স্থানীয় সংবাদ

কেসিসিতে যুবসমাজ ভবিষ্যৎ খুলনা শহর কেমন দেখতে চায় শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা শহর পূর্ব থেকেই দেশের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও, খুলনা শহরে বিভিন্ন শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এখানে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। অন্যদিকে খুলনা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। বন্যা, পানির লবণাক্ততা, সুপেয় পানির সংকট, কৃষিভূমির পরিমাণ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে শহরটি পর্যুদস্ত। ফলশ্রুতিতে শহরের জনগণ ক্রমাগত কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরে সমগ্র দেশের সাথে স্বল্প সময়ে সরাসরি যাতায়াত ব্যবস্থা চালু হওয়ায় খুলনায় শিল্প বিপ্লবের একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা একই সাথে নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করবে। চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা- এরকম একটি মিশ্র পরিস্থিতিতে ন্যায়সঙ্গত পরিবর্তন ও সামাজিক সমতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণের চাহিদার প্রতিফলন থাকা অত্যন্ত জরুরি। ১৮ নভেম্বর সকাল ১১টায়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে ‘নগরে ন্যায়সঙ্গত অন্তর্ভুক্তিমূলক উত্তরণ এবং যুবসমাজ ভবিষ্যৎ খুলনা শহর কেমন দেখতে চাই’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট মাসুম বিল্লাহ এর সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট (ডাব্লিউবিবি) এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সচিব শরিফ আসিফ রহমান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিকল্পনাবিদ আবির উল জব্বার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.তুষার ক্রান্তি রায়, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা, বাংলাদেশ ফেডারেল জার্নাালিষ্ট ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মোঃ হেদায়েত হোসেন মোল্লা। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট্রের স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান। এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি। প্রধান পরিকল্পনাবিদ আবির উল জব্বার বলেন খুলনা শহরের উন্নয়নে সরকার ইতিমধ্যেই অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। যেখানে সকল ধরনের মানুষকে অর্ন্তভুক্ত করে তাদের মতামত নেওয়া হবে। এসময় তিনি জলাবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা নিরসন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সকলকে সরকারকে সহযোগিতা করার আহবান জানান। জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা বলেন, প্রশাসনের একার পক্ষে সকল কাজ করা কঠিন। একটি পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে হলে সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। আইন লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী এবং কমিউনিটির মানুষদের নগরের পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। অধ্যাপক ড.তুষার ক্রান্তি রায় বলেন, এ শহরে অনেকগুলো বিশ^বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিবছর অনেক তরুন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বের হচ্ছে। তাদের মেধাকে নগর উন্নয়নের কাজে লাগাতে হবে। শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে নগরের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে ন্যায়সঙ্গত অর্ন্তভুক্তি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহ ও নাগরিক সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। শরিফ আসিফ রহমান বলেন, দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। বিশে^র অনেক দেশ দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগিলে তাদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। সিটি কর্পোরেশন পুকুর সংস্কার, মাঠ ও পার্কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, যানজট নিরশনের পাশাপাশি সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে নাগরিকদের মতামত গ্রহনের সুযোগ রয়েছে। তিনি নাগরিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে খুলনাকে বিশে^র মধ্যে অন্যতম মডেল স্বাস্থ্যকর ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রকল্প হাতে নিয়েছে যেখানে জলাশয় সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা হবে। অন্যদিকে জনসচেতনতার অভাবে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয় যেগুলো অনেকের চোখে পড়েনা, তাই সবার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে। ছাত্ররা বলেন নিজ নিজ উদ্যোগে শুরু করাটাই মূল বিষয়, কারণ শহরবাসী নিজের এলাকা নিজে পরিচ্ছন্ন রাখলে সবাই আগ্রহের সাথে কাজ করতে উদ্ভুদ্ধ হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জণগণের সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরী বিষয়, অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে বর্তমানে খুলনা শহরে বিভিন্ন রকমের রোগবালাই ছড়াচ্ছে যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই সাধারণ পরিচ্ছন্নতাকে প্রাধান্য দিয়ে জণগণ এগিয়ে আসলে খুলনা শহরটি দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাওস পিয়ারী বলেন আমাদের সবাই চাই এমন একটি শহর যেখানে থাকবেনা কোন বৈষম্য, সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে শহরের জন্য কাজ করে যাবো এবং স¦াস্থ্যকর শহর হিসেবে পরিচিত করে তোলবো। নিজেদের স্বাসথ্য যেভাবে ভালো থাকে সেভাবে পরিকল্পনা করে নগরায়ন করা। বক্তারা আরো বলেন খুলনা শহরের বিভিন্ন খালগুলো উদ্ধার করতে হবে কারণ এটির জন্য অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে।আমরা খুলনাবাসী চাইলেই আমাদের উদ্যোগে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি , কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে আমরা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে পারিনা। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রাখা অত্যন্তজরুরি। আজ আমরা সকলেই ছোট পরিসরে শুরু করার মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করতে পারবো বলে আশাবাদী। আমরা সকলেই আজথেকে নিজেদের গৃহস্থলীর আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় ফেলার চেষ্টা করবো।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button