স্থানীয় সংবাদ

স্বপ্ন পূরণে খুলনাবাসীর ট্রেনযাত্রা শুরু

# সাড়ে তিন ঘন্টায় খুলনা থেকে ঢাকায় জাহানাবাদ এক্সপ্রেস #

স্টাফ রিপোটার ঃ ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৬টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনের হুইসেল ও পরিচালকের বাঁশির আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গেই খুলনা থেকে প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস। সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যায়। নতুন এ রুটে খুলনা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে প্রথম যাত্রায় অংশ নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। প্রথমদিনের রেলের যাত্রী হতে ভোররাতে স্টেশন ও স্টেশনের বাইরে বিপুলসংখ্যক যাত্রী দেখা যায়। তাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ফুলে ফুলে সাজানো ট্রেনের সঙ্গে সেলফি তুলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন। নাসির নামে এক যাত্রী বলেন, ঢাকা যাওয়ার জন্য আগে থেকে বাসের টিকিট কাটা ছিল। গতকাল রাতে অনলাইনে দেখলাম ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে বাসের টিকিট ক্যানসেল করে ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার জন্য ট্রেনে ঢাকা রওনা দিলাম। বনি নামে এক যাত্রী বলেন, জাহানাবাদ এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রী হতে পেরে ভীষণ আনন্দ লাগছে। এতদিন খুলনা থেকে ঢাকায় যেতে অনেক সময় নষ্ট হতো। পদ্মাসেতুর নতুন এ রুটে এখন আর সময় নষ্ট হবে না। জ্যামেও বসে থাকতে হবে না। আমিন নামে এক যুবক বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। এ ট্রেনের মাধ্যমে আমরা অল্প সময়ে ঢাকা যেতে ও আসতে পারবো। বাসের জার্নির চেয়ে ট্রেনের জার্নিটা নিরাপদ। এ রুটে নতুন ট্রেন চালু হওয়ায় আমি ভীষণ আনন্দিত। এদিকে খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহানাবাদ এক্সপ্রেস সম্পর্কে খুলনা রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার আশিক আহমেদ বলেন, প্রথম যাত্রায় খুলনাসহ বিভিন্ন রুটে খুলনা স্টেশন থেকে ৫৫৩টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। গড়ে বলা যেতে পারে ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে। ট্রেনটিতে মোট ১২টি বগি রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি যাত্রীবাহী ও একটি পণ্যবাহী। ১১টি বগিতে আসন সংখ্যা ৭৬৮টি। খুলনা থেকে নতুন এ রুটের বাণিজ্যিক চলাচলের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে সকাল ৬টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। পর্যায়ক্রমে এ রুটে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এক্ষেত্রে হয়তো বা ছয় মাস সময় লাগতে পারে। এদিকে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও ঢাকায় পৌঁছেছে ৪৫ মিনিট দেরিতে অর্থাৎ সকাল ১০.৩৫ ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছে। শিবচরে ক্রসিংয়ের কারণে ২৫ মিনিট দেরি হয় বলে জানা গেছে। এটি আবার রাত ৮টায় ঢাকায় ছেড়ে ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। জানাবাদ এক্সপ্রেস চালু হওয়ায় খুলনা থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৩১ কিলোমিটার কমে গেছে। আগে খুলনা থেকে ঢাকার দূরত্ব ছিল ৪৩০ কিলোমিটার। এখন পদ্মাসেতু হয়ে এ রুটের দূরত্ব হয়েছে ১৯৯ কিলোমিটার। পদ্মাসেতু হয়ে নতুন রুটে সময় লাগার কথা মাত্র পৌনে ৪ ঘণ্টা। দূরত্ব, যাতায়াতের সময় ও ভাড়া কম হওয়ায় রেলওয়ের এ উদ্যোগে খুশি সাধারণ যাত্রীরা। যাত্রাপথে ট্রেনটি নোয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, লোহাগাড়া, কাশিয়ানী জংশন এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। ট্রেনে বিভিন্ন শ্রেণির ৭৬৮টি সিট রয়েছে। এ ট্রেনে ১১টি যাত্রীবাহী কোচ ও একটি লাগেজ ভ্যান রয়েছে। এ লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে খুলনা ও আশপাশের জেলার বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বা মালামাল ঢাকায় নিতে পারবে। ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত ভাড়া শোভন চেয়ার ৪৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ৮৫১ টাকা ও এসি সিট ১ হাজার ১৮ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button