মহানগরীর ৫ থানা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা

মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ড ও ৩টি ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ
স্টাফ রিপোর্টার ঃ নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে সম্মেলনে দৃষ্টি ফেলছে খুলনা মহানগর বিএনপি। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর)সদর থানার অর্ন্তগত ২২নং ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নসহ শান্তিপূর্নভাবে মোট ৩৪টি ইউনিট কমিটির সম্মেলন শেষ করেছে মহানগর বিএনপি। ইতিমধ্যে গত ১৪ নভেম্বর মহানগর বিএনপির সভা থেকে মহানগরীর অর্ন্তগত ৫টি থানার যথাক্রমে ২৭ নভেম্বর খানজাহান আলী থানা, ২৮ নভেম্ববর দৌলতপুর, ২৯ নভেম্বর সোনাডাঙ্গা, ৩০ নভেম্বর খুলনা সদর ও ১ ডিসেম্বর খালিশপুর থানা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারন করেছে। এছাড়া ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মহানগর বিএনপির সম্মেলন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ৩১টি ওয়ার্ড ও তিনটি ইউনিয়নের সম্মেলন থেকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। দলীয় সুত্রদাবী করেছে ৩৪টি ওয়ার্ড ইউনিয়ন সম্মেলনের পরে পুর্নাঙ্গ ওয়ার্ড ইউনিয়ন কমিমি গঠনে নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দলটির মহানগর মিডিয়া সেলের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিলটন জানান, ২০২১ সালে খুলনা মহানগর বিএনপির দীর্ঘদিনের কমিটি ভেঙে দিয়ে তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটিতে এড. এস এম শফিকুল আল মনাকে আহ্বায়ক, শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১ মার্চ ঘোষিত হয় ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি। একদিকে পতিত সরকারের দমন-পীড়ন, মামলা। অপরদিকে বিভাগীয় সমাবেশ, লংমার্চ, কারাবাস নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আহ্বায়ক কমিটি। সবকিছু ছাপিয়ে আহবায়ক কমিটি প্রথমে নগর জুড়ে ৩৪টি ইউনিটে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহ করেছে দলটি। এই সদস্যদের প্রতিনিধিদের ভোটে প্রথমে ৩১টি ওয়ার্ড ও ৩টি ইউনিয়নে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের ভোটের মাধ্যমে থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করে নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে খুলনা মহানগর বিএনপি। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার মাধ্যমে গোপন ব্যালটে প্রথমে নগরীর ৫থানার আহবায়ক ও সদস্য সচিব নির্বাচিত করে কাউন্সিলররা। পরবর্তীতে একই পদ্ধতিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। মহানগর বিএনপি মনোনীত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সফলতার মাধ্যমে ও সকল প্রার্থীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে ভোট গ্রহন ও ফলাফল ঘোষণা করেছেন। ফলে সকল ওয়ার্ডে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতারা নেতৃত্বে এসেছেন।
মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা শরিফুল ইসলাম টিপু জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে তারা প্রতিটি ওয়ার্ডে ৭১ সদস্যের পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করছেন। থানা সম্মেলন ঘিরে ভোটার তালিকা প্রনয়নের কাজ চলছে। ৩৪টি ওয়ার্ডে ইউনিয়ের ২ হাজার ৪শত ১৪জন কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমে থানার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করবেন। বিএনপির খুলনা সদর থানার সদস্য সচিব মো. ফরিদ মোল্লা বলেন, সদর থানার শাখার ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে নগর বিএনপির নির্দেশ পেয়েছি আর সে লক্ষ্যে থানা সম্মেলনের আয়োজনে কাজ চলছে। সোনাডাঙ্গা থানার সদস্য সচিব সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ বলেন, দলের নেতাকর্মীরা উৎসবের মাধ্যমে ওয়ার্ড সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রতিটি সম্মেলনে ছিল উৎসবের আমেজ। নগরীর দৌলতপুর থানা বিএনপি সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেন জানান, ইতিমধ্যে দৌলতপুরের সকল ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়নের সম্মেলন ও ভোটের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সরাসরি ভোটে একাধিক প্রার্থী ছিলেন। সকলের মধ্যে সম্মেলনের আমেজ ছিল। আমরা এখন প্রথমে ওয়ার্ডের পুর্ন কমিটি ও পরে থানা সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিয়েছি। এদিকে সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। চলতি মাসে (নভেম্বর) থানা সম্মেলন সামনে রেখে তারা প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে নানা সাংগঠনিক বৈঠক, মতবিনিময়ে অংশ নিচ্ছেন। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের সাংগঠনিক কাজ করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া ছিলেন। তারপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনায় অল্প সময়ের মধ্যে সম্মেলন শেষ করেছি। চলতি নভেম্বরে মহানগরীর সকল থানার সম্মেলন শেষ করতে চাইছি। ওয়ার্ড থেকে প্রতিটি স্তরে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারাই নেতৃত্বে আসছেন। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে। শফিকুল আলম তুহিন দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কোন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে বলেন, কোন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে মনিটরিং সেলের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত, অভিযোগকারী-অভিযুক্ত সামনা-সামনি জিজ্ঞাসা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে দলের নাম ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করার সুযোগ পাবে না। মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বলেন, আমরা শতভাগ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ৩১টি ওয়ার্ড ও ৩টি ইউনিয়নের সমম্মেলন শেষ করেছি। এবার থানা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে দলের প্রতিটি নেতাকর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের পর থেকে বিএনপি একদিকে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন অপরদিকে রাজপথে স্বৈরাচার হাসিনাকে হটাতে আন্দোলন করেছেন। একই সাথে দল গোছাতে কাজ করেছেন। বিএনপির সফলতা যতটুকু সবটুকুই রাজপথের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের।