৬ বছর আগে বনদস্যু আত্মসমর্পকারী দস্যু বাহিনীর অধিকাংশই সুন্দরবনে ফের বেপরোয়া
কামরুল হোসেন মনি ঃ ৬ বছর আগে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়ে জেল ভেঙ্গে পালানো দাগি দ-প্রাপ্ত দস্যু এবং আগে আত্মসমর্পণ করা দস্যুরা সুন্দবরনে গিয়ে শুরু করেছে দস্যুতা। তারা সুন্দবনে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি, ডাকাতি, ছিনতাই. চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের নতুন করে শুরু করেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন সুন্দরবন দস্যুমুক্ত থাকলেও আবার নতুন করে দস্যুতা শুরু হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালিরা। অপরাধ বিশেষজ্ঞগণ জানিয়েছেন, প্রথমত এখন সুন্দরবনে যাওয়া নিষেধ। এই সময়ে তারা কীভাবে বনের ভেতর গেল, এটার দায় বন বিভাগেরই। দ্বিতীয়ত, সুন্দরবনে এ ধরনের তৎপরতা আবারও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। সুন্দরবনের প্রকৃতি থেকে সম্পদ আহরণ করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে। এ ধরনের অপরাধ চলতে থাকলে জেলেদের জীবিকা নির্বাহ করতে বাধা সৃষ্টি হবে। গত ৪ নভেম্বর রাতে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের চুনকুড়ি নদীর তক্কাখালী এলাকায় বনদস্যুর কবল থেকে ১০ জেলেকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। এর আগে গত ২৮ জুলাই সুন্দরবনের টগিবগি এলাকা থেকে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের ১৪ জেলেকে অপহরণ করে দস্যুরা। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়ে জেল ভেঙ্গে পালানো দাগি আসামি ও দ-িতরা সুন্দরবনে ফের দস্যুতা শুরু করেছে। কয়েক মাসে জেলে অপহরণ, মাছ ছিনতাই, চাঁদা আদায়সহ বেশ কয়েকটি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তারও হয়েছে বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে গত ৪ নভেম্বর রাতে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের চুনকুড়ি নদীর তক্কাখালী এলাকা থেকে মুক্তিপণ আদায়ের দাবিতে আটক রাখা বনদস্যুর কবল থেকে ১০ জেলেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া জেলের মধ্যে ছিলো আব্দুল আলিম (৬২), নূর ইসলাম (৪৫), রবিউল ইসলাম (২৮), হাফিজুর রহমান (৪৫), রাজু ফকির (৪৭), শফিকুল ইসলাম (৪৫), রফিকুল ইসলাম (৪৫), মফিজুর (৩৮), মুছাক সানা ও ছেলে নজরুল ইসলাম (৫৭)। উদ্ধার হওয়া জেলেরা জানান, তাদেরকে বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে বনদস্যু মঞ্জুর বাহিনী মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে। এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে মঞ্জুর নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর আগে গত ২৮ জুলাই সুন্দরবনের টগিবগি এলাকা থেকে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের ১৪ জেলেকে অপহরণ করে দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আলাদাভাবে প্রত্যেক গ্রুপের কাছে দাবি করা হয় লাখ টাকার চাঁদা। বিকাশের মাধ্যমে কয়েকটি পরিবার কিছু টাকা পরিশোধও করে। তবে এরই মধ্যে অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে ১৪ জেলেকে উদ্ধার ও ৫ দস্যুকে আটক করে র্যাব। উদ্ধার করা হয় দেশীয় অস্ত্র। সম্পদ আহরণে সুন্দরবনে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে আতঙ্কিত জেলেরা। কোস্ট গার্ডের গোয়েন্দাদের সূত্রে মতে, কিছু দিন আগে দাকোপ থেকে আসাফুরবাহিনী প্রধান আসাফুর ও তার এক সহযোগীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। সে আগে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে আত্ম সমর্পন করেছিলেন। পুনরায় অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিভাগের গোয়েন্দার এক কর্মকর্তা গতকাল রাত শুক্রবার এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তাদের টহল অব্যাহত আছে। গোয়েন্দার সূত্রে মতে, জানা গেছে সুন্দরবনে মজনুর বাহিনীর প্রধান মজনু খুলনা কেন্দ্রীক এবং আলীফ বাহিনীর প্রধান আলীফ ভারতে বসে তার দস্যু বাহিনীকে দিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত করাচ্ছে। সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে অপহৃত জেলেরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তাদের কয়েকজনকে টগিবগি এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে দস্যুরা। এরপর হাত-মুখ বেঁধে আটকে রাখে। তাদের পরিবারের কাছে ফোন করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ ব্যাপারে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ৩০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। পরে একজনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি টাকা দিলে বাকিদের ছাড়ার কথা বলে। বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪টি গোলা-বারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিল। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সুন্দরবনের চুনকুড়ি নদীর তক্কাখালী এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা বন বিভাগের সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে বন বিভাগের সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় প্রতিরোধের মুখে বনদস্যুরা পালিয়ে যায়। ধ্বংস করা হয় বনদস্যুদের একটি আস্তনা। গোয়েন্দাদের সূত্র মতে, গত কয়েক বছর যাবৎ সুন্দরবন দস্যুমুক্ত থাকলেও দেশের পটপরিবর্তনের পর বর্তমানে ২/১টি বাহিনী নতুন নামে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের পটপরিবর্তনের পর একটি গ্রুপ এ কাজটি করছে। তবে তারা কোনো সুবিধা করতে পারবে না। আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি।