আগামী নির্বাচনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনৈতিকভাবে ময়দান থেকে বিতাড়িত করতে গেলে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নাই : অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

# ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন #
সাইফুল্লাহ তারেক ঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনৈতিকভাবে ময়দান থেকে বিতাড়িত করতে গেলে আমাদের মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ নিশ্চিহৃ করা সম্ভব। দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জাতী সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর ঐক্যে সকল দল, আলেম-ওলামা, ধর্ম, বর্ষ নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর পাল্টা প্রতিবিপ্লবের চক্রান্ত করেছে হাসিনা। ফ্যাসিস্ট, স্যাটিস সরকারের দলবাজ প্রধান বিচারপতি নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ বলে চক্রান্ত করেছিল। তবে ছাত্র-জনতা তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। দেশ সংস্কারে যতটুকু সময় দরকার ততটুকু সময় অবশ্যই দেয়া হবে। কিন্তু অর্নিদিষ্ট সময় পযন্ত এটা চলতে পারে না । তিনি বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘ ১৫ বছরের যে ফ্যাসিবাদী যুগ আমরা পার করেছি, সেখানে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান অপরাধ দ্বারা অপরিচ্ছন্ন ও অপবিত্র হয়ে গিয়েছিল। এবং ফ্যাসিবাদী শাসক দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল।’তিনি বলেন, এই ডুমুরিয়া ও ফুলতলা এক সময় সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের অভ্যয়রন্যে পরিণত হয়। তখন জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী দমনে জনগণকে সাথে নিমূল করেছি। আজ আমাদেরকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর এতো বড় সমস্যা সমাধানে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে সংস্কার করে একটি যৌক্তিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ হচ্ছে, আল্লাহ তালার বিধান এবং নবীর আদর্শের ভিত্তিতে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েম করা। সেই রাষ্ট্রে সকল ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষের কল্যাণ হবে।’ শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ডুমুরিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
খুলনা জেলা মজলিসে শূরার সদস্য ও ডুমুরিয়া উপজেলা দক্ষিণের আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, খুলনা জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, খুলনা জেলা ছাত্র শিবির সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী ও উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি কবির হোসেন । বক্তৃতা করেন, খুলনা জেলা ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মুহা. ইউসুফ হোসেন, ডুমুরিয়া উত্তর উপজেলা আমীর গাজী সাইফুল্লাহ, ডুমুরিয়া দক্ষিণ উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা হাবিবুর রহমান, ডুমুরিয়া উত্তর উপজেলা সেক্রেটারি বি এম আলমগীর হোসেন, ড. একরাম উদ্দীন সুমন, সরদার আব্দুল ওয়াদুদ, হাফেজ রবিউল ইসলাম, মাওলানা আজহার, ডাক্তার হরিদাস মন্ডল, মাওলানা মনিরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, ডাক্তার আব্দুল মান্নান, আব্দুল গণি খান, হাফেজ আবু বকর সিদ্দিক প্রমুখ। পরে বিকেল তিনটায় খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সামনের ডাবুর মাঠে খুলনা জেলা মজলিসে শূরার সদস্য ও ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্লার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ ও সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও যশোর জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গওসুল আযম হাদী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি মোস্তফা আল মুজাহিদ ও খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুফ ফকির। বক্তৃতা করেন খানজাহান আলী থানা আমীর হাসান মাহমুদ টিটো, অভয়নগর উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক মহিউল ইসলাম, দামোদর ইউনিয়ন আমীর শেখ মো. আলাউদ্দিন, জামিরা ইউনিয়ন আমীর ফ ম আব্দুর রহমান, ফুলতলা ইউনিয়ন আমীর মাস্টার মফিজুল ইসলাম, মাওলানা জহুরুল হক, আবুল হোসেন মোড়ল, হুসাইন আহমদ প্রমুখ। পরে এক বিশাল মিছিল ফুলতলা উপজেলা সদর প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় হাজার মানুষের নারায়ে তাকবীর শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এখনো সন্তান তার পিতার সন্ধানে কবরখানাগুলোতে খোজ নিচ্ছে। বুলেট দিয়ে মানুষ খুন তিনি ক্ষ্যান্ত হন নাই। মানুষদেরকে আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দিয়েছে। তাকে এ দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও তার ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে বসিয়ে রাখা দোসরদেরকে কাজে লাগিয়ে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এ সব ষড়যন্ত্র রুখতে সকল কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা রাখতে হবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, ‘কেবল তিন মাস হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়েছে; কিন্তু সেই অপরাধপ্রবণতা ১০০ ভাগ বিদায় হয়নি। এখনো ছোটখাটো কিছু অপরাধ দেখা যাচ্ছে, তার মাত্রা কম। এই বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছি। জামায়াতে ইসলামী অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সব সময় দৃঢ় থাকবে।
নির্বাচনের জন্য এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দেবেন জানিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘যৌক্তিক সময় বলতে আমরা সুস্পষ্ট করে বলেছি, না খুব দ্রুত, না খুব দেরি। একটা মধ্যম সময়ে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন হোক। যৌক্তিক এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, জনগণ অবাধে ভোট দিতে পারবে, সে জন্য সময় যতটুকু লাগে, সেটিকে যৌক্তিক সময় বোঝানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ভোট দিতে গেলে কেউ বলবে না, ভোট দেয়া হয়ে গেছে। দিনের ভোট রাতে হবে না। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এত বেশি ছাত্র-জনতা হত্যা করেছে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে আর ঘটেনি। শিশুদের কী অপরাধ ছিল? তারা শতাধিক শিশুকে হত্যা করেছে। নব্বই বছরের বৃদ্ধ রাস্তায় আসেনি, বৃদ্ধদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এত জঘন্যতম, নির্মমতা ও পৈশাচিকতা প্রদর্শন করেছে আওয়ামী লীগ। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে তাদের শাসনামলের সবচেয়ে নির্যাতিত-মজলুম দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো প্রতিশোধ নেয়নি। কারণ, জামায়াত এভাবে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে না। আমরা এই জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই প্রতিশোধ নেব ইনশাআল্লাহ। আমরা জানমাল দিয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে পরকালের মুক্তি নিশ্চিত করতে চাই।
মাওলানা এমরান হুসাইন বলেন, আমরা পরাধীন ছিলাম। এবার দ্বিতীয়বারের মতো ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা লাভ করেছি। স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে আমরা নিজের ভোট নিজে দিতে পারিনি। দিনের ভোট রাতে হয়ে যেত। ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যেতে হতো না। মানুষজন পরাধীন ছিল। সাংবাদিকরা সত্যকে তুলে ধরতে পারেননি। শাসকগোষ্ঠী ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠনালি চেপে ধরেছিল। তিনি আরও বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন শেখের বেটি দেশ ছেড়ে পালায় না। কিন্তু উনি দেশ ছেড়ে তো পালিয়েছেনই, এমনকি নিজ দলের কর্মী সমর্থকও পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়েছেন। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সৎ, দক্ষ, দেশ প্রেমিক নাগরিক তৈরি করতে হবে। মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে।
জামায়াত সূত্র জানায়, বিগত ১৪ বছর আওয়ামী লীগের গুম-হত্যা ও নির্যাতনের কারণে ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় প্রকাশ্য কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারেনি। এ সময়ে গোপনেই সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার বিতাড়িত হওয়ার পর দেশে এখন একটা স্থিতিশীল নিরাপদ পরিবেশ বিরাজ করছে। এতে ১৪ বছর পর ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা সদরে জামায়াতের প্রকাশ্যে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।