স্থানীয় সংবাদ

ছাত্র-জনতার দাবীকে উপেক্ষা করে নৌকার আদলে দ্রুত চলছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ

ময়লাপোতা মোড়-সড়ক সংকুচিত করা হচ্ছে
নকশা পরিবর্তনের দাবিতে কেসিসি ঘেরাও’র হুঁশিয়ারি

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান : ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও তাদের কথিত চেতনায় নৌকার আদলে করা নকশায় নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে নগরীতে। সৌন্দর্য বন্ধনের নামে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ময়লাপোতা মোড়-সড়ক সংকুচিত করা হচ্ছে। ফলে যানজট এবং জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করতে শুরু করেছে সেখানে। সারাক্ষণই লেগে থাকছে যানজট।
এদিকে, নৌকার আদলে এবং যানজট এবং জনদুর্ভোগ সৃস্টিকারী নকশার পরিবর্তনের দাবিতে নগরীতে ছাত্র-জনতা তীব্র আন্দোলন শুরু করেছেন। নকশা পরিবর্তনের দাবিতে তারা কেসিসি ঘেরাও’র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার দাবীকে উপেক্ষা করে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগিয়ে রাত-দিন তড়িঘড়ি করে দ্রুত এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ: নগরীর অসংখ্য সড়ক চলাচলের অযোগ্য থাকলেও তা সংস্কারের বিষয়ে কেসিসি কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই। বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফলে এতে করে ছাত্র-জনতার চাপা ক্ষোভ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে আশংকা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর ২২টি স্থানের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে সড়ক সংকুচিত করে যানজটের স্থায়ী সংকট তৈরি করতে যাচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন। বিশেষ করে নগরীর ময়লাপোতা মোড়কে এমনভাবে সংকুচিত করা হচ্ছে। যার ফলে রাস্তা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। যাতে সেখান থেকে যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এর ফলে নগরীর কদম তলার কাঁচামালের আড়ত থেকে নিরালা বা গল্লামারীগামী যানবাহনগুলোকে ষাটগম্বুজের পূর্বপাশ দিয়ে যেমন ঘুরে যেতে হবে, তেমনি ইকবাল নগর মসজিদ লেন থেকে রূপসাগামী যানবাহনগুলোকেও ঘুরে আসতে হবে ময়লাপোতা মোড় হয়ে। যেটি আরও একটি জটলা তৈরি করবে বলেও আশংকা অনেকের। অনেক সময় উল্টো পথে যানবাহন চলতে গিয়ে দুর্ঘটনারও আশংকা করছেন নগরবাসী। এজন্য নতুন করে নকশা প্রণয়নসহ যানবাহনের জন্য অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছেন খুলনার নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর ময়লাপোতা মোড়কে সৌন্দর্যম-িত করার নামে পতিত আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক- পুরো একটি নৌকায় পরিণত করা হচ্ছে। মোড়ের ঐতিহ্যবাহী বায়তুল আমান জামে মসজিদ থাকছে নৌকার মাঝখানেই। নৌকার এক মাথায় আগে থেকেই আছে ষাট গম্বুজের রেপ্লিকা। বিপরীত প্রান্তে অন্য কোনো স্থাপনা তৈরির চিন্তা-ভাবনা চলছে। কেসিসি’র অপসারিত মেয়র পলাতক তালুকদার আবদুল খালেকের ক্ষমতাকালে প্রকল্প গ্রহণের সময় মসজিদের সামনের অংশে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর নতুন করে নকশা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে মূর্তির পরিবর্তে একটি মিনার হতে পারে বলে জানিয়েছেন কেসিসির আর্কিটেক্ট রেজবিনা রিক্তা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম এ নকশা তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন কেসিসির প্রধান পরিকল্পনাবিদ আবির উল জব্বার।
কেসিসির সূত্রটি বলছে, ময়লাপোতা মোড়সহ নগরীর ২২টি মোড়ের সৌন্দর্য বন্ধনের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় ২০১৯ সালে। আগামী বছর (২০২৫) জুন পর্যন্ত এর মেয়াদ। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন নামের ওই প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ কোটি টাকা। ময়লাপোতা
মোড়ের নামটিও তখন পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু চত্বর দেওয়া হয়। যেটি গত ৭ আগষ্ট পরিবর্তন করে ময়লাপোতা মোড় রাখা হয় বলেও কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ময়লাপোতা মোড়ের ষাট গম্বুজের রেপ্লিকার সাথে সমন্বয় রেখে সামনে একটি মিনার করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও আগে সেখানে মুজিব ভাস্কর্য করার পরিকল্পনা ছিল। যেটি ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর পরিবর্তন করা হয়। ময়লাপোতা বায়তুল আমান জামে মসজিদকে ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধনের ওই পরিকল্পনায় গাছ লাগানো, ফুটপাত ও বাগানে বেঞ্চ তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের রাস্তার বেশকিছু অংশ ঘিরে নিতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এড. মোঃ বাবুল হাওলাদার বলেন, জনসাধারনের দুর্ভোগ করে কোন সৌন্দর্য বর্ধন খুলনাবাসী মেনে নিবে না। এজন্য ময়লাপোতা মোড়ে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানব বন্ধন থেকে নকশা পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে।
নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা খুলনা মহানগর সভাপতি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। কারন যানবাহনগুলো অনেক দূর ঘুরে আসার পরিবর্তে বিপরীত দিক দিয়েই যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। তাছাড়া শের-এ-বাংলা রোডেও হোটেল গ্রান্ড প্লাসিডের সামনে থেকে কোন সড়ক পৃথকিকরণ না করায় ময়লাপোতা মোড় পর্যন্ত ঘুরে না এসে বরং উল্টো পথেই যানবাহন চালায় চালকরা। তাই দুর্ঘটনা রোধে তিনি নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহনেরও আহবান জানান।
জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন-জাসাস খুলনা মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব কেএমএ জলিল বলেন, একটি গণবিরোধী, জনবিচ্ছিন্ন ও ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দলের আমলে নেওয়া প্রকল্পগুলো পর্যালোনা না করেই কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রমান করে এখনও ফ্যাসিবাদের দোসররা রন্দ্রে রন্দ্রে রয়েছে। তিনিও জনদুর্ভোগের এসব প্রকল্প বাতিল করে নতুন প্রকল্প গ্রহণের আহবান জানান।
এ প্রসঙ্গে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মশিউজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আজ প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলবো। একই সঙ্গে যারা বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করছেন ছাড়াও আর্কিট্যাক্টসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button