পাটকল চালু ও বকেয়া প্রদানের দাবিতে খালিশপুর ও দৌলতপুর জুটমিল গেট অবরুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ পাটকলসহ বন্ধ সকল রাষ্ট্রীয় কলকারখানা দুর্নীতি ও লুটপাটমুক্ত করে আধুনিকায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় চালু, শ্রমিকদের সকল পাওনা সঠিক হিসাব অনুযায়ী প্রদান, মাথাভারি প্রশাসন ও দুর্নীতিযুক্ত বিজেএমসির সংস্কার করাসহ তৎকালীন মন্ত্রী, সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার, যে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল লিজ দেয়া হয়েছে এবং প্রক্রিয়াধীন আছে সেগুলো বাতিল, ২০১০ সালের ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং এক্ট কার্যকর করা, কাঁচাপাট সরাসরি রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করা, আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মিল কর্তৃক যে সকল ফৌজদারি মামলা রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করা এবং খুলনায় আন্দোলন চলাকালীন শ্রমিক ও নাগরিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল যৌথ কারখানা কমিটির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে অনির্দিষ্টকাল শ্রমিকদের অবস্থান ধর্মঘট পালিত হচ্ছে খালিশপুর জুটমিল গেটে। ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দৌলতপুর জুটমিল কারখনা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জেল হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক শ্রমিকরা দৌলতপুর জুটমিল গেট অবরুদ্ধ করে রাখেন। পাটকল সংশ্লিষ্ট, প্রশাসন ও ইন্ডাষ্ট্রিয়াল গাড়ি প্রবেশে বাধাঁগ্রস্ত করে রাখেন। স্াধারণ শ্রমিকরা রেলপথ আটকে রাখার কারণে মালগাড়ি ও তেলের গাড়ি চলাচল করতে পারেনি। বিকেল ৩টায় খালিশপুর জুটমিলস প্রশাসন শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে সমঝোতা সভায় আহবান করেন। এসময় শ্রমিকরা মনে করেছিলো যে, এই সভা থেকে বকেয়া পাওনার বিষয়ে ইতিবাচক সমাধান আসবে। কিন্তু প্রায় এক ঘন্টার এই সভা থেকে আশু কোনো সমাধান আসেনি। প্রশাসন থেকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করা হয়েছে, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি দ্রুত খুলনায় আসবেন এবং আপনাদের সংগে এই বিষয়ে বৈঠক করবেন। এতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সম্মতিজ্ঞাপন করেননি। সমঝোতা সভা থেকে তারা বেরিয়ে আসেন। ধর্মঘটস্থলে এসে সমঝোতা সভার সকল ঘটনা কমিটির সভাপতি সাধারণ শ্রমিকদের জ্ঞাত করেন এবং অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। শ্রমিকদের এই অবস্থান ধর্মঘট ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি মোঃ মনির হোসেন মনি এবং সঞ্চালনা করেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। অবস্থান ধর্মঘট ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব এস এ রশীদ, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কারখানা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মোঃ মোজাম্মেল হক খান, উপদেষ্টা মো নূরুল ইসলাম, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ খুলনা জেলা সদস্য আবদুল করিম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ, ক্রিসেন্ট জুটমিল কারখানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের, শ্রমিকনেতা মোঃ ডালিম কাজী, মোঃ সুজন, মোঃ সোহেল প্রমুখ। বক্তারা বলেন, গত ২ জুলাই ২০২০ তারিখে করোনা মহামারির সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলসহ সারাদেশের ২৬টি পাটকল লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেন। ফলে একদিনে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারসহ পাটসংশ্লিষ্ট প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। আকষ্মিক বন্ধের ফলে পাটকলশ্রমিকদের জীবন-জীবিকা স্থবির হয়ে যায়। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিগত সরকার শ্রমিকদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে শ্রমিকদের পিতা-মাতা-স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ভাত দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা তখন তাদের কর্মস্থল থেকে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়। দু’মুঠো খাবারের জন্য, চাকরী ফিরে পাবার আশায় রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে বাধ্য হয়। বক্তারা বলেন, পাটকল শ্রমিকরা আংশিক বেতন পেলেও সঠিক হিসাব অনুযায়ী সকল পাওনাদি এখনো পর্যন্ত পায়নি। এমনকি খুলনার খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, জাতীয় জুট মিল, কেএফডি ও আর আর জুট মিলের শ্রমিকেরা এখন পর্যন্ত কোনো টাকা পায়নি। এসমস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জীবন কি দুর্বিষহ অবস্থায় চলছে তা একমাত্র তারাই জানেন। নিষ্ঠুরভাবে পাটকল বন্ধ, বকেয়া প্রদানে গড়িমসি ও ষড়যন্ত্রের শিকার শ্রমিকরা। সরকারের কাছে শ্রমিকদের এই দাবি একটি গণতান্ত্রিক দাবি, ন্যায্যত এটি শ্রমিকদের অধিকারও বটে। আমাদের যে বকেয়া পাওনা তা কোন করুণা নয়, এটা আামাদের ন্যায্য পাওনা। এই পাওনা মিটিয়ে দিতে হবেই, হবে। সবচেয়ে বিষ্ময়কার ঘটনা হলো, এখনো পর্যন্ত বিজেএমসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা স্বপদে বহাল রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কয়েকটি মিল ইতিমধ্যে ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দেয়া হয়েছে, ক্রিসেন্ট জুটমিল লিজ দেয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে। কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ লুটপাট, চুরি ও অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বক্তারা অবিলম্বে বন্ধকৃত পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু ও শ্রমিকদের সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধের জোর দাবি জানান।