বিএনপি’র পদে না ফিরলেও দখলে সরব সাবেক মেয়র মনি
স্টাফ রিপোর্টার ঃ বিএনপি’র পদ ফিরে না পেলেও পটপরিবর্তনের পর ফের আলোচনা-সমালোচনায় উঠেছেন কেসিসি সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। সাধারণ সদস্যদের সাথে আলোচনা না করেই মোংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্টস এসোসিয়েশন জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। নিজেকে আহবায়ক করে ১৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন তিনি। এতে সাধারণ সদস্য ও রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বুধবার তালা ভাঙলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সমন্বয়করা মিলে ফের তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে। এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৫ মিনিটে বিএনপি’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও কেসিসি’র সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, যারা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তারা সবাই মিলে আমাকে কমিটিতে আহবায়ক বানিয়েছেন। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক অ্যাড. শফিকুল আলম মনা বলেছেন, ‘মোংলা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ; ব্যবসায়ীরাই তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন- এটাই স্বাভাবিক। বিগত দেড় যুগ আ’লীগের নেতারা লুটেপুটে খেয়েছে ; ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। এখনো ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাতের আঁধারে ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন আর যাই হোক- শহীদ জিয়ার আর্দশের কেউ জবরদখল করতে পারে না। মনি তো বিএনপির কেউ না। তাকে তো দল থেক বহিস্কার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রাতে মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন এর মোবাইলে একাধিক বার ফোন দিলিও তাকে পাওয়া যায়নি। সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২১ সালের নবায়ন অনুযায়ী মোংলা বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট রয়েছেন ২৫৭ জন; তবে মোংলা সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সদস্য প্রায় চারশ’জন। দেশের আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্যের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে সম্পৃক্ত ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি প্রায় দেড়যুগ কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন ফ্যাসিষ্ট সরকারের আর্শীবাদপুষ্টরা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন আ’লীগ নেতা সুলতান হোসেন খান। দীর্ঘদিন তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণে ছিলেন ক্ষমতাসীনরা। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর থেকে পলাতক তিনিসহ অন্যরা। ফলে ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তাদের মেয়াদ থাকলেও সাধারণ সদস্যরা আশা করেছিলেন- সকলের মতামতের ভিত্তিতে এডহক কমিটি গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। এরইমধ্যে গত মঙ্গলবার নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে কেসিসি’র সাবেক মেয়র ও নগর বিএনপি’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি নিজেকে আহবায়ক করে ১৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন। এতে হতবাক হয়েছেন সাধারণ সদস্যরা। এমনকি ১৩ সদস্যের কয়েকজন জানেনও না- যে তাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে স্বৈরাচারী কায়দায় গঠিত এ কমিটি বিলুপ্ত করে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামতের ভিত্তিতে এডহক কমিটি গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের হাতে এসোসিয়েশনটি ছেড়ে দেবার জোর দাবি সাধারণ সদস্যদের। অন্যদিকে, বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ- রাজনীতির পদে না ফিরলেও দখলে ফিরেছেন সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মঞ্জু ও মনিকে বাদ দিয়ে মহানগর বিএনপি’র তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্র। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওইবছরের ১২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন মঞ্জু। এর পরদিন শোকজ এবং ২৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর থেকে দলে কোণঠাসা মঞ্জু-মনি তাদের অনুসারীরা। ২০২২ সালের ১ মার্চ মহানগর বিএনপি’র ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতেও মঞ্জু-মনিকে রাখা হয়নি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দরের মোংলা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন জবর দখলের খবরটি পত্রিকার মাধ্যমে জেনে হতবাক হয়েছেন খুলনা বিএনপি’র শীর্ষ নেতারাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সদস্যরা বলছেন, যেকোনো মুহুর্তে বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে। তাই অবিলম্বে সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সাধারণ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এডহক কমিটি গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের হাতে সংগঠনটি ছেড়ে দেবার দাবি উঠেছে। ।