সন্ধানী ডায়াগনস্টিকের ‘ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স’ সার্ভিসের আড়ালে রমরমা বাণিজ্য
মূমুর্ষ রোগীর মৃত্যু : অত:পর…
স্টাফ রিপোর্টার : নগরীর বাবু খাঁন রোডস্থ আলোচিত সন্ধানী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে ‘ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স’ সার্ভিসের আড়ালে রমরমা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। রোগী ধরার ফাঁদ হিসেবে তারা ‘ফ্রি’ সেবা শব্দটি ব্যবহার করে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং মূমুর্ষ রোগীদের সঠিক সার্ভিস না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, খুমেক হাসপাতাল থেকে রোগী ধরার মূল কারিগর সন্ধানীর মার্কেটিং ম্যানেজার কাজী মফিজুর রহমান সুজন ও অ্যাম্বুলেন্স চালক সোলায়মানের যোগসাজসে সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে সিটি স্ক্যান করতে গিয়ে সাহেরা বেগম (৭৫) নামে একজন বৃদ্ধা রোগীর সন্ধানীতে মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক সোলায়মানকে মারধর করে।
অভিযোগে জানা গেছে, বটিয়াঘাটার দারোগার ভিটা শান্তিনগর তেঁতুলতলা এলাকার বৃদ্ধা সাহেরা বেগম অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ওই রোগীকে সিটি স্ক্যানসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মার্কেটিং ম্যানেজার কাজী মফিজুর রহমান সুজনের মাধ্যমে সন্ধানী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে রেফার্ড করেন। সে মোতাবেক রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুমেক হাসপাতালে অবস্থানরত ‘ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স’ সার্ভিসের নামে পেতে রাখা ফাঁদে তাদের তোলা হয়। নামে ফ্রি হলেও ভাড়া বাবদ প্রথমেই নেওয়া হয় ৩ হাজার টাকা এবং অ্যাম্বুলেন্সে তুলে অক্সিজেন বাবদ নেওয়া হয় আরও ৩শ’ টাকা। এরপর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়ার পর পরীক্ষা বাবদ নেওয়া হয় আরও ২১শ’ টাকা।
রোগীর মেয়ে রিনা বেগম অভিযোগ করেন, পরীক্ষার সময় তার বৃদ্ধা মাকে রবারের মত রশি দিয়ে হাত ও কোমরে বেঁধে রাখা হয় এবং চেপে ধরা হয়। এভাবে পরীক্ষার পর সেখান থেকে বের করার পরই তার মা নিস্তেজ হয়ে যায়। এ সময় তিনি কোন নড়াচড়া করছেন না কেন- জানতে চাইলে তাদের বলা হয়, আপনার মা ঘুমাচ্ছে- তার সঙ্গে কথা বলেন না। উল্টো তাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখে তারা। এ সময় তার অসুস্থ্য মাকে খুমেক হাসপাতালে নেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স চালক সোলায়মানকে বললে সে তাদের ফেলে রেখে অন্য রোগী নিয়ে চলে যায়। এ অবস্থায় আধাঘন্টা অপেক্ষার পরও তার মা কোন নড়াচড়া না করায় তিনি কান্নাকাটি করলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন জানায় তার মা মারা গেছেন। অ্যাম্বুলেন্স চালক সোলায়মানের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে তার মাকে হাসপাতালে নিতে না পারায় মারা যাওয়ার পরই সে ফিরে আসে। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে তার ছেলে সজীবসহ কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্স চালক সোলায়মানকে মারধর করে। এতে সে পালিয়ে গেলে অন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মাকে বাড়িতে নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বীকার করেছেন অ্যাম্বুলেন্স চালক সোলায়মান। কিন্তু তিনি সন্ধানী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ফ্রি বলে মিথ্যাচার করেন। দাবি করেন তিনি কোন টাকা নেননি। আবার বলেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওয়ার্ডবয় টাকা নিয়েছে। এভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে সন্ধানীর মার্কেটিং ম্যানেজার কাজী মফিজুর রহমান সুজন বলেন, খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা সন্ধানীতে রোগী রেফার্ড করলে সেই রোগী তিনি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেন। তবে রোগীর মৃত্যু এবং স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাম্বুলেন্স চালক সোলায়মানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে সন্ধানীর পরিচালকের পক্ষে দায়িত্বরত তার পুত্র আরমান বাকেরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সূত্র জানিয়েছে, মূলত : সন্ধানীর মার্কেটিং ম্যানেজার কাজী মফিজুর রহমান সুজনের মাধ্যমে চিকিৎসকদের সঙ্গে কমিশনের লেনদেন করে মালিকপক্ষ। সন্ধানী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন জোহরা বাকের। সঙ্গে তার দু’ পুত্র নাইম বাকের ও আরমান বাকের সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন।
সচেতন নগরবাসী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সন্ধানী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের সঙ্গে মোটা অংকের কমিশনের বিনিময়ে রোগী ধরার ফাঁদ পেতেছেন। ওই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ শোনা যায় প্রায়শই। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরী। যদিও এর আগে নানা অনিয়মের অভিযোগে মোটা অংকের জরিমানা দেয় তারা।