স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি জ্বরের রোগী : ডেঙ্গু আতঙ্কে দিশেহারা

কামরুল হোসেন মনি ঃ এক সপ্তাহে আগে জ্বরে আক্রান্ত হন আবুল কালাম। ৩-৪ দিন জ্বরে ভোগার পর পরিস্থিতি একটু উন্নতি দিকে যেতে না যেতেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন আবুল কালামের স্ত্রী এবং মা। অর্থাৎ ঘরের সব সদস্যই এখন জ্বরে আক্রান্ত। এদের সবারই মাথা ব্যথা, সর্দি-কাশি, বমি হওয়া, গলা ব্যাথা, চোখ লাল হওয়ার মতো উপসর্গ রয়েছে। কিছু খেতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু আতঙ্কে একে একে সবারই রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে। কিন্তু টেস্ট রিপোর্ট নেগিটিভ। তবে কারো জ্বর ১০০ ডিগ্রি নিচে নামছে না। চিকিৎসকের পরামর্শে এখন তাদেরকে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে।
খুলনা মহানগরীতে ছড়িয়ে পড়েছে জ্বর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাথা ব্যাথা, সর্দি-কাশি, বমি হওয়া, গলা ব্যাথা , ডায়রিয়া. চোখ লাল হওয়া ও পেটে ব্যাথার মতো উপসর্গ। এতে ডেঙ্গু সন্দেহে হাসপাতাল ও রোগ নির্নয় কেন্দ্রে পরীক্ষার জন্য ভিড় করছেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা। অক্টোবরও নভেম্বর মাসে খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনায় জেলায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। যার কারণে খুলনায় ডেঙ্গু আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ।
এদিকে খুলনায় গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪১ জন। যা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী এই জেলায়। এছাড়া মেহেরপুরে ৮ জন ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগের দিন বিভাগের ৮ জেলায় ও দুটি সরকারি হাসপাতালে মিলে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিল ১২১ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে খুলনায় ৩৯ জন। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৭ হাজার ২৫৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। খুমেক হাসপাতালের সূত্র মতে, প্রতিদিনই ৩০-৪০ জন ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য রোগীরা আসছেন। এর মধ্যে দুই-একজন পজিটিভ রিপোর্ট আসছে। তবে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্ত হচ্ছে কম। গত কয়েক দিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। হাসপাতালে বহির্বিভাগে রয়েছে রোগীর স্বজনদের দীর্ঘ লাইন। ক্লান্তিতে অনেককে মেঝেতে বসে রয়েছেন। চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগেরই জ্বর, মাথা ব্যাথা, পেটে ব্যাথা, বমি, ডায়রিয়া। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকদের চেম্বার ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে জ্বর নিয়ে আসা রোগীর ভিড় চোখে পড়ার মতো। রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বর জলেই ডেঙ্গু আতঙ্কে পরীক্ষা করা আসছেন তারা। ডেঙ্গু তুলনামুলক বেশি প্রাণঘাতী ভেবে তারা কোন প্রকার ঝুঁকি নিতে নারাজ। এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, তিন থেকে সাত দিন জ্বর-সর্দি কাশির তীব্রতা থাকছে। পরীক্ষায় কিছু মানুষের ডেঙ্গু ধরা পড়লেও বেশির ভাগই ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। এক সঙ্গে পরিবারের একাধিক সদস্যও জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছে। এতে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার কথা বলছেন তারা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে আরএমও ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগী অনেক বেড়েছে। বহির্বিভাগে ১৫০০ থেকে ১৬০০ জন বিভিন্ন ধরনের রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। এর মধ্যে প্রতিদিনই ৩৫-৪০ জনই জ্বরের রোগী। যে সব রোগীর ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, শুধু তাদেরকেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে দিচ্ছি। তবে পরীক্ষার তুলনায় পজিটিভ কম আসছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, বিরূপ আবহাওয়া যেমন না শীত, আবার না গরম-এমন এক ধরনের বিরূপ পরিবেশের কারণে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ বেড়েছে।
এদিকে খুলনা বিভাগে দুই জেলায় ও একটি সরকারি হাসপাতালে একদিনে নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৫৬ জন। এর মধ্যে খুলনায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ৪১ জন। এর আগের দিন বিভাগের ৮ জেলায় ও দুটি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিল ১২১ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ছিলো খুলনায় ৩৯ জন। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ১০ জেলাসহ দুই সরকারি হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৭২৫৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) অধিদপ্তরের ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ওই ডেঙ্গু রিপোর্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়. গত ২৪ ঘন্টায় ( বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে খুলনা বিভাগের দুই জেলায় ও একটি সরকারি হাসপাতাল মিলে মোট ডেঙ্গ রোগী ভর্তি হয়েছে ৫৬ জন। এর মধ্যে খুলনায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৪১ জন। এছাড়া মেহেরপুরে ৮ জন এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছাড়াল ৭ হাজার ২৫৯ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে চিবিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের । এছাড়া খুলনায় ২ জন, যশোরে ৩ জন, ঝিনাইদহ ১ জন এবং কুষ্টিয়ায় দুইজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তির মধ্যে খুলনায় ২১৩৯ জন, বাগেরহাটে ৯৫ জন, সাতক্ষীরায় ১৮৭ জন, যশোরে ১০৪৬ জন, ঝিনাইদহ ৪৬৯ জন, মাগুরায় ২৩৭ জন, নড়াইলে ৫৫৩ জন, কুষ্টিয়ায় ৮০৩ জন. চুয়াড্ঙ্গাায় ১৫৩ জন, মেহেরপুরে ৫৫০ জন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭৫ জন এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৫২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে খুলনা বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ৪৪৩ জন। রেফার্ড করা হয়েছে ৯৪ জনকে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button