স্থানীয় সংবাদ

দিঘলিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রিলে পদ্ধতিতে সরিষা চাষ

সৈয়দ জাহিদুজ্জামান, দিঘলিয়া খুলনা থেকে ঃ
রিলে বা সাথীপদ্ধতি বর্তমান সময়ে অনেকের কাছে নতুন মনে হলেও দিন দিন জনপ্রিয় এ পদ্ধতিটার কদর বাড়ছে। কম খরচে কম সময়ে ভালো উৎপাদন হওয়ায় কৃষক এ পদ্ধতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। রিলে পদ্ধতির ফলে দুই ফসলি জমি এখন তিন ফসলিজমিতে রূপান্তর হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দিঘলিয়া উপজেলায় রিলে বা সাথী পদ্ধতিতে চাষাবাদ বেড়েছে। এ পদ্ধতিতে মূলত আমন ধানের সঙ্গে উন্নত জাতের সরিষা চাষাবাদ করা হয়। গত বছরের তুলনায় রিলে পদ্ধতিতে এবার দ্বিগুণ সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। তাই ভালো ফলনেরও স্বপ্ন বুনছেন কৃষক। এ পদ্ধতিতে একটি ফসল জমিতে থাকাকালীন বিনা চাষে অন্য একটি ফসল আবাদ করা যায়। এ জন্য অর্থ, পরিশ্রম ও সময় সাশ্রয় হয়। একটি ফসল ওঠার আগে ওই জমিতে আরেকটি ফসল বপন করাকে সাধারণত ‘রিলে বা সাথীপদ্ধতি’ বলা হয়। রিলে পদ্ধতিতে মূলত আমন ধানের সঙ্গে উন্নত জাতের সরিষা চাষাবাদ করা হয়। এই পদ্ধতিতে আমন ধান কাটার আগেই ওই জমিতে সরিষার বীজ বপন করেন কৃষকরা। এ সরিষা ঘরে তুলে আবারও নতুন করে বোরো ধান রোপণ করতে পারেন। ফলে আগে যারা শুধু আমন ও বোরো ধান চাষ করতেন, তাদের জমিতে রিলেপদ্ধতি অনুসরণ করে বিনা চাষে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ করতে পারছেন। এতে খরচ এবং পরিশ্রম অনেক কম হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। দিঘলিয়া কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত মৌসুমে দিঘলিয়া উপজেলায় ১২০ হেক্টরের বেশী জমিতে রিলে বারি-১৪ জাতের সরিষার চাষ করা হয়েছিল। এ বছর দিঘলিয়ায় শেষ মৌসুমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকের আমন ধান রোপনে বিলম্বিত হওয়ায় এ বছর ১২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ সম্ভব হয়েছে। এ বছর ব্রহ্মগাতী দাসপাড়া মাঠে রিলে পদ্ধতিতে ৪০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা কাটিয়ে সরিষা আবাদ করা সম্ভব হয়েছে। কৃষি দপ্তর থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে বারি-৯ জাতের সরিষা বীজ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর আমন ধান পাকার আগ মুহূর্তে কৃষকদের বেশি জমিতে সরিষা চাষের মাধ্যমে এ অঞ্চলে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি করে ক্রমবর্ধমান চাহিদার পাশাপাশি তেল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে জরালো পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হবে। আগামীতে ১৫০ হেক্টর জমিতে রিলে পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল কম সময়ে, সাশ্রয়ী খরচে বিনা চাষে বোরো আবাদের আগ মুহূর্তে বারি-১৪/বারি-৯ জাতের সরিষা চাষের প্লান গ্রহণ করে মাঠে কাজ করা হবে ইনশাআল্লাহ। উপজেলার ব্রহ্মগাতী গ্রামের কৃষক অজয় চন্দ্র দাস এ প্রতিবেদককে বলেন, আগে শুধু আমন ও বোরো ধানের আবাদ হতো, এখন সেই জমিতে আমনের ভেতর সরিষার বীজ ছিটিয়ে আরেকটি ফসল আবাদ করা হচ্ছে। ব্রহ্মগাতী গ্রামের বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, আমন ধান কাটার আগেই সরিষার বীজ বুনি। এ কাজে আমাদের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন ও মোঃ কামরুজ্জামান স্যার সহযোগিতা করেন। রিলে পদ্ধতিতে সরিষার ভালো ফলন দেখে এলাকার অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। দিঘলিয়া উপজেলার ব্রহ্মগাতী গ্রামের কৃষক মোঃ লিটন শেখ বলেন, রিলে পদ্ধতিতে সরিষা চাষে তেমন কোনো খরচ নেই, লাভও হয় বেশি। কৃষক রিলে পদ্ধতিতে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ বলেন, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় রিলে পদ্ধতিতে উন্নত জাতের বারি সরিষা-১৪ চাষাবাদ দিঘলিয়ায় বেশ সাড়া ফেলেছে। এতে করে একই জমিতে রোপা আমন ধানের পাশাপাশি সরিষা চাষ হচ্ছে। আমন ধান কাটার আগেই ওই জমিতে উন্নত জাতের সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ধানকাটা শেষ হলে সরিষা গাছ বড় হয়ে যায়। এতে নতুন করে জমিতে চাষ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। সাধারণভাবে সরিষা চাষাবাদের চেয়ে রিলে পদ্ধতির সরিষা আগে ঘরে তুলতে পারেন কৃষক। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা রিলে পদ্ধতির চাষাবাদ সম্পর্কে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে সরিষার ফলন ভালো হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button