স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ৩৮২ দপ্তরী কাম প্রহরীর নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

আউট সোর্সিং-এ নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মচারিরা চুক্তিনামা নবায়ন না করেই বছরের পর বছর বেতন নিচ্ছেন

খলিলুর রহমান সুমনঃ খুলনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী কর্মরত আছেন ৩৮২ জন। এ হিসেবে খুলনায় মাসে এদের বেতন আসে ৫৭ লাখ ১০ হাজার ৯শ’ টাকা। আউট সোর্সিং-এ নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মচারির নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনার ১০টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী আছেন ৩৮২ জন। এর মধ্যে সদর (মহানগরী) উপজেলায় ৩৩ জন, কয়রা উপজেলায় ৫৩ জন, ডুমুরিয়া উপজেলায় ৭০ জন, তেরখাদা উপজেলায় ৫২ জন, দাকোপ উপজেলায় ২৭ জন, পাইকগাছা উপজেলায় ৭৩ জন, ফুলতলা উপজেলায় ২১ জন, রূপসা উপজেলায় ৪৩ জন, দিঘলিয়া উপজেলায় ৩২ জন ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২৮ জন কর্মরত আছেন। খুলনার তেরখাদা উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত দপ্তরী কাম প্রহরীর সংখ্যা ৫২ জন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত দপ্তরী কাম প্রহরীদের বর্তমানে নিয়োগ নবায়ন নেই। কিন্তু তারা নিয়মিত বেতন ভাতা পান চৌদ্দ হাজার নয়শত পঞ্চাশ টাকা। ২০১২ ও সর্বশেষ ২০১৯ সালের নিয়োগপ্রাপ্ত দপ্তরী কাম প্রহরীদের তিন বছর পরপর তিনশত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তিনামার নবায়ন করার বিধান আছে। অথচ এসব দপ্তরী কাম প্রহরীদের অধিকাংশের নিয়োগ ২০১৩ সালে হলেও পুনরায় ২০১৬ সালে তাদের তাদের চুক্তিনামা নবায়ন করার কথা থাকলেও তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই চাকরির চুক্তিনামা নবায়ন করা হয়নি। চুক্তিনামা নবায়ন না করে অফিসারের সাথে উপজেলা প্রাথমিক অফিসারের অবৈধ যোগসাজশে এসব দপ্তরী কাম প্রহরীদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। এদের মাসিক মোট বেতন ১৪ হাজার ৯শ’৫০ টাকা। এ হিসেবে খুলনায় মাসে এদের বেতন আসে ৫৭ লাখ ১০ হাজার ৯শ’টাকা। এ বিষয়ে তেরখাদা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, তার উপজেলায় দপ্তরী কাম নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন ৫২ জন। তবে এদের নিয়োগপত্রের চুক্তিনামা নবায়ন করা হয়নি। নবায়ন না করা হলে আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হয়। তবে এদের অনেকের করা মামলা বিচারাধিন রয়েছে। তিনি মাত্র ৮/৯ মাস এই উপজেলায় এসেছেন। বিষয়টি তিনি খোঁজখবর নিবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে কথা হয় ফুলতলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহানাজ বেগমের সাথে। তিনি বলেন, তার উপজেলায় দপ্তরী কাম প্রহরী আছেন ২১ জন। স্কুলের দপ্তরী কাম প্রহরীর বিষয়টি সম্পূর্ন নির্ভর করে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ওপর। প্রধান শিক্ষকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি নবায়নের বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের। তার জানার কথা নয়। শুধু প্রধান শিক্ষকরা তাদের হাজিরা দিয়ে দেন সে মতে তাদের বেতন দেয়া হয়। তবে আইন অনুযায়ী চুক্তি নবায়ন করে নেয়া উচিত বলে এই শিক্ষক কর্মকর্তা জানান। বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলমগীর কবির বলেন, তার উপজেলায় দপ্তরী কাম নিরাপত্তা প্রহরী আছে ২৮ জন। তাদের চাকুরির চুক্তিনামা তিন বছর পর পর নবায়ন করার বিধান রয়েছে। তিনি গত দু’ বছর আগে করেছেন। যারা করেনি তারা বিধিমালা ভঙ্গ করেছে বলে তিনি মনে করেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন জেলা কমিটির সম্পাদক এড. কুদরত ই খুদা বলেন, এটা প্রশাসনিক দুর্বলতা। আর দুর্নীতিও বটে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যত টাকা তারা নিয়েছে সবই আইনগত অবৈধ। এ টাকা মামলা করে ফেরৎ নেয়া উচিত। যারা এসব তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার বলে এই নাগরিক নেতা মনে করেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button