কমতে শুরু করেছে চালের দাম নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮৫-৯০ টাকায়

# সুখবর নেই আলু পেঁয়াজে : স্বাভাবিক হয়নি বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ #
কামাল মোস্তফা ঃ বাজারে নতুন আলু আসলেও দাম কমেনি বরং পুরানো আলুর চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেশিতে অর্থাৎ ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক হয়নি বোতলজাত সয়াবিন তেল। বাজার ঘুরে বেশিরভাগ মুদি দোকানগুলোতে দেখা পাওয়া যায়নি ভোজ্য তেলের। কম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারের এখনো বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমলেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি।
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতি কেজি পুরানো আলু বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। সেখানে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে। সাধারণত নতুন আলু বাজারে আসলে পুরানো আলুর দাম কমে, কিন্তু বাস্তবে তার কোন লক্ষণ নেই। ক্রেতাদের অভিযোগ, মূলত মজুদদারদের কারসাজির কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। কোনো কারণ ছাড়াই তারা আলুর দাম বাড়াচ্ছে। কৃষক পর্যায় থেকে নামমাত্র মূল্যে আলু কিনে মজুদ করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজারে এখন নতুন আলুর সরবরাহ বেড়েছে। পাশাপাশি পুরনো আলুর সরবরাহও পর্যাপ্ত। এর পরও দাম বাড়ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা ৮০ লাখ টন। আর বিবিএসের হিসাব মতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টনের কিছু বেশি, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় দুই লাখ টন বেশি। ফলে চাহিদা মিটিয়ে আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা ২৬ লাখ টনের বেশি। কিন্তু উল্টো আলু আমদানি করতে হচ্ছে। পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম পুরনো আলুর দাম কেজিতে ৭৫ টাকা ছাড়াল। এক বছর আগে ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বাজারে আলুর কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ৪৫ টাকার মধ্যে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আগের থেকে কেজিতে ১০ টাকা কমে। খুচরা বাজারে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ১২০-১৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়, যা ছিল ১০০-১১০ টাকা। এদিকে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো বাজারে তেলের সরবরাহ ১৫-২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। নগরীর বিভিন্ন বাজার, মুদি দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, যেখানে বোতলজাত সয়াবিন আছে তারা ১৬৭ টাকা লিটার দামের জায়গায় ১৭০ টাকাও নিচ্ছে। খোলা সয়াবিন ১৮০-১৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গল্লামারীর মের্সাস মিজান স্টোরের মালিক মিজানুর রহমান জানান, তেল কোম্পানীর প্রতিনিধিরা প্রায় ২ সপ্তাহ হলো বোঁজ খবর নেয় না। আমার প্রতি সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের ১ কার্টুন, ১ লিটার ৩ কার্টুন, ২ লিটার ৩ কার্টুন ও ৫ লিটার ও কার্টুন তেলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এই চাহিদা থাকলেও কোম্পানী তেল দিচ্ছে না। বর্তমানে আমার দোকানে কোন বোতলজাত সয়াবিন তেল নাই। এদিকে দোকানে পর্যাপ্ত তেলের চাহিদা না থাকার কারণে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারছির, অনেক ক্রেতাই ফিরে যাচেছন।
হাসানুজ্জামান পেশায় একজন বেসরকারি চাকুরিজীবি। ময়লাপোতা সন্ধা বাজারে এসেছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে। তিনি বলেন, সারা বাজার ঘুরে একটি দোকানে সয়াবিন তেল পেলাম না। বাধ্য হয়ে বেশি দামে খোলা তেল কিনলাম, যা কখনোই কিনি না। নতুন আলুর দাম ৯০ টাকা কেজি, এটা কিভাবে সম্ভব। কোন জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমার কোন সম্ভাবনাই দেখা যায় না। আমাদের মত নি¤œ আয়ের মানুষের পক্ষে চলা খুবই কঠিন হয়ে গেছে।
নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম গত সপ্তাহের মত একই দামে বিক্রি হচ্ছে। কোন কোন চাল কেজিতে ২-৪ টাকা কমেছে। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, যা গেল সপ্তাহে ছিল ৭৫ টাকা। মোটা চাল ছিল ৫২ টাকা, এখন ৫২ টাকায়ই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নাজিরশাহ ৮০ টাকা, ২৮ সিদ্ধ ৬৫ টাকা, ভাইটেল ৯০ টাকা, বাসমতি ৯০ টাকা।
চাল বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, গেল সপ্তাহের তুলনায় চালের কিছুটা কমেছে। বাজারে নতুন চাল এসেছে প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে। প্রতি সপ্তাহে কেজিতে দুই-চার টাকা করে বাড়ছিল চালের দাম, তবে এখন কমতে শুরু করেছে।