স্থানীয় সংবাদ

বিল ডাকাতিয়ার সবখানে জলাবদ্ধতা : কবর দেওয়ার জায়গা নেই

ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় মানবিক বিপর্যয়

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান : খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া ও আড়ংঘাটার ১৫ লক্ষাধিক মানুষের গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে ‘বিল ডাকাতিয়া’। জলাবদ্ধতায় প্রায় দুই মাস ধরে পানিবন্দি এ অঞ্চলের অধিবাসীরা। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দফায় দফায় বৃষ্টির পানিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বিল ডাকাতিয়া। এতে পানিবন্দি হয়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছেন এলাকাবাসী। উপরন্তু বিভিন্ন চর্ম ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। নেমে এসেছে এক ধরণের মানবিক বিপর্যয়। স্থানীয়রা জানান, একজন মানুষ মারা গেলে তাকে যে মাটি দেবে, তার কোনো জায়গা নেই এ অঞ্চলের মানুষের। খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া, আড়ংঘাটা এবং যশোর জেলার অভয়নগর ও কেশবপুর উপজেলা এলাকায় বিল ডাকাতিয়ার বিস্তৃতি। ৩০ হাজার একর চাষযোগ্য জমি রয়েছে এই এলাকায়। প্রবল বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে প্রায় দুই মাস ধরে তলিয়ে আছে বিলের জমি। মাছ চাষিদেরও বিপাকে পড়তে হয়েছে। নদীতে পলি জমাট এবং অতিবৃষ্টিই এর মূল কারণ। এজন্য ফসল নষ্ট, আয়ের পথ বন্ধের পাশাপাশি চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে এ এলাকায়। পরিস্থিতি এমন যে, বিল ডাকাতিয়া এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন এখানকার পানিবন্দি প্রায় ১৫ লাখ মানুষের। খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চান এলাকাবাসী। গত ১৯ অক্টোবর এ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বিল ডাকাতিয়া রক্ষা কমিটি। ফুলতলা বাজারের আসাদ রফি গ্রন্থাগার চত্বরে ওই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিটির আহ্বায়ক ও ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার। উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব আবদুল আলিম মোল্যা, ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনির হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ ভূঁইয়া, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান খান, ফুলতলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে শেখ আবুল বাশার বলেন, বিল ডাকাতিয়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল। একসময় এই বিল কৃষি ও মৎস্যজীবী মানুষের জন্য আশীর্বাদ ছিল। আজ সেই বিল খুলনা ও যশোর এলাকার মানুষের কাছে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। বিল ডাকাতিয়ায় এই অঞ্চলের ছয়টি উপজেলার মোট ৩০ হাজার একর চাষাবাদযোগ্য জমি রয়েছে। এসব জমির মধ্য দিয়ে ১১টি নদী প্রবাহিত হলেও একমাত্র শোলমারী নদী ছাড়া বাকি সব কটিই সম্পূর্ণরূপে ভরাট হয়ে গেছে। বিল ডাকাতিয়ার পানি বের হওয়ার একমাত্র চ্যানেল শোলমারী নদীটি পলি পড়ে আংশিক ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে এসব অঞ্চলে। এতে হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। দুই মাস ধরে পানিবন্দী অবস্থায় কষ্টে দিন পার করছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে বিল ডাকাতিয়াকে বন্যাদুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানায় বিল ডাকাতিয়া রক্ষা কমিটি। পাশাপাশি দ্রুত পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা, ব্যাংক ও এনজিও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ, কৃষি ও মৎস্যজীবীদের ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ের তালিকা প্রস্তুত করে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, এ বছর বিল ডাকাতিয়ার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা একটি প্রস্তাব তৈরি করেছি। তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহের জন্য সম্ভবত ১-২ সপ্তাহ সময় নেয়ার পরিকল্পনা করছি। প্রয়োজনে আমরা ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞদের এনে আমাদের সাথে কাজ করব এবং তারপর জেলা প্রশাসনের কাছে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করব।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা-৫ আসনের (ফুলতলা ও ডুমুরিয়া) সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এ সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button