স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় সাংবাদিকসহ তিন শতাধিক রাজনৈতিক নেতাদের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা থেকে শিক্ষক, ডাক্তার, এমপি, কাউন্সিলরসহ তিন শতাধিক ব্যক্তির নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যা মামলা আবেদন করা হয়েছে। গত ২১ নভেম্বর মামলার আবেদন করেছেন খুলনার পাইকগাছায় নিহত রকিবুল হসানের পিতা মোঃ রফিকুল ইসলাম গাজী। মামলার আবেদনে বলা হয়, গত জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে সারা দেশে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তার ছেলে রকিবুল হাসান ১৬ জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে ১৭ জুলাই থেকে রাজপথে নেমে সক্রিয়ভাবে আন্দোলন শুরু করে। ক্রমান্বয়ে আন্দোলন বেগবান হওয়ায় তার ছেলে আন্দোলনের নেতৃত্বের সামনের সারিতে চলে আসে। শুরু থেকেই আন্দোলন দমাতে আওয়ামীলীগ সরকারের উচ্চ মহল থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এবং সরকারী দল আওয়ামী যুবলীগ এবং ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীদেরকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পূর্বক্ষণে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী গ্রামে সামনের রাস্তায় ছাত্র-জনতা মিছিল করে। ছাত্র জনতার অধিকার আদায়ের সেই মিছিল দমন করার জন্য উল্লেখিত আসামীদের পরিকল্পনা এবং সরাসরি নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে উল্লেখিত আসামীসহ খুলনা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগের কয়েকহাজার কর্মী সরাসরি গুলি বর্ষণ করে। আসামীদের ছোড়া গুলিতে অনেকেই আহত হয়। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাহসী পদক্ষেপে আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়। এমতাবস্থায় আন্দোলনকারীদের বিদ্যুৎ স্পৃষ্ঠে মারার পরিকল্পনা করে উল্লেখিত আসামীরা। আন্দোলনকারীদের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে চাঁদখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তার মাঝে পড়ে থাকা বাঁশ ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কাঁচা বাঁশের মাথায় বাধা পতাকা হাতে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় তার ছেলে রকিবুল হাসানের হাতে থাকা বাঁশ বৈদ্যুতিক খুটির সাথে দেওয়া আসামীদের বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয় এবং ঘটনাস্থলেই তার ছেলে রকিবুল হাসানের শরীর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় ও মৃত্যুর কোলে চলে পড়ে। আন্দোলনকারীরা তার ছেলে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এজাহারে উল্লেখিত আসামীগণ শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালসহ খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের সরাসরি নির্দেশ ও তত্ত্বাবধায়নে কয়রা পাইকগাছা এলাকার ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাছাইকৃত সন্ত্রাসীদের নিয়ে আন্দোলন দমাতে নগদ অর্থের যোগান অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ এবং নিজেরা উপস্থিত থেকে গুলি বর্ষণ, দেশীয় অস্ত্র হকিস্টিক এবং রাম দা নিয়ে তার ছেলেসহ আন্দোলকারীদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে আন্দোলনকারীদের মেরে ফেলার জন্য নগ্ন পরিকল্পনা করে ও গণহত্যা চালায়। এতে করে তার ছেলেসহ অসংখ্য আন্দোলনকারী নিহত ও আহত হয়। এই আন্দোলনে চার শতাধিক লোক চোখ হারিয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছে এবং অঙ্গহানীর ঘটনা ঘটেছে সহস্রাধিক লোকের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যা মামলা আবেদনে অভিযুক্তরা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ হেলাল, কেসিসির সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, এসএস কামাল, শেখ সালাহ উদ্দীন জুয়েল, সালাম মুর্শিদী, আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক প্যানেল মেয়র মনিরুজ্জামান খান খোকন, সাবেক এমপি বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, মোস্তফা কামাল পাশা, মাকসুদ আলম খাজা, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ, সাঃ সম্পাদক শেখ শাহজালাল সুজন, জেলা যুবলীগের সভাপতি চৌধুরি রায়হান ফরিদ, সাঃ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, মার্শাল, এসএম কামালের সহকারি শেখ সোহেল, যুবলীগ নেতা রাশেদ, যুবলীগ নেতা হোয়াইট, দীপু, ফারুখ, আ’লীগ নেতা বেগ লিয়াকত আলী, হাফিজুর রহমান হাফিজ, সাগর, পরশ, ঐশ্বর্য, হাসিবুর রহমান, সাংবাদিকদের মধ্য এসএম নজরুল ইসলাম, এসএম হাবিব, মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ, মোঃ শাহ আলম, সুনীল দাস, রকিব উদ্দীন পান্নু, মকবুল হোসেন মিন্টু, নেয়ামুল হোসেন কচি, মল্লিক সুধাংশু, আসাদুজ্জামান খান রিয়াজ ও মোঃ জাহিদুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা সালাউদ্দীন সবুজ, আসাদ শেখ, তুহিন হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর শাহাদাৎ হোসেন, আঃ সালাম, গোলাম রব্বানি টিপু, মোহাম্মদ আলী, শামসুদ্দীন প্রিন্স, শেখ খালিদ আহমেদ, সাইদুর রহমান, মাহফুজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম প্রিন্স, নাইমুল ইসলাম খালেদ, খুরশিদ আহমেদ টোনা, শেখ মফিজুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম মুন্না, হাসান ইফতেখার চালু, হাফিজুর রহমান হাফিজ, রাজু হাসান, জাকির হোসেন বিপ্লব, গাউসুল আযম, ইমরুল হাসান, আবুল কালাম, ইমাম হাসান, মাহমুদ ডন, আলী আকবর টিপু, গোলাম মওলা শানু, রফিউদ্দীন, জিয়াউল আহসান, সাইফুল ইসলাম ফকির, মোস্তফা রশিদী, আরিফ হোসেন, এড. সাইফুল ইসলাম, এড. আনিছুর রহমান পপলু, এড. এসএম মুজিবর রহমান, এড. আইয়ুব আলী, শেখ জালাল, হালিমা রহমান, শেখ জাকির হোসেন, তসলিম আহমেদ আশাসহ তিনশত নামধারী এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০০ জন। মামলাটির ধারা হলো-আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ এর ৩(২) ও ৪(১)/৪(২) ধারা অনুযায়ী গণহত্যা ও মানবতাবিরাধী অপরাধের অভিযোগ। সমন্বয়ক সাজিদুল বাপ্পি বলেন, অভিযোগটি আর্ন্তজাতিক ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটরের নিকট দাখিল করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে শুনানী হবে। তারপর আদালত শুনানী শেষে আদেশ দিবেন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button