স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় জাতীয় পতাকা মিছিলপূর্ব সমাবেশে রুহিন হোসেন প্রিন্স

খবর বিজ্ঞপ্তি ঃ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষায় শোষণ বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামকেই এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর নানা শক্তি নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পরও নানা শক্তি নানা তৎপরতা চালিয়েছিল। নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় না থাকায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫৩ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরও তৎকালীন আন্দোলনরতদের স্বাক্ষরকৃত রূপরেখা আচরণবিধি বাস্তবায়ন করা যায় নি। এ সময় কালে দুবৃত্তায়িত অর্থনীতি দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। আর এই দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি ও এর স্বার্থভোগীদের রক্ষার জন্য ব্যক্তিতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র সামনে চলে এসেছে। এদের স্বার্থরক্ষায় দেশে অবাধ দুর্নীতি লুটপাট চলেছে। লুটপাটের পরিমাণ এমন যে, এরা দেশে টাকা রাখেনি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই লুটপাটের টাকা রাখা হয়েছে। আর নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে এরা কর্তৃত্ববাদ স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। জনগণের ভোটাধিকার পর্যন্ত হরণ করেছে। ইতিহাস বলে দেশের মানুষ শেষ বিচারে এটাকে গ্রহণ করে না স্বৈরশাসকের অনিবার্য পরিণতি হয় নির্মম। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে মুক্ত করতে সবার গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সব ধরনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। কমিউনিস্ট পার্টি ঐ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে চলেছে। নীতিহীন রাজনীতির বিপরীতে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতিকে সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে। একমাত্র বামপন্থী কমিউনিস্টদের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে মানুষকে মুক্তি দেয়া সম্ভব। দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ করা সম্ভব। সকল মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এবং ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থান, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষাকে এগিয়ে নিতে নীতিনিষ্ঠ বামপন্থী শক্তির পতাকাতলে সমবেত হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণায় সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের কথা বলা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ’৭২-এর সংবিধানে গণতন্ত্র, ধর্মপক্ষতা, সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় থাকা শাসকরা এই কাজটি সম্পন্ন করেনি। আজ তাই দেশের মানুষকে সচেতন ও সংঘটিত হয়ে ’৭২ সংবিধানের অসম্পূর্ণতা দূর করাসহ শোষণ-বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রব্যমূল্য কমানোসহ জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারেনি। আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বন্ধ হয়নি। পালাতক স্বৈরাচার, মাস্তানরা উঁকিঝুঁকি মারা শুরু করেছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন বেড়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসতে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে ভোটের ব্যবস্থা করা দরকার। কিন্তু তার কোনো রোডম্যাপ ঘোষিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কার্যক্রম শুরু করা ও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবী জানান। তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচারী শাসকরা শিল্পনগরী খুলনাকে কর্মহীন নগরীতে পরিণত করেছিল। এখনো অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। তিনি অবিলম্বে পাটকল চালুসহ শিল্পকারখানা গড়ে তোলা এবং উপকূলীয় এলাকা ও মানুষ বাঁচতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানান।
আজ পয়লা ডিসেম্বর ’২৪ বিজয়ের মাসে দেশব্যাপী পতাকা মিছিলের অংশ হিসেবে খুলনায় সিপিবি আয়োজিত পতাকা মিছিলে যোগ দিয়ে সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স এসব কথা বলেন। বিকাল ৪টায় খুলনার পিকচার মোড়ে মিছিলপূর্ব সমাবেশে সমাবৃত্ত করেন সিপিবি’র খুলনা জেলা সভাপতি কমরেড ডা. মনোজ দাশ। এ সময় জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড এস এ রশীদ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড শেখ আব্দুল হান্নান, সিপিবি নেতা কমরেড এইচ এম শাহাদাৎ, কমরেড চিত্তরঞ্জন গোলদার, কমরেড মিজানুর রহমান বাবু, কমরেড আশোক সরকার, কমরেড ডা. এস এম ফরিদুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড কিংশুক রায়, কমরেড প্রকৌশলী সুখেন রায়, কমরেড অ্যাড. নিত্যানন্দ ঢালী, কমরেড গাজী আফজাল হোসেন, কমরেড আব্দুল হালিম, কমরেড শিশির সরকার, কমরেড অধ্যাপক সঞ্জয় সাহা, কমরেড অ্যাড. প্রীতিশ মন্ডল, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড নিতাই পাল, কমরেড তোফাজ্জেল হোসেন, কমরেড এস এম চন্দন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শ্যামল রায়, কমরেড মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ শেষে মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের স্মরণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের দাবিতে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল খুলনা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ হাদিস পার্কে এসে শেষ হয়। এরপর শহীদ হাদিস পার্কে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button