আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা অফিসে অবৈধ লেনদেনের পাহাড়
#৩ কর্মকর্তা ১২ বছর কর্মস্থলে #
আশাশুনি প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের পাহাড়ে পরিনত হয়েছে। একই স্টেশনে ৩ সহকারী উপজেলান শিক্ষা অফিসার কর্মরত থাকায় দুর্নীতি ও অনিয়ম অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে প্রতিকার চেয়ে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন। দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হলেও অবিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিকার না পেয়ে শিক্ষক সমাজ হতাশ ও অশান্তির দাবানলে জ্বলেপুড়ে খাগ হয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগে প্রকাশ, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সেলিম, শাহজাহান আলী ও আঃ রকিব প্রায় ১০/১২ বছর একই স্টেশনে রয়েছেন। বিষয়টি কিভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে তার কোন জবাব শিক্ষক সমাজের জানানেই। গত বছর আবু সেলিমের বদলী আদেশ হলেও তিনি যোগাযোগ করে আদেশ স্থগিত করতে সক্ষম হন। ফলে তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার অপ্রতারোধ্য হয়ে দাড়িয়েছে। ফলশ্রুতিতে তাদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে এবং প্রতিবাদকারীর সংখ্যা সংগত কারনে শূন্যের কোঠায় নেমে যাচ্ছে। তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কিছু তথ্য নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
অফিসের কর্মকর্তারা বিগত সময়ে ভোট কেন্দ্র মেরামতের জন্য কলিমাখালী সপ্রাবি, মহিষকুড় সপ্রাবি, নাকতাড়া সপ্রাবি, শীতলপুর সপ্রাবি ও বালিয়াখালী সপ্রাবি এর নাম তালিকাভুক্ত করেন এবং বড় অংকের টাকা ভাগাভাগি করে নেন। ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য স্কুল প্রতি ২৫ হাজার টাকা ফিল্ড রেট বেধে উত্তোলন করেন। নছিমাবাদ ও কোলা সপ্রাবিসহ ৪ বিদ্যালয়ে রং মিস্ত্রী পাঠিয়ে কাজ করিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থৈর বড় অংশ ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়া হয়। ২০২২-২৩ সালে অন লাইন বদলিতে যে সকল যোগ্য শিক্ষক ছিল তাদেরকে রিজেক্ট করে অযোগ্যদের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে বদলীর সুপারিশ করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রত্যেক বদলীতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে লেনদেন হয় বলে জানাগেছে। এছাড়া অডিট ফেস করার নাম করে প্রতি বছর ৪ থেকে ৬৫০ টাকা করে বিগত ১০/১১ বছরে ৭ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। চলতি দায়িত্বের জন্য ১০০০ টাকা করে, ১৩ তম গ্রেডের জন্য বকেয়া ও অন্যান্য বেতন ছাড় করার জন্য শিক্ষক প্রতি ১০০ টাকা করে কয়েকবার ৩ লক্ষাধিক টাকা বিভিন্নবিভিন্ন সময় উত্তোলন করা হয়েছে। অন্যদিকে চুক্তির বিনিময়ে মেরামত বরাদ্দের (২ লক্ষ টাকা) তালিকাভুক্ত করা, ঘুর্ণিঝড় রিমিলে কোন ক্ষতি না হলেও অর্থের বিনিময়ে গোপনে নির্বাচিত স্কুলে বরাদ্দ পাইয়ে দেয়া হয়েছে।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সেলিম দুর্নীতির কারনে একাধিক বিভাগীয় ও আদালতে মামলায় জড়িয়েছেন। সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহজাহানের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ ও ব্যাপক তোলপাড় হয়। ফলে উপজেলার ৬০% শিক্ষিকা নিজেদেরকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
এসব অভিযোগ নিয়ে পত্রপত্রিকা ও অনলাইনে একাধিক রিপোর্ট হলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসার অবৈধ আয়ের সোনার হরিণ নামে খ্যাত কর্মকর্তাদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের অপতৎরতা থামছেনা বলে একাধিক ভুক্তভোগি শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। যে কারনে কর্মস্থলে থাকার নিয়মকে তুয়াক্কা করতে চাননা তানারা। কর্মস্থলে সময়মত উপস্থিত হয়ে স্কুল ভিজিট বা অনৌ কাজে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও সেটি তারা মানেননা। অধিকাংশ দিন তারা ১২-১ টার দিকে অফিসে গমন করেন, অফিসে আগতরা জানতে চাইলে বলা হয় স্কুল ভিজিট করে এসেছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রতি রবিবার দুপুরের পরে বাড়ি থেকে অফিসে পৌছান এবং বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে অফিস ত্যাগ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। বর্তমানে প্রান্তিক পরীক্ষা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। পত্রিকায়ও এব্যাপারে রিপোর্ট হয়েছে। কিন্তু কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। প্রান্তিক পরীক্ষা ক্লাস্টার ভিত্তিক করার দাবী থাকলেও না করে উপজেলা ভিত্তিক করে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন কর্মকর্তারা। আয় ব্যয়ের কোন হিসাব দেয়া হয়নি। ৫/৬ টাকার স্থলে শিক্ষার্থী প্রতি ১৬ টাকা করে আদায় করা হলেও অব্যয়িত অর্থের কোন হিসাব শিক্ষকদের দেয়া হচ্ছেনা। অব্যয়িত অর্থ নির্দিষ্ট একাউন্টে না রেখে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের এহেন দুর্নীতি ও অনিয়মকে সাপর্ট দিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন অফিস বান্ধব শিক্ষক। তাদের সহযোগিতায় তারা দুর্নীতিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন বলে চাওর রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার বর্মন জানান, পত্রিকায় নিউজ হয়েছে শুনেছি কিন্তু এখনো দেখিনি। আমরা অভিযোগের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেইনি।