যুব সমাজকে সাথে নিয়ে আমরা চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই
# কয়রা পাইকগাছা ও আঠারোমাইলে সমাবেশে জামায়াতের আমীর #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে। কোন নির্দিষ্ট দলের হাতে যেন ভোট ও দেশ আর চলে না যায়। তিনি বলেন, আমরা একটি তারুণ্য নির্ভর সমাজ দেখতে চাই। যুব সমাজকে সাথে নিয়ে আমরা চাঁদাবাজমুক্ত ও দখলদারমুক্ত দেশ গড়বো ইনশাআল্লাহ। খুলনার কয়রা-পাইকগাছার প্রধান সমস্যা বেড়িবাধ সংকট নিরসনে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, আপনারা অন্তÍত: শুরু করুন। জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে আর কোন দাবি করতে হবে না, বরং জনগনের সংকটগুলো খুঁজে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবে।
এদেশের যুবকরা বৈষম্যমুক্ত যে সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল তেমন একটি সমাজ গড়তে তিনি সকলের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বৃহস্পতিবার (২৬ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ কলেজ ময়দানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি পাইকগাছার গদাইপুর ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত পৃথক সমাবেশে এবং ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইলে পথসভায় বক্তৃতা
করেন।
কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমীর আরও বলেন, মা-বোনদেরকে জামায়াত ভীতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথেই মা-বোনেরা দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবে। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলতে কোন বাক্য এদেশে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই মিলেমিশেই দেশ গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ কোন গোষ্ঠী নয়, বরং ‘প্রত্যেকেই আমরা একেকজন যোদ্ধা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আওয়ামীলীগ আমলের তিনটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতের আমীর বলেন, ১৪ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন, ১৮ সালে হয় নিশিরাতের নির্বাচন আর ২৪ সালে হয় ডামি নির্বাচন। সুতরাং এমন নির্বাচন আর দেশবাসী দেখতে চায়না। ডামি নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু এদেশের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের সে অপশাসন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করেছেন। আ’লীগ দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীীত দমন কমিশন এমনকি শিক্ষা ব্যবস্থা সব ধংস করেছে। মেয়েদের ইজ্জতের কোন গ্যারান্টি ছিল না। এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ ফুসে উঠেছিল। রংপুরের আবু সাইদের মত অসংখ্য ছাত্র-জনতার বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ এদেশের মালিক ছিল না। তারা দেশের মালিক থাকলে দেশ ছেড়ে পালাতো না। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে পালায় না, বরং ভাড়াটিয়া খেলাপি হলে পালিয়ে যায়। আওয়ামীলীগের বেলায়ও তাই হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে গেলেও দেশকে শান্তিতে রাখতে দিচ্ছে না। চারিদিকে ষড়যন্ত্রের আগুন জ্বলছে। তিনি বলেন, আমাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বলি আওয়ামীলীগের ওপর সুবিচার করা হোক। কেননা তাদের ওপর সুবিচার করা হলেও তাদের শাস্তি হবে। তাদের বিচার হতে এজন্য যে, আর যেন কেউ এমন দুর্বৃত্ত না হতে পারে।
আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের সন্তানরা। তাদের সে মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের আমীর। সামবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল। উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা শেখ সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় আমন্ত্রিত অতিথি থাকবেন খুলনা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গাওসুল আযম হাদী, খুলনা উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ ও সেক্রেটারি আবু ইউসুফ ফকির। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোঃ মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সাবেক কেন্দ্রীয় কম৪র্৬পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল। উপজেলা আমীর মাওলানা সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. আলতাফ হোসেনের পরিচালনায় আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দি, খুলনা জেলা নাযেবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার ও অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, অধ্যক্ষ গাওসুল আযম হাদী, খুলনা দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আবুজার আল গিফারী, নায়েবে আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম, যুব বিভাগের সভাপতি মাওলানা সুজাউদ্দিন, সেক্রেটারি মোনায়েম বিল্লাহ, কয়রা উপজেলা ছাত্র শিবির সভাপতি শামিউল ইসলাম, সেক্রেটারি আসমতউল্লাহ, আব্দুল আজিজ, হাফেজ মাওলানা হোসাইন আহমদ।
সকালে তিনি পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। এসময় তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতের হাতে ইজারা দিয়েছিলেন। তিনি(শেখ হাসিনা) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন, ভারতের সেবাদাসী। ভারতে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা শেখ হাসিনাকে বৈধভাবে না অবৈধভাবে আশ্রয় দিয়েছেন সেটি বিশ্ব দেখবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করেন কেন ?’।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা দেশের জনগনকে আগেই ভুলে গিয়েছিলেন। সর্বশেষ তার দলের নেতাকর্মীদের দু:খের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন। তাদের(আ’লীগের) উন্নয়ন ছিল মুখে মুখে। উন্নয়নের মহাসড়ক আর রোল মডেল দেশ নয়, বরং উন্নয়ন হয়েছিল আওয়ামীলীগের। তারা দেশকে একটি কবরস্থানে পরিণত করেছিল। যেখানে মানুষের হাসি কান্না দেখা যায় না। শুধু একটি গোষ্ঠি নয়, বরং একটি পরিবারকে জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল আওয়ামীলীগ।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত যেসব গুম, খুন, হত্যা, গণহত্যা করা হয়েছে সব খুনের বিচার জনগণ চায়। সেনাবাহিনী ও বিডিআর হত্যা, আয়নাঘরের হত্যা, জামায়াত নেতাদের হত্যা সর্বশেষ ছাত্র-জনতাকে গণহত্যা সব হত্যার বিচার করতে হবে। সকাল সাড়ে সাতটায় তিনি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল মোড়ে ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। এসময় তিনি বলেন, যারা গণহত্যা করেছে তাদের এ দেশের রাজনীতি করার অধিকার নেই। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী এদেশে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যে সমাজে খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতিসহ কোন অনিয়ম থাকবে না। আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারা দেশকে না সাজিয়ে নিজেদেরকে নিজেদেরকে সাজিয়েছে। সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তারা একটি সার্কাস পার্টি। সংসদে প্রতি মিনিটে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে জনগনের জন্য কথা না বলে গান গেয়েছে। তারা এমন রাজনীতি করেছে যে রাজনীতির কারনে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের আপীলেট ডিভিশনের বিচারপতি পালানোর সময় মানুষ তাকে কলাপাতায় আবিষ্কার করেছে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সকলকে পথ চলার আহবান জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, ওরা যা করেছে আমরা তা করবো না। ফজরের পর থেকে শুরু হওয়া এ পথসভায় মুহূর্তের মধ্যেই জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ।
এসব কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার দেশবাসীকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ গঠনে আল কুরআনের রাজ কায়েমে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি বলেন, আগামী দিনের নির্বাচন আন্দোলনে দক্ষিণ খুলনা একটি মডেল স্থাপন করবে। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনায় তিনি জাতীয় ঐক্যের আহবান জানান। আবু সাইদ, মুগ্ধ, রায়হানরা বুলেটের কাছে বুক পেতে দিয়ে যেমন ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছে তেমনি তাদের সকল ষড়যন্ত্র রুখতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কয়রা-পাইকগাছার জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এসময় জামায়াতের আমীরের উদ্দেশে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। তিনি সুন্দরবনের সুরক্ষা, কয়রায় একশ’ শয্যার হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংকের শাখা স্থাপনের দাবি জানান। সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আপনাদের সাথেই ছিলাম এবং সামনের দিনগুলোতে আপনাদের সাথেই থাকতে চাই। মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, আল কুরআনের সমাজ গঠনের জন্যই আমরা আন্দোলন করি।