স্থানীয় সংবাদ

মণিরামপুরের মদনপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপারের নেওয়া ঘুষের ১২ লাখ টাকার বৈধতা দিলেন শিক্ষা অফিসার

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি ঃ যশোরের মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান এবার মদনপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবদুল মান্নানের ঘুষ নেওয়া ১২ লাখ টাকা খরচের বৈধতা দিলেন। অভিযোগ রয়েছে একলাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে সুপারকে রক্ষা করতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তার পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হবার পর এলাকায় চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে ভিন্ন কোন দপ্তরের অফিসারকে দিয়ে পুনরায় তদন্তের দাবি করা হয়েছে।
জানাযায়, উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বর মুনছুর আলী ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেন মদনপুর দাখিল মাদ্রাসায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ১০ শতক জমি এবং ১২ লাখ টাকার বিনিময় দুইজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাত করেন সুপার আবদুল মান্নান ও সভাপতি আবদুল জলিল। ইউএনও নিশাত তামান্নার নির্দেশে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১২ নভেম্বর নিজ কার্যালয়ে সভাপতি আবদুল জলিলের অনুপস্থিতিতে সুপার আবদুল মান্নান এবং ওয়ার্ড মেম্বর মুনছুর আলীকে নিয়ে শুনানী করেন। শুনানীর সময় সুপার আবদুল মান্নান দুইজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ১০ শতক জমি এবং ১২ লাখ টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে মাদ্রাসার প্যাডে সমুদয় টাকা খরচের লিখিত হিসেব পেশ করেন। তবে ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারি সচিব আবদুল জলিল জানান, টাকার বিনিময় চাকুরি দেওয়া এবং খরচের হিসাব সম্পর্কে তাকে জানানো হয়নি।
সুপারের দেওয়া খরচের হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে সালেহা খাতুন মুন্নি নামে এক গৃহবধুকে আয়াপদে চাকুরি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামে ১০ শতক জমি এবং নগদ তিন লাখ এবং হুমায়ুন কবিরকে নিরাপত্তাকর্মীর চাকুরি দিয়ে নয়লাখসহ মোট ১২ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যকে দেওয়া হয় তিনলাখ, নিয়োগবোর্ডের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকারকে ৭০ হাজার, ডিজি প্রতিনিধিকে ৮০ হাজার, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য পাতন মাদ্রাসার সুপার মহাসিন আলমকে পাঁচ হাজার, যশোর মহিলা মাদ্রাসার সুপারকে ১০ হাজার, নিয়োগবোর্ডের সদস্যদের খাওয়া খরচ ৪৭ হাজার ছয়’শ,শিক্ষার্থীদের বনভোজন বাবদ ৫০ হাজার, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সম্মানিভাতা ৪৫ হাজার, ১৫ আগষ্টে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীতে যুবলীগের ৫০ হাজার, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ক্রয় ৬৫ হাজার, মাধ্যমিক অফিসের কর্মচারীদের পাঁচ হাজার ছাড়াও বিভিন্নখাতে সমুদয় টাকা ব্যয়ের হিসেব দেন। হিসেবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি চারলাখ অনুদান নেয়ার জন্য ঘুষ দেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার ,দেড়লাখ টাকা নেওয়ার জন্য প্রকৌশল বিভাগকে ৮৭ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়া হয়। আর এসব হিসেবের বৈধতা দিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন খান উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ইউপি সদস্য মুনছুর আলী এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে অভিযোগ করেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন একলাখ টাকার বিনিময় সুপারের নেওয়া ঘুষের ১২ লাখ টাকা খরচের বৈধতা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন অবিলম্বে অন্য কোন দপ্তরের অফিসারকে দিয়ে পুনরায় তদন্তের। তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন জানান, খরচের ভাউচার মোতাবেক তিনি সমুদয় টাকার বৈধতা দিয়ে ইউএনও বরাবর ১৯ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না জানান, প্রতিবেদন যাচাই করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button