স্থানীয় সংবাদ

শিশুগাছে সংক্রমিত ছত্রাক এখন উপার্জনের মাধ্যম গাছের ‘ভাইরাস’ বেচে চলে সংসার

সাইফুল্লাহ তারেক ঃ শিশুগাছে সংক্রমিত ছত্রাক এখন উপার্জনের মাধ্যম। খুলনা মহানগরীসহ আশপাশের উপজেলার নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোররা প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে উঠেই বেরিয়ে পড়ছে শিশুগাছের কথিত ভাইরাস পোকার সন্ধানে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি পোকা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এরপর পিকআপ ভরে চলে যাচ্ছে এর পাইকারী মোকামে। তবে কারা কিনছে আর কেনইবা কিনছে আর তারা বিকৃত আকৃতির এই পোকা কিনে করছেটাই বা কী- এমন সব প্রশ্ন চাপা পড়ে যাচ্ছে পোকার চাহিদা ভিড়ে। শিশুগাছের ভাইরাস পোকা বিক্রি হচ্ছে। চরম চাহিদার বিপরীতে আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা সকলের চাই পোকা। আর তাই দাঁড়িয়ে থাকা জীবিত গাছের সংক্রমিত ডাল বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এরপর ব্যাবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা শ্রমিক দিয়ে যতœসহকারে গাছ থেকে আহরণ করছে পোকা ভর্তি ডাল। এরপর বাসা-বাড়ি, আড়ৎ কিংবা নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে অন্য শ্রমিকরা ডাল থেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে পোকা ও তার উচ্ছিষ্ট। যা মোকামে পাঠানোর জন্য উপযোগী করেই বস্তাভর্তি করা হচ্ছে। ভোর থেকে জনপদের বেকার যুবকদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সী নারী-পুরুষরা নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে পোকার সন্ধানে। ইতোমধ্যে এই কারবারে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হলেও ঠিক কতদিন চলবে এই ব্যবসা থেকে আয় উপার্জন তা জানা নেই কারো। ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই জানান, ফুলতলা, অভয়নগর, ডুমুরিয়া, রুপসা, শিরোমনি , গিলাতলা দক্ষিনপাড়া সহ কয়েকটি স্পট থেকে এজেন্ট হিসেবে পোকা কিনে তাদের তত্ত্বাবধায়নে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চালান পাঠাচ্ছে। প্রথমে পোকার দাম কেজি প্রতি ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও ক্রমশ আশাতীত যোগান পাওয়ায় দাম কমেছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে কাক ডাকা ভোরেই বেরিয়ে পড়ছেন। সংক্রমিত রোড শিরিষ গাছের ডাল কিনে নিচ্ছেন। যে গাছের ডালে যত বেশি ভাইরাস পোকার সংক্রমন হয়েছে, সে গাছের ডাল ততই বেশি দামে কিনছেন তারা।
অনেক ব্যবসায়ী আবার দিনভর উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ভাইরাস সংক্রমিত গাছ কিনছেন। পরদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় জনপ্রতি শ্রমিক নিয়ে ওইসব গাছের ডাল কেটে ভ্যান যোগে নিয়ে যাচ্ছেন গন্তব্যে। তবে এই পোকা কিনে তারা যে মোকাম বা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করছেন তারাই বা এগুলো দিয়ে কী করছেন তা তাদের কারোরই জানা নেই। এ ব্যাপারে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ফুলতলা উপজেলার আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের বলেন তার এটা মূল পেশা নয়। গত প্রায় এক মাস ধরে এ ব্যবসায় জড়িয়েছেন তারা। মূলত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভাইরাস সংক্রমিত রোড শিরিষ গাছের ডাল কেনেন তারা। ২০০-৫০০ থেকে শুরু করে ২০০০-২৫০০ টাকা দরেও ভাইরাস পোকার সংক্রমিত প্রতিটি গাছের ডাল কিনেছেন। তিনি আরও জানান, কেনা ডালগুলো ভেঙে বাড়িতে নিয়ে আশপাশের মানুষদের দিয়ে ডালে লেগে থাকা আঠার মতো বস্তু কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে সেগুলো বস্তা ভর্তি করে প্রথমে ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তবে বর্তমানে ক্রমশ আশাতীত যোগান পাওয়ায় দাম বহুলাংশে কমেছে। এত ভাইরাস পোকা কোন মোকামে পাঠায় ব্যবসায়ীরা বা এগুলো কী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়িরা জানান, পিকআপ-ট্রাক ভর্তি করে এগুলো বগুড়া, ফেনী ও কুষ্টিয়াতে পাঠানো হয় বলে তারা শুনেছেন। তবে আসলে ঠিক কোথায় যায় আর কী কাজে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে তা তাদের জানা নেই। তবে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে তারা জেনেছেন, শিরিষ গাছের এসব দিয়ে এক ধরনের আঠা ও আসবাবপত্রের রং তৈরি হচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button