আ’লীগের দোসর উজ্জল দাস আর রাসেল খালিশপুর হাউজিং এলাকায় এখন আতংকের নাম

# নির্যাতনে শিকার দু’ ছাত্রদল নেতা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ #
স্টাফ লিপোর্টারঃ আ’লীগের দোসর উজ্জল দাস আর রাসেল খালিশপুর হাউজিং এলাকায় এখন আতংকের নাম। তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ টু শব্দটি করতে পারে না। পতিত সরকারের রেখে যাওয়া চেলা চামচা নিয়ে হাউজিং বাজার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এলাকায় ত্রাস যুবলীগের মুন্নার মাদক ব্যবসা এখন পরিচালনা করছে এ দু’জন। সাথে রয়েছে ১৫/২০ জনের টিএজ বাহিনী। এদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বিএনপি যুবদল নেতারা। এমনই অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে খালিশপুর থানা, মহানগর বিএনপিসহ বিভিন্ন দপ্তরে। লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, খালিশপুর হাউজিং এস্টেট এন-৪৬ নাম্বার বাসার বাসিন্দা। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আলহাজ¦ রকিবুল ইসলাম বকুলের পোলিং এজেন্ট হিসেবে খালিশপুরের ১২নং ওয়ার্ডের স্যাটেলাইট টাউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করি। সেদিন আ’লীগ সন্ত্রাসীদের উপেক্ষা করে আমি একমাত্র ব্যক্তি যে বকুল ভাইয়ের নির্দেশে কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলাম। তখন আ’লীগ সরকারের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা সেনাবাহিনী ও পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে আমাকে মারতে মারতে কেন্দ্র থেকে টেনে হিচড়ে বের করে রাস্তায় ফেলে মারে। আমার কাছে থাকা মোবাইল ও ৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এরপর আমাকে সমস্ত হাউজিং বাজারে মারতে মারতে ঘুরিয়ে বায়তুল ফালাহ মোড়ে পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। সে সময় আমি যেহেতু মাওলানা ভাসানী কলেজের শিক্ষক ছিলাম তাই এলাকাবাসি আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। আমি দ্রুত বকুলের বাসায় যাই। আমরা তিন ভাই। আমার বড় ভাই আল-আমিন ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রদলে রাজনীতি করে। তার হাত ধরে আমি রাজনীতিতে আসি। আমার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন (আপন) বর্তমানে খালিশপুরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ছাত্রদলের সক্রিয়কর্মী। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে রাজপথে লড়াই সংগ্রামে হামলা মামলা জেল খেটেছে। আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী ও মহানগর বিএনপির উর্ধ্বতন নেতাকর্মীরা আমাদের বাসায় তাকে বেশ কয়েকবার দেখতে এসেছে। কারামুক্ত করতে ও চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেছে। তবে স্বৈরাচার সরকার পতনের পর আওয়ামী দোষররা রূপ বদলেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা আমাকে মেরেছিলো এবং এতদিন আ’লীগ সরকারের আমলে যারা প্রকাশ্যে মাদক ও জুয়ার ব্যবসা পরিচালনা করে এসেছে, তারাই এখন বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে হাউজিং বাজার এলাকায় তারেক রহমানের ছবির সঙ্গে তাদের ছবি লাগিয়ে বড় বড় প্যানা পোস্টার টানিয়েছে। এখন তারা বিএনপির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ইয়াবা, গাজা, ফেন্সিডিল ও জুয়ার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আমি বিষয়টি প্রতিবাদ করি। কয়েকদিন পূর্বে আলহাজ¦ রকিবুল ইসলাম বকুল খুলনা প্রেসক্লাবে আসলে বিষয়টি তাকে জানাই। তখন তিনি মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনকে বিষয়টি দেখতে বলেন। তুহিনও আমার কথা শোনেন। এরপর থেকেই উজ্জ্বল দাস ও রাসেল বাহিনীর লোকজন আমাকে ধরার জন্য ওত পেতে থাকে। গত ১৬ ডিসেম্বর’২৪ শিববাড়ি মোড়ে বিএনপির বিজয় র্যালীতে এই চক্রের অন্যতম ক্যাডার ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমার ওপর হামলাকারী রাসেল শিকদার আমাকে একা দেখতে পেয়ে অসদাচরণ করে। এ সময় হাউজিং বাজারের মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং প্রধান উজ্জ্বল দাস আমার কলার টেনে ধরে নাকে ঘুষি মারে। সঙ্গে সঙ্গে আমার নাক থেকে রক্ত বের হয়। এরপর উজ্জ্বল দাসের নেতৃত্বে আওয়ামী ক্যাডার রাসেল শিকদার, বাপ্পি, সজিবসহ অনেকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি ও বেধড়ক মারধর করে। এতে আমি মারাত্মকভাবে জখম হই। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে নিকটতম ফার্মেসী থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। পরে ওই দিন বিকেলে উজ্জ্বল দাস আমার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন (আপন) কে হাউজিং বাজারে শাহী বিরানী এর গলিতে ডেকে নিয়ে যায়। এসময় বাপ্পি ও শাকিল অস্ত্র ঠেকিয়ে গলির আরও ভেতরে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে আমার ছোট ভাই আপনের কপাল, মাথা ও ঘাড়ে জখম হয়। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পা দিয়ে বুকের পাজরে লাথি দিতে থাকে। উজ্জ্বল দাস গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে চিৎকার চেচামেচি করতে নিষেধ করে। সঙ্গে রাসেল শিকদার, বাচ্চুর ছেলে রানা, সজিব, প্রিন্স শাকিল, বাপ্পী, পিচ্চি মোস্তফা, হালিম, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুসহ ৩-৪ জন পাশবিক নির্যাতন চালায়। এ সময় তারা আমাদের দু’ ভাইকে এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হত্যা করার হুমকি দেয় এবং স্থান ত্যাগ করে। পরে আহত অবস্থায় এলাকাবাসী আমার ছোট ভাইকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার শরীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তিবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মাথায় ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এমতাবস্থায় আমি ও আমার পরিবার এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সদ্য রূপ পরিবর্তনকারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গবদ্ধ হামলার শঙ্কায় আছি। উল্লেখ্য, উজ্জ্বল দাস ১২ নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতির পদ ব্যবহার করলেও প্রকৃতপক্ষে সে হাউজিং বাজারের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার নেতৃত্বে এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা হয়। তার ১০-১২ জনের একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। মাদক বিক্রির টাকার দিয়ে তাদের সংসার চলে। ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ খুলনা গোয়েন্দা পুলিশ ১০ বোতল ফেন্সিডিলসহ উজ্জল দাসকে গ্রেফতার করে। এছাড়া তার নামে খালিশপুর থানা মামলা নম্বর ২৮ জিআর ২০১/২২ ও মামলা নং ৩৫ জিআর ১১৬/১৮ মামলা রয়েছে। এছাড়া উজ্জ্বলের অন্যতম সহযোগি আওয়ামী দোসর রাসেল শিকদার দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সুদ, মাদক ও জুয়ার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আওয়ামী স্বৈরাচার পতনের পর এই ব্যবসার পার্টনার হয় উজ্জ্বল দাস। তাদের কারণে এলাকার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিগত আ’লীগ সরকারের আমলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় রাসেল শিকদার প্রকাশ্যে হাউজিং বাজারে অনলাইন জুয়ার ডিলারশিপ পরিচালনা করে এসেছে। যা এলাকার সকলে অবগত। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। এছাড়া উজ্জ্বল দাসের আরেক সহযোগি আ’লীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা রানা হাউজিং বাজার ও খালিশপুর এলাকায় ফেন্সিডিল, গাজা ও ইয়াবা বিক্রি করে আসছে। তারা এখন বিএনপির বড় বড় প্যানা টানিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে। উজ্জ্বল দাসের এ সকল কর্মকান্ড যুবদল ও বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। আমি এবং আমার পরিবার দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার পরও নির্মম নির্যাতনের শিকার হলাম। অভিযুক্ত উজ্জল দাস বলেন, ভিকটিমরা আমার ছোট ভাই ব্রাদার। আমার সাথে বেয়াদবি করেছে তাই আমার অন্যান্য ছোট ভাইয়েরা তাকে বকাঝকা করেছে। এই নিয়ে হাতাহাতি হয়েছে। আমার নামে যেসব মাদক মামলা ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবী করেন।