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা জেলা বিএনপির নতুন কমিটির সম্ভাব্য নেতৃত্বের আলোচনায় আহবায়ক বা সভাপতি হিসেবে অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলামের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। যিনি জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য। এছাড়া সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক খান জুলফিকার আলী জুলু, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান মন্টু, সদ্য সাবেক আহবায়ক আমির এজাজ খানের নামও আলোচনায় রয়েছে। এছাড়া সদস্য সচিব বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আবু হোসেন বাবু। এ পদে আরও আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক কেএম আশরাফুল আলম নান্নুও।
কয়রা উপজেলা বিএনপি’র কর্মী আলাউদ্দিন বলেন, আমরা বিএনপিতে এমন নেতা চাই যিনি কর্মীদের ভালবাসবেন, সুখ দুঃখে পাশে থাকবেন। নিজের পকেট ভরবেন- এমন নেতা বিএনপি চায় না।
রেজাউল করিম নামে তেরোখাদা উপজেলা বিএনপির এক কর্মী বলেন, আমরা আর আহবায়ক কমিটি চাইনা, আহ্বায়ক কমিটি মানে হচ্ছে কর্মীদের জিম্মি করা। এই লোভ দেখিয়ে বছরের পর বছর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় না। চলে একক বাণিজ্য। এখন আমরা চাই নতুন ক্লিন ইমেজের রাজনীতি যিনি মামলা হামলায় আমাদের পাশে ছিলেন, সুখ দুঃখের পাশে পেয়েছি। হাইব্রিড নেতা দিয়ে যেন কমিটি না হয় এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম বলেন, এখনো কিছু বলতে পারছিনা, তবে কেন্দ্র থেকে যাকে দিবে তার হয়ে কাজ করব।
অপর সভাপতি প্রার্থী মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, আমাদের ব্যক্তিগত কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত নিবে সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। সেখানে আমাকে যদি সভাপতি পদ দেওয়া হয় তাহলে আমি তার যোগ্য প্রমাণ দিব।
সাবেক আহবায়ক আমির এজাজ বলেন, আমি আশা করি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার সুদৃষ্টি আমার উপর রাখবেন। তবে কমিটিতে ভুঁইফোড় এবং সুবিধাবাদীর নেতাদের স্থান হবে না এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবু হোসেন বাবু বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি চান তাহলে আমি দায়িত্ব পালন করে খুলনা জেলা বিএনপিকে একটি মডেল হিসেবে গড়ে তুলবো। তবে যাকেই দল সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবে তার হয়ে কাজ করবো আমরা।
অপর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কেএম আশরাফুল আলম নান্নু বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে যোগ্য বলে মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দিবেন। আমাকে দায়িত্ব দিলে যথাযথভাবে পালন করব।
সাবেক সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, আমাদের একটি আহবায়ক কমিটি দেওয়া হয়। আহবায়ক কমিটির মেয়াদ ছিল তিন মাস। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হামলা মামলা নির্যাতনের কারণে আমরা সম্মেলন করতে পারিনি। আর এ কারণেই তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি দুই বছর ৯ মাস ১২ দিন কমিটিতে থাকার পর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। আগামীতে আমাকে আবার খুলনা জেলার দায়িত্ব দেয়া হলে আমি নতুনভাবে জেলাকে সাজাবো। আর যদি আমাকে দায়িত্ব না দেওয়া হয় তবে যাকে দায়িত্ব দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান নগর কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম মনা বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্তের চেয়ারম্যান তারেক রহমান জেলায় এমন একটি কমিটি দিবেন, যে কমিটিতে কোন চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাজ লুটেদের স্থান হবে না। যারা আগামীতে খুলনা জেলার রাজনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে এমন একটি কমিটি আমরা চাই।