জিপি জাকির হোসেন জেলা পিপির রুম দখল করায় আইন কর্মকর্তাদের নিন্দা প্রকাশ

খবর বিজ্ঞপ্তি ঃ গত ২৬ নভেম্বর খুলনার বিভিন্ন আদালতের নবনিযুক্ত আইন কর্মকর্তাগন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগদান করেন। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন জিপি পদে নিয়োগ করা হয়েছে নাগরিক ঐক্য নগর সভাপতি এডেভোকেট মো. জাকির হোসেনকে। তিনি ২৮ নভেম্বর তার সমার্থিত ৩/৪ জন আইনজীবীসহ ৫/৬ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোককে সাথে নিয়ে সকাল ৯টায় জেলা পিপির জন্য বরাদ্দকৃত রুম/ অফিসটি দখল করেন।
জেলা পিপি এডভোকেট চৌধুরী তৌহিদুর রহমান তুষার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অতিরিক্ত পিপি ও এপিপিদের সঙ্গে নিয়ে তার অফিসে যেয়ে দেখেন জিপি জাকির হোসেন পূর্ব থেকে কয়েকজন আইনজীবী ও ৫/৬ জন বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে বসে আছেন। এসময় বাধ্য হয়ে অপ্রীতিকর কোন ঘটনা এড়ানোর জন্য পিপি তুষার তার অনুসারিদের নিয়ে ফিরে আসেন এবং অদ্যাবধী তিনি অফিস করতে পারছেন না। খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত নির্মিত হওয়ার পর উক্ত ভবনের নিচ তলায় পাশাপাশি দুইটি রুম, একটি জিপির সেরেস্তা, যেখানে গুরুত্বপূর্ন সরকারি নথি সংরক্ষিত হয় এবং রুমটি জিপির অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু পিপির জন্য বরাদ্দ হয় একটি রুম, উক্ত রুমটি জিপির রুমের চেয়েও একটু বড় ও সুন্দর। জেলা ও দায়রা জজ এর নাজিরের নিকট হইতে চাবি গ্রহন না করে জিপি পতিত সরকারের বির্তকিত ও বৈষম্যমূলক আন্দোলনের ছাত্র জনতার উপর গুলি করার অভিযোগে অভিযুক্ত মামলার আসামী এড. সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে গোপনে চাবি সংগ্রহ করে উক্ত রুমটি স্বয়ং দখল করেন। বর্তমানে জেলা পিপি হিসাবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম খুলনার ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক এডভোকেট তৌহিদুর রহমান তুষার নিয়োগ প্রাপ্ত হন। তিনি নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকে অদ্যাবধী অতিরিক্তি পিপি ও এপিপিদের নিয়ে অফিস করিতে না পারায় সরকারি কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতিতে অবস্থিত মহানগর পিপি এ কে এম শহিদুল আলম শহিদের চেম্বারে তার সভাপতিত্ব খুলনায় নিয়োগ প্রাপ্ত বিভিন্ন কোর্টের পিপি, অতিরিক্ত পিপি ও এ পিপিদের নিয়ে এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় জিপি এডেভোকেট মো. জাকির হোসেনের উল্লেখিত কর্মকান্ডের উপস্থিত সকলেই নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েয়ে বক্তব্য রাখেন এবং বিষয়টি আইন মন্ত্রাণলয়ের আইন উপদেষ্টা, আইন সচিব, সলিসিটর অফিসসহ নাগরিক ঐক্যর আহবাহক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বক্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত পিপি সফিউল আলম তুতি উল্লেখ করেন, জিপি ফ্যাস্টিট বিরোধী বর্তমান সরকারের জিপি হিসাবে নিয়োগ পাইলেও তিনি বিগত সময় পতিত ফ্যাস্টিট সরকারের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক ম্যাগাজিনের তিনি পতিত ফ্যাস্টিট সরকার শেখ হাসিনা ও তার পিতা শেখ মুজিবর রহমানের বন্দনা করে বিভিন্ন প্রকার কবিতা ও প্রবন্ধ লিখিয়াছেন। গত বছরের ম্যাগাজিনের একুশ পাতায় সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত জিপি ” বঙ্গবন্ধু ও ইসলাম” শিরোনামে তিন পাতার একটি প্রবন্ধ লেখেন, যাতে পতিত সরকারের বন্দনাসহ শেখ মজিবুর রহমানের প্রয়োনীয় ও অপ্রয়োজনীয় বন্দনা করা হয়েছে। অতিরিক্ত পিপি আলফাজ হোসেন বলেন জিপি দেওয়ানী মামলা পরিচালনাকারী জেলার সর্বউচ্চ আইন কর্মকর্তা হইলেও তিনি প্রাকটিস করেছেন ফৌজদারী আদালতে। তিনি দেওয়ানী আদালতে তেমন কোন প্রাকটিস করেন নাই। দীর্ঘ ত্রিশ বছরের প্রাকটিস জীবনে দশটিও দেওয়ানী মামলা করেন নাই। সহকারী জজ আদালত হতে জেলা জজ পর্যন্ত দাখিলীও দেওয়ানী মামলা সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে গত দশ বছরে তাহার দাখিলীয় দশটি দেওয়ানী মামালাও খুজে পাওয়া যাবে না। মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনারেল নবনিযক্তি পিপি খালিদ হাসান জনি বলেন জিপি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রফেশনাল এ্যাটিকেট ও কন্ডাই ভঙ্গ করিয়া আইনজীবী পেশার পাসাপাশি ল কলেজের শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা করে থাকেন। যে কারণে তিনি আইনজীবী পেশায় যথাযথ মনোনিবেশ করিতে ব্যর্থ হন। খুলনার মানুষ জিপিকে “সাংবাদিক জাকির সাহেব” হিসাবে চেনেন। তিনি মেট্রোপলিটন সংবাদিক ইউনিয়ন এমইউজে খুলনার সাবেক সভাপতি ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
উক্ত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা পিপি তৌহিদুর রহমান তুষার, নারী শিশু আদালত নং-১এর পিপি হালিমা আক্তার খানম, নারী শিশু আদালত নং-২এর পিপি কামরুল নাহার হেনা, বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যরেল পিপি জিল্লুর রহমান খান, জননিরাপত্তা কোর্টের পিপি এস এম মাফুজুর রহমান মফিজ, সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবুন্যরেল পিপি শরীফুল ইসলাম জোয়ালার খোকন, অতিরিক্ত পিপি মশিউর রহমান নান্নু, আমিনুল ইসলাম মিন্টু, এটিএম মনিরুলজামান মুরাদ, শেখ মো. কামরুজ্জামান টুকু, হুমায়ন করিব উজ্জল, জাহাঙ্গীর আলম, এ ছাড়াও বিভিন্ন কোর্ট দায়িত্ব প্রাপ্ত ৫০ জন এপিপি উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন।