স্থানীয় সংবাদ

‘ইসকন’ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল সারাদেশ

তিন উদ্দেশ্য ইসকনের :
বাংলাদেশে মুসলিমদের দাবিয়ে রেখে কৌশলে সর্বত্র হিন্দুদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব স্থাপন করা
মুসল্লিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আগ্রাসন চালানোর মাধ্যমে মূলত এদেশের মুসলিমদের নিঃশেষ করে দেওয়া
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিলুপ্ত ঘটিয়ে এদেশকে অখন্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা

স্টাফ রিপোর্টার : চট্রগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে রাস্ট্রীয় প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম আলিফকে তুলে নিয়ে জবাই করে হত্যার প্রতিবাদ এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইসকন’ নিষিদ্ধের দাবিতে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। দল-মত নির্বিশেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রসহ মুসলিম-জনতা বুধবার দিনভর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশ ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে দাবি উঠেছে- অ্যাড. সাইফুল ইসলামের হত্যাকারী ইসকনের খুনি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং তাদের গডফাদার গ্রেফতারকৃত চিন্ময়কে প্রধান আসামি করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের।
এদিকে, জঙ্গি-সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইসকন’ বাংলাদেশে ভারতের নীল নকশা ও ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য মূলত ৩টি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশে মুসলিমদের দাবিয়ে রেখে কৌশলে সর্বত্র হিন্দুদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব স্থাপন করা, মুসল্লিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আগ্রাসন চালানোর মাধ্যমে মূলত: এদেশের মুসলিমদের নিঃশেষ করে দেওয়া এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিলুপ্ত ঘটিয়ে এদেশকে অখন্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা।
অপরদিকে, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, ইসকনকে সেট করে রাখা হয়েছে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃস্টি করছে। সংখ্যালঘু বলে বিশ্বকে দেখানোর চেষ্টা করছে। ইসকন একটি জঙ্গি সংগঠন। তারা পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। হত্যাকান্ডের বিচার দাবি। ইসকন হিন্দুদের কোন ধর্মীয় সংগঠন নয়। আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে আদালত থেকে তুলে নিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নীল নকশা অনুযায়ী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনাকে তারা বিচার বিভাগের উপর ভারতীয় আগ্রাসী নগ্ন হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে বলেন, আমাদের বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কঠিন বিচার করা না হলে সারাদেশে কোর্ট বর্জন করতে হবে। আমরা আর কোর্টে যাবো না। শেখ হাসিনার কোন ষড়যন্ত্র আমরা বাস্তবায়ন করতে দেবো না।
বক্তারা আরও বলেন, হিন্দু হিসেবে নয়, চিন্ময়কে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধী হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইসকন আদালতকে অনিরাপদ করে তুলেছে। ইসকনের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে। ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানান তারা। সভায় অ্যাডভোকেট শেখ মাসুদ হোসেন রনি সভাপতিত্ব করেন। অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান চৌধূরী তুষারের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন অ্যাডভোকেট শফিউল আলম তুতি, আসাদুল আলম, শেখ রফিকুজ্জামান, শরিফুল ইসলাম জোয়ার্দার খোকন, মোল্লা মশিউর রহমান নান্নু, জুলকার নাইম, জিল্লুর রহমান খান, একেএম শহিদুল আলম, বেগম আক্তার জাহান রুকু প্রমুখ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্প্রীতি সমাবেশ ও গায়েবানা জানাজা : এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় শোক ও সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কর্মী ও সাধারন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৭ নভেম্বর) নগরীর শিববাড়ি মোড়ে এ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সন্ধ্যায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলীফের গায়েবানা জানাজা আদায় করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ইসকন একটি জঙ্গি সংগঠন, যারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকে অবমাননা করেছেন। যার ফলে ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারই প্রেক্ষিতে এই চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এই ইসকন এখন দেশে অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ, আর এখন এই আওয়ামী লীগ ইসকনের হাত ধরে ফিরে আসতে চাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে উল্লেখ করে বলেন, “যে প্রশাসন কোন ঘটনা ঘটার পাঁচ দিন আগে জেনে যেতেন, সেই প্রশাসন এখন কোথায়? এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যের ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের সক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যতক্ষণ না জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের বিচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার হবে, ততক্ষণ দেশের ছাত্র জনতা রাজপথ ত্যাগ করবে না। ছাত্র সমাজ এই সমস্ত জঙ্গিদের প্রতিহত করতে আগামীতেও থাকবে। আমরা সবাই মিলে এই স্বাধীন বাংলা উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই পরাজিত শক্তি বারবার মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে, বারবার বিভিন্ন রুপে ফিরে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে চাইছে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকা- যে বা যারা ঘটিয়েছেন তাদের সাবধান করে দিতে চাই, আপনাদের চরম মূল্য দিতে হবে। আমরা দাবি জানাই দ্রুতই এই হত্যাকা-ের বিচার করতে হবে। বাংলাদেশ ৯২% মুসলমানের দেশ, এই দেশে জঙ্গি সংগঠন ইসকনের হাতে একজন মুসলমানের মৃত্যু হবে আমরা ভাবিনাই।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের দেশের সকল ধর্মের ভাই, মা-বোনদের সমান সম্মান করি। কিন্তু ইসকন একটি জঙ্গি সংগঠন, এই সংগঠনকে যারা সামর্থন করবে, সে যেই ধর্মেরই হোক না কেন সে জনগণের শত্রু, এই দেশের শত্রু। বাংলার মাটিতে তার ঠাঁই হবে না।
সমাবেশ বক্তব্য দেন ও উপস্থিত ছিলেন সাজ্জাদুল ইসলাম বাপ্পি, মিনহাজুল ইসলাম সম্পদ, আব্দুল আহাদ, মহিবুল্লাহ মুহিব, মহররম হাসান মাহিম, শাহারিয়ার ইসলাম, নাজমুল হোসেন ইমরাম, সাকিব রেজা, মিরাজুল ইসলাম ইমন, মোস্তাকিম ইসলাম, হৃদয় ঘরামী, ইসরাত জাহান তৃষা, সুমাইয়া বান্না, শামসুন্নাহার নিশি, আফসা প্রমুখ।
সমাবেশে খুলনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ইসকন তুই জ’ঙ্গী, স্বৈরাচারের সঙ্গী, হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, ইসকনের জায়গা নাই, ইসকনের লক্ষণ, স্বৈরাচারের পূর্ণবাসন, ইসকনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠাও একসাথে, আলিফ সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ, ২৪’এর শহীদেরা, লও লও লও সালাম, স্বৈরাচার পতনে, ভয় করিনা মরনে, ইসকনের বিরুদ্ধে লড়াই হবে এক সাথে, লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই- ইত্যাদি শ্লোগান দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button