রীউলায় খাল দখল করে বসতবাড়ি ও মৎস্য ঘের
# জলাবদ্ধতার শিকার শত শত পরিবার #
আশাশুনি প্রতিনিধি ঃ আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলায় সরকারি খাল দখল করে বসতবাড়ি ও মৎস্য ঘের করায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে শত শত পরিবার। সুপরিকল্পিতভাবে বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন গ্রামবাসী।
কৃষক আসাদুজ্জামান জানান, মাড়িয়ালা গ্রামের প্রায় ৭০০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়ে থাকে। বিলের পানি মাড়িয়ালা খাল হয়ে থানাঘাটা গ্রামের শিক্ষক জামাল উদ্দিনের বাড়ি সংলগ্ন স্লুইসগেট দিয়ে খোলপেটুয়া নদীতে নিষ্কাশিত হয়ে যেতো। কিন্তু প্রলয়ংকরী আইলা জলোচ্ছ্বাসে নদী ভাঙনের ফলে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে শিক্ষক জামাল উদ্দিন লোকজন নিয়ে স্লুইসগেটটি মাটি দিয়ে আটকে দেন। এরপর থেকে শুরু হয় মাড়িয়ালা খাল দখলের মহোৎসব। প্রবাহমান খালটি দখল করতে করতে কোথাও ৫ হাত কোথাও ৭ হাত অবশিষ্ট আছে। এরমধ্যে কেউ ভরাট করে ভিটা বাড়ি করেছেন তো কেউ পুকুর কেটে মাছের চাষ করছেন। মাড়িয়ালা বিলের পানি হাইস্কুল ও মৎস্য সেট সংলগ্ন কালভার্ট দিয়ে অপসারণের পথ থাকলেও এসব কালভার্ট কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বছর তিনেক আগে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল বকচর গ্রামে ছোট কালভার্ট নির্মাণ করে মাড়িয়ালা বিলের পানি বকচরের খাল হয়ে দক্ষিণ পুইজালা স্লুইসগেট দিয়ে অপসারণের ব্যবস্থা করেন।
বকচর গ্রামের ফজর আলী গাজী, ইউনুছ আলী সরদার, আইয়ুব আলী সানা, আজিজুল মোল্লা সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, কালভার্ট নির্মাণ করা হলেও খাল দখলে নিয়ে আমিরুল ইসলাম সরদার, আনছার আলী গাজী, হাসান গাজী সহ একাধিক ব্যক্তি সেমি পাকা বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসে থাকায় পানি নিষ্কাশন হতে পারে না।
এছাড়া আইয়ুব আলী সানা, আলম গাজী, জিয়াদ গাজী, ছালাম গাজী, হযরত আলী সানা, রাজ্জাক গাজী, কালাম সরদার সহ প্রায় শতাধিক মৎস্য চাষী দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সরকারি খাল দখল করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দক্ষিণ পুইজালা খালে পানি নিষ্কাশনে বাঁধা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। তবে খালে পানি পড়লেই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ বকচর গ্রামের বাবর আলী সানার ছেলে নজরুল সানা, জহর আলী, মনিরুল ইসলাম, বাবর আলী সহ একাধিক ব্যক্তি দক্ষিণ পুইজালা খালে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে স্লুইসগেটটি কার্যত অচল করে রেখেছেন। ফলে বর্ষা মৌসুমে থানাঘাটা, বকচর, বিলবকচর, মাড়িয়ালা, পুইজালা অন্যান্য গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তাই পানি নিষ্কাশনের জন্য সমস্ত কালভার্ট ও স্লুইসগেট সচল করা সহ সরকারি খাল গুলো অবৈধ দখল মুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।
এদিকে খাল দখলকারী আনছার গাজী, আমীরুল ইসলাম ও কালাম সরদার খাল দখলের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে যদি সরকারি খাল ও সম্পত্তি ছাড়তে হয় তবে আমরা স্বেচ্ছায় ছাড়তে রাজি আছি। সেক্ষেত্রে কোন স্বজন প্রীতি না করে সরকারি বিধি মোতাবেক স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে জলাবদ্ধতা নিরসনের পথ সুগমের আবেদন জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদ হোসাইন বলেন – শ্রীউলায় অবৈধ ভাবে খাল দখল করে পানি নিষ্কাশনে বাঁধা সৃষ্টি করার অভিযোগ বিভিন্ন ভাবে পেয়েছি। সামনে শুস্ক মৌসুম আসছে সরজমিন তদন্ত করে সরকারি খাসজমি উদ্ধার করে পানি নিষ্কাশনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।