মশক নিধনে কেসিসির কর্মতৎপরতায় নগরবাসী হতাশ
# খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতৃবৃন্দ #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেছেন, বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন ও সংস্কারের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ রাষ্ট্র বির্নিমানের স্বপ্ন নিয়ে দেড় সহস্রাধিক ছাত্র জনতার আত্মাহুতি ৫ আগস্টের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। সরকারি হিসেবেই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত হয়েছেন ২২ হাজার মানুষ। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা যে কয়েকগুণ বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিন সরকারের দুই বছর ও তাদের আর্শিবাদে রাষ্ট্র ক্ষমতা জবরদখলকারী ইতিহাসের নিতৃষ্টতম ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দু:শাসনের অবসানে আগস্ট বিপ্লব এক গৌরবোজ্জল স্বর্ণালী অধ্যায়। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা যে পন্থায় গণভবন থেকে পালিয়ে প্রতিবেশি দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তা ভবিষ্যতের জন্য অনন্য শিক্ষা হয়ে থাকবে। আগামী দিনে এই দেশে আর কখনোই গণতন্ত্র ব্যতিত অন্য কোন নিকৃষ্ট পন্থায় কেউই ক্ষমতা দখলের দু:সাহস দেখাতে পারবেনা। মঙ্গলবার কে ডি ঘোষ রোডন্থ দলীয় কার্যালয় কার্যালয় নাগরিক জীবনের দূর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সুপরিকল্পিত দীর্ঘসূত্রিতার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিগত ১৭ বছরের অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দূর্বার ও লাগাতার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা গুম হয়েছেন, যারা মামলা ও হামলার শিকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এক দূর্বিসহ দিনযাপনে বাধ্য হয়েছেন- বিএনপি ও অন্যান্য সংগঠনের সেই সব ত্যাগী পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের স্বপ্ন ও আকাংখার সাথে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারী প্রতিটি বীর সেনানীর প্রত্যাশা আজ এক সরল রেখায় এসে মিলিত হয়েছে। আর তা হলো একটি দূর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র যেখানে সব মানুষ সমানভাবে তাদের অধিকার ভোগ করবে, যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে এবং মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। ৫ আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী গঠিত অন্তবর্তী সরকারের চার মাস পূর্ণ হতে চলেছে। আকন্ঠ অনিয়ম, দূর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা ও অপশাসনে জর্জরিত রাষ্ট্র কাঠামোর খোলনলচে বদলে দেওয়ার দাবি ছিল সর্বাগ্রে। ফ্যাসিবাদী জামানায় সবচেয়ে নীপিড়ীত রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি আশা করেছিল, অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই এ দিকে সর্বাধিক মনোযোগ দেবে। কাংখিত সংস্কার কার্যক্রম শুরু করবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে জনগনের ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী দলের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। তুহিন উল্লেখ করেন, জনগনের সেই প্রত্যাশা পূরণে অন্তবর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। আর সেজন্য অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনভিজ্ঞতা যতোটা না দায়ি, তার চাইতে বেশি দায় প্রশাসনের সর্বস্তরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিস্টদের দোসরদের। তাদের সুপরিকল্পিত অপতৎপরতায় প্রশাসনের সর্বস্তরে স্থবিরতা জেকে বসেছে। সংষ্কারের মাধ্যমে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ধূলিস্যাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। খুলনা মহানগরী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের কিছু মৌলিক চাহিদা, প্রত্যাশা এবং বিপরীতে তাদের প্রাপ্তির দিকটি বিশ্লেষণ করলে বিষয়গুলো আপনাদের সামনে আরও সুষ্পষ্ট হবে। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় এবং শীত মৌসুম পর্যন্ত জীবনঘাতি এই মহামারির দোর্দন্ড দাপট চলে। সময়ে সাথে সাথে রোগটি জটিল ও মারাত্মক রূপ নিচ্ছে এবং রোগীর শরীরে নানা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু রোগীর শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ আশংকাজনকভাবে কমে গিয়ে চরম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ মশক নিধনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কর্মতৎপরতা নগরবাসীকে রীতিমতো হতাশ করেছে। মশার লার্ভা নিধনে তাদের কোন উদ্যোগ যেমন নেই, পাশাপাশি ফগার মেশিন দিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়ার কুন্ডলীর ভেতরেই শত শত মশার জীবন্ত ওড়াওড়ি প্রমাণ করে দেয়, কেসিসির ছিটানো এই স্প্রে মশক নিধনে কেবল অকার্যকরই নয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সততার ভয়াবহ ঘাটতিরও পরিচায়ক। ওদিকে হাসপাতালে মরণাপন্ন রোগীর দেহে প্লাজমা দেওয়ার প্রয়োজনে অধিকাংশরাই দ্বারস্থ হচ্ছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কারণে নগরীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকলেও চার্জ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় অনেকেই যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ওদিকে হাসপাতালগুলোতে এখনও আওয়ামী আমলে দোর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে চাকরি করা ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়েছে বহাল তবিয়তে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছরে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রন্ত হয়ে ১১শ’ মানুষ ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১৩ জন। জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলন দমনে চরম নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছিল পুলিশ বিভাগ। বিক্ষোভকারীদের বুক লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি ছুড়ে সহস্র তরুণ তাজা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অপরাধে ইতিহাসে তারা কলংকিত হয়ে থাকবে। ৫ আগস্টের পরে দীর্ঘ সময় থানা গুলো পুলিশ শূন্য ছিল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করেনি থানা পুলিশ। ফলে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে অগ্নিমশাল হয়ে ওঠা ছাত্র সমাজকেই দিনে ট্রাফিক কন্ট্রোল ও রাতে এলাকা পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগ কাজে ফিরলেও তাদের আচরণ ও ভূমিকা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে খুলনা মহানগর এলাকায় চুরি ডাকাতি রাহাজানির ঘটনা যেমন বেড়েছে, পাশাপাশি দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে নগরীর সবগুলো ট্রাফিক পয়েন্টে দীর্ঘ সময় যানজট লেগে থাকছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা ও ড্রেন সংস্কার/পুন:নির্মান এবং ২২টি মোড়/সড়ক দ্বীপ আধুনিকায়ন। শুরু করার পর কাজ ফেলে রাখায় জনদূর্ভোগ চরমে পৌঁছে দিচ্ছে কেসিসির এইসব প্রকল্প। খুলনার ক্রীড়াঙ্গন যে এখনও স্বৈরাচারের দালালমুক্ত হয়নি তার প্রমাণ জেলা ও বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার চার মাস পরেও তার চাটুকার দালালরা রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজ করছে। খুলনার মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স সকল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন হওয়া সত্বেও কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও অভিজ্ঞতাহীনতার কারণে এখানে কোন টুর্ণামেন্ট যেমন হয়না, তেমনি নতুন খেলোয়াড় তৈরির বিষয়ে নেই কোন উদ্যোগ। নতুন খেলোয়ার সৃষ্টিতে সরকারের বরাদ্দ বিপুল অংকের অর্থের নয়ছয় হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে খুলনায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্রাশ প্রোগাম গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিক বিভাগকে সচল করা এবং কেসিসির কথিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যতো দ্রুত সম্ভব শেষ করার দাবি জানা্িচ্ছ। সকল সংস্থা থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সমূলে উৎপাটন করে প্রকৃত দেশপ্রেমিক শক্তিকে কাজে লাগানোর আহবান জানান। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বেগম রেহেনা ঈসা, কাজী মাহমুদ আলী, শের আলম সান্টু, বদরুল আনাম খান, মাহাবুব হাসান পিয়ারু, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, মাসুদ পারভেজ বাবু, হাফিজুর রহমান মনি, সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ, এহতেশামুল হক শাওন, একরামুল হক মিল্টন, হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, শেখ জামাল উদ্দিন, আফসার উদ্দিন, মিজানুর রহমান মিলটন, ফারুক হোসেন প্রমূখ। সংবাদ সম্মেলন থেকে ২৭নভেম্বর বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের বরাবরে স্মারকলিপি পেশ, ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রমবৃদ্ধির দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে মহানগর মহিলাদল ও সচেতন নারীদের স্মারকলিপি পেশ, ১ ডিসেম্বর রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ডেঙ্গুজ¦র প্রতিরোধে সচেতনতাবৃদ্ধির লক্ষে ছাত্রদল ও ড্যাবের প্রচারাভিযান শুরুর কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়।