দৌলতপুর মা’দের সেবায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাবলা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক

# এক বছরে ৫৯৭ গর্ভবতী মাকে ‘স্বাস্থ্যসেবা’ প্রদান #
# বিনামূল্য পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে
# কিশোর-কিশোরীদের কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা সর্ম্পকে কাউন্সিলিং করা হচ্ছে #
মো. আশিকুর রহমান : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের অর্ন্তভূক্ত খুলনা দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ন্ত্রিত দৌলতপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাবলা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে সেবা গ্রহীতারা। দৌলতপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ১৯৯১ সালে স্থাপিত। এতদাঞ্চলের সল্প আয়ের মানুষের পরিমিত স্বাস্থ্য সেবার প্রদানের অঙ্গিকার নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ন্ত্রিত মোট ১২টি ইউনিয়নে গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, বিনামূল্য জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রী বিতরনসহ কিশোর-কিশোরীদের কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। ওই ইউনিয়ন গুলো হলো দিঘলিয়া, সেনহাটি, গাজীরহাট, বারাকপুর, আড়ংঘাটা, যোগীপোল, কেসিসি এলাকার বয়রা, গোয়ালপাড়া, উত্তর খালিশপুর, দক্ষিন খালিশপুর, মহেশ^রপাশা ও পাবলা। ওই ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে দিঘলিয়া, বারাকপুর, গাজীরহাট ও আড়ংঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসব সেবাও প্রদান করা হয়। ওই ধারাবাহিকতায় নগরীর দৌলতপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপশাখা পাবলা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে প্রতিমাসে ৪০ জন করে চলতি বছরে ৪৮০ জন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সেবা প্রদানের কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করেন। ওই কর্ম পরিকল্পনা অনুসারে চলতি বছরে ৪৮০ জন গর্ভবর্তী মায়ের গর্ভকালীন সেবা প্রদান করার কথা থাকলে প্রতিষ্ঠানটি সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সেবা প্রদান করেছেন ৫৯৭জন গর্ভবর্তীর। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটি প্রসব পরবর্তীকালীন সেবা দিয়েছেন ১৩৪ জন মায়ের ও নবজাতকের।
গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সেবা দিতে প্রথমেই গর্ভবতী মাকে গর্ভীকালীন একটি নিবন্ধনসহ গর্ভবতী সেবা কার্ড প্রদান করা হয়। এরপর স্বাস্থ্য সেবা হিসাবে গর্ভের ৪ মাসের মধ্যে প্রথম চেক-আপ, গর্ভের ৬ মাসের মধ্যে ২য় চেক-আপ, গর্ভের ৮ মাসের মধ্যে ৩য় চেক-আপ এবং গর্ভের ৯ মাসের মাসে সর্বশেষ ৪র্থ চেক-আপ করা হয়।
চেক-আপের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় মেডিসিন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তাও প্রয়োগের পরামর্শ প্রদান করা হয়। গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষনিক দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্র বা খুলনার কোনো সরকারি হাসপাতালে রেফার করা হয়। প্রত্যেক গর্ভবতী মাকে নিরাপদ ডেলিভারি (প্রসব)’র জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। একই সাথে প্রসব পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণরোধে মাকে এক ডোজ মিসোপ্রোস্টল ও নবজাতকের নাভি সংক্রমনরোধে ৭.১% ক্লোরোহেক্্িরডিন বিনামূল্য ওই গর্ভবতী মাকে গর্ভের ৭ মাসে বা ৩য় চেক-আপের সময়ে প্রদান করা হয়। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্য পরিবার পরিকল্পনা জন্মনিয়ন্ত্রনে সামগ্রী বিতরণসহ কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়েও কাউন্সিলিং করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও পরিবার কল্যান সহকারীসহ এক জনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সেবা গ্রহনকারী গর্ভবতী আড়ংঘাটা থানাধীন গাইকুড় এলাকার বাসিন্দা ফারজানা জানান, আমি দৌলতপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপশাখা পাবলা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক হতে গর্ভকালীন চেকআপসহ অন্যান্য সেবা পেয়েছি। ওখানকার সবাই অত্যন্ত আন্তরিক। সেবার মান খুব ভালো। সেবা গ্রহনকারী যোগীপোল ইউনিয়নের ফুলবাড়ীগেট এলাকার বাসিন্দা গর্ভবতী ইরানীর আম্মা ইয়াসমিন জানান, দৌলতপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপশাখা পাবলা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকের সেবার মান খুবই ভালো। জানুয়ারী মাসে আমার মেয়ের সম্ভাব্য ডেলিভারী ডেট। সব সময় ওই ক্লিনিকের স্টাফরা নিয়মিত খোজ খবর নেন। ওখান হতে ওষুধ, চেক-আপসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে।
এব্যাপারে দৌলতপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাবলা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক অনুপ কুমার কুন্ডু জানান, মাঠ পর্যায়ে পরিবার কল্যান সহকারি নিয়মিত দম্পতি পরিদর্শনের কাজ করেন। ওই কর্মী গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবার খোজ খবরসহ পরিবার পরিকল্পনার কাজ করে থাকে। নিয়মিত তাদের সাথে থেকে সকল কাজ তত্ত্ববধায়ন করে থাকি এবং গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত ক্লিনিকে এসে গর্ভকালীন সেবা নেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করি। ক্লিনিক থেকে প্রতি মাসে দৌলতপুরসহ আশপাশের অঞ্চল হতে আসা গর্ভকালীন মা সহ পরিবার পরিকল্পনার পরামর্শসহ সামগ্রী বিনামূল্য বিতরণ করি থাকি। চেষ্টা করি সেবা প্রত্যাশিদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করার। তবে যদি আমাদের ক্লিনিকটি অবকাঠামো সংস্কারসহ পরিসরটি বড় হলে সেবা প্রত্যাশা স্বাচ্ছন্দে সেবা নিতে পারবে বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাবলা ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকের পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা সামছুন নাহার জানান, আমার এই ক্লিনিক হতে চলতি বছরের জানুয়ারী মাস হতে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ৫৯৭ জন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সেবা প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে পরিবার পরিকল্পনা সেবাও প্রদান করা হচ্ছে। সাথে সাথে কিশোর কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপারে কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। চেষ্টা করছি এই সেবা কেন্দ্র হতে দৌলতপুরসহ আশপাশের অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা যেন নিশ্চিত করা যায়। এ ব্যাপারে দিঘলিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পলাশ কুমার বিশ^াস জানান, দিঘলিয়া উপজেলার অধিনে ১২টি ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবাসহ বিনামূল্য জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রী বিতরণ করা হয়ে থাকে। পরিবার কল্যান পরিদর্শিকার সংকট, জন্ম নিয়ন্ত্রন সামগ্রী সংকট ও পাবলা পরিবার পরিকল্পনা জরার্জীন ভবনের সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতি উত্তরে মুঠো ফোনে জানান, পরিবার কল্যান পরিদর্শিকার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিছুদিন আগেও জন্ম নিয়ন্ত্রন সামগ্রীর সংকট থাকলে বর্তমানে তা কম, অচিরেই সংকট দূর হবে। জরার্জীন ভবন সংস্কারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে ভবনটি সংস্কার করা হবে।