খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির মৃত চার সদস্যের কল্যাণ ফান্ডের ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাত

সাইফুল, তারা ও ইকবালের সদস্য পদ বাতিল
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান : খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির মৃত চার সদস্যের কল্যাণ ফান্ডের ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়েছে। খোদ সমিতির শীর্ষ কর্তা-ব্যক্তিরাই পরস্পর যোগসাজসে বিপুল এ অর্থ আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, মৃত সদস্যের কল্যাণ ফান্ডের ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো সাইফুল ইসলাম এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিক মাহমুদ তারা ও কে এম ইকবালের সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। সোমবার অনুষ্ঠিত আইনজীবি সমিতির সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সমিতির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শেখ নুরুল হাসান রুবা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো সাইফুল ইসলাম এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিক মাহমুদ তারা ও কে এম ইকবাল পরস্পর যোগসাজসে সমিতির মৃত সদস্য আইনজীবী মো. আব্দুল মাজেদ, মো. হাসানুজ্জামান, জামিলা খাতুন ও শাহিনা বানু’র কল্যাণ ফান্ডের ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ অভিযোগে তাদের সমিতির সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। তবে এর আগে মৃত সদস্য আইনজীবী মো. আব্দুল মাজেদের ৯ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো সাইফুল ইসলাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক কে এম ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এখন বাকি তিন জন সদস্যের অর্থ আত্মসাতের বিষয়েও মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে মৃত আইনজীবীর ৯ লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। গত ২৭ ডিসেম্বর আইনজীবী সমিতির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শেখ নুরুল হাসান রুবা খুলনা থানায় এ মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক কেএম ইকবাল হোসেন। বাদী অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, একতরফা ভোটের মাধ্যমে সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কেএম ইকবাল হোসেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মৃত্যুর পর তার পরিবারের সহায়তার জন্য সমিতির সদস্যরা কল্যাণ তহবিল থেকে গঠনতন্ত্রের স্লাব অনুযায়ী তাদের কল্যাণার্থী মৃত ব্যক্তির ওয়ারেশগণকে অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে।
২০২১ সালের ১৫ জুলাই আইনজীবী মো. আব্দুল মাজেদের মৃত্যু হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মৃত আইনজীবীর ৯ লাখ টাকা পাওনা হয়। সমিতির ভাউচার, ক্যাশ বুক ও লেজার খাতায় দেখা যায় ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বরে মৃত আইনজীবীর ওয়ারেশদেরকে কল্যাণ তহবিল থেকে ৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের কোনো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। জালিয়াতির মাধ্যমে সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক টাকা আত্মসাৎ করে ভুয়া কাগজ তৈরি করে পরিশোধ বলে দেখিয়েছেন।
অভিযোগকারী আইনজীবী সমিতির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শেখ নুরুল হাসান রুবা বলেন, ২০২১ সালের ১৫ জুলাই অ্যাডভোকেট আব্দুল মাজেদ মারা যান। সমিতির আইন অনুযায়ী মৃত আইনজীবীর পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ তহবিল থেকে সাহায্য করা হয়। সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল মৃত আইনজীবীর পরিবারকে ৯ টাকা দেওয়া হয়েছে- এমন কাগজপত্র সমিতিতে দেখালেও তাদের কোনো টাকা তিনি পরিশোধ করেনি। তারা এ বছরের ৭ অক্টোবর কোনো টাকা পায়নি বলে সমিতিতে আবেদন করেন। এ ঘটনায় তিনি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ৭৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করা হয়। ২৮ আগস্ট খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন সমিতির সদস্য সচিব নুরুল হাসান রুবা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আইনজীবী সমিতির সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক তারিক মাহমুদ তারা ও কে এম ইকবাল হোসেন, সাবেক সভাপতি কাজী বাদশা মিয়া ও সাইফুলের ক্যাশিয়ার ইসতিয়াক।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আইনজীবীদের জন্য ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর বিশেষ কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়। সেই টাকা দিয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়ী স্কিম করে টাকা জমা দেওয়া শুরু হয়। সাড়ে ৩ বছরে সেখানে ৩ কোটি ৮০ লাখ ২৬ হাজার ৫১২ টাকা জমা হয়। সেই ব্যাংক হিসাব ভেঙে ফেলে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন আসামিরা। এরপর ২ কোটি ৪০ হাজার ৪৪০ টাকা আইনজীবীদের মাঝে বণ্টন করেন এবং এক কোটি টাকার একটি এফডিআর করেন। বাকি ৭৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬০ টাকা তারা আত্মসাৎ করেছেন। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভায় ১৩ আগস্ট এ বিষয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।
খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০২০ সাল থেকেই আইনজীবী সমিতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। আর্থিক দুর্নীতিসহ অ্যাডভোকেটদের ওপর নির্যাতনেরও অভিযোগের পাহাড় রয়েছে তার বিরুদ্ধে।