ড. মিজানুর রহমান আজহারীর বক্তব্য শুনতে মানুষের ঢল

# যশোরে শেষ হলো তিনদিনের তাফসিরুল কোরআন মাহফিল #
মোঃ মোকাদ্দেছুর রহমান রকি যশোর থেকে ঃ যশোরে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিনদিন ব্যাপি তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে। যশোর শহরতলীর পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত এ মাহফিলে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে শেষ দিনে পা ফেলার জায়গা ছিল মাহফিল থেকে বেশ দূরে আশপাশে। শুক্রবার ৩ জানুয়ারী আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারীর বক্তব্য শোনার জন্য মুসল্লিদের আগ্রহ বেশি ছিল। শেষ দিনে সন্ধ্যার পর মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক, মহাসড়কেও শিশু, নারী, পুরুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসা শুরু করে। দুপুরের পর যশোর বেনাপোল সড়কসহ আশপাশের ছোটখাটো সড়কে যানজট শুরু হয়। এজন্য অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মিশে যায় পুলেরহাটে। রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতিতে তিনদিনের মাহফিল অনুষ্ঠিত হল।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকেই যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরা, যশোর-খুলনা মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ধরে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি শহরতলীর পুলেরহাটের অভিমুখে রওনা হয়েছে। দুপুরের পর সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়ে। বাসের পাশাপাশি ট্রাক, মাইক্রো, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে মানুষ গন্তব্যে রওনা হন। এছাড়াও ট্রেনে চড়েও অনেকে যশোর স্টেশনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে, যানবাহনে চড়ে অনেকে গন্তব্যে যান। গোটা শহরতলীতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সন্ধ্যার পর পায়ে হাঁটা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। অনেকেই মূল অনুষ্ঠানে স্থলে পৌঁছাতে পারেনি। দূর থেকেই বক্তব্য শুনতে হয়েছে।
শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে আসা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গাড়ি পাচ্ছি না। তাই আমরা দল বেঁধে হাঁটা শুরু করেছি। ওয়াজ শুনতে যাচ্ছি। রাস্তায় প্রচন্ড ভিড়। জানি না কতদূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো।
শহরের সার্কিট হাউজের সামনে মুজিব সড়কে পথচারি রহিমা বেগম বলেন, কোর্টের মোড় থেকে যানজট শুরু হয়েছে। সামনে যত যাচ্ছি, ততই ভিড়। পুলেরহাট এখনো অনেকদূর। মাহফিলের জায়গায় পৌঁছাতে পারবো কিনা জানিনা।
শহরের রেলগেট এলাকায় যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা ইজিবাইকের যাত্রি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আজহারী সাহেব আসছেন শুনে এসেছি। মাহফিলে যাচ্ছি। কিন্তু পথে প্রচন্ড জ্যামের আটকে আছি। খুব ধীরে যাচ্ছে যানবাহন। রোডে প্রচুর মানুষের ভিড়।’
মনিরামপুর থেকে মাহফিল শুনতে আসা মিলন রহমান বলেন, গতকাল শহরে বোনের বাড়ি এসেছি মাহফিল শুনতে যাবো বলে। হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি। ওদিকে গাড়ি যাচ্ছে না। আজহারির ওয়াজ ইন্টারনেটে অনেক শুনেছি। সরাসরি একটু দেখার ইচ্ছা তাই যাচ্ছি।
লিমন হোসেন নামে এক রিকসা চালক বলেন, চাঁচড়া পুলেরহাটের দিকে রিকসা নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। অনেক লোকের ভিড়। দুপুরের পর থেকে রিকসা নিয়ে ডালমিল পার হতে পারিনি। এখন যাত্রীরা সব হেঁটে যাচ্ছে। রেলগেট পার হলেই আর সামনে আগানো যাচ্ছে না।
নাসিমা খাতুন নামে একজন বলেন, ছেলে মেয়ে সাথে নিয়ে মাহফিল শুনতে যাচ্ছি পুলেরহাট। আজ শেষ দিন মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ শুনবো বলে যাচ্ছি। পিঁপড়ার সারির মত লোক লাইন দিয়ে যাচ্ছে। শহরে যারা থাকে তাদের বাড়ি দূর দূরন্ত থেকে মেহমান এসেছে ওয়াজ মাহফিল শোনার জন্য। মাহফিলে যাচ্ছি প্রিয় বক্তার জ্ঞান গর্ব আলোচনা শোনার জন্য।
শহর ও শহরতলীর প্রায় প্রত্যেকটি সড়ক মহাসড়ের চিত্র একই। শহরের চাঁচড়া মোড় থেকে পুলেরহাট অভিমুখে সবচেয়ে বেশি মানুষের ঢল নামে। এসব সড়কের মানুষের ভোগান্তিও ছিল চোখে পড়ার মত।
এদিকে, মাহফিল উপলক্ষে চারদিন ব্যাপী ইসলামী বই মেলা ও প্রদর্শনী করা হয়েছে। মেলায় ২২টি স্টল রয়েছে। একই সাথে ছিল শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’।
আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের মানব সম্পদ কর্মকর্তা জাহেদ হোসাইন জানান, আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন শুধু ওয়াজ মাহফিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেনি। এখানে ইসলামী কৃষ্টিকালচার তুলে ধরা হয়। দেশের প্রখ্যাত লেখকদের বই পাওয়া যায় বই মেলার স্টলে। গার্ডিয়ান, সত্যায়ন, বিন্দু, সিয়ানসহ ২২টি প্রকাশনী এখানে স্টল নেয়। পড়াশোনার অভ্যাসের জন্য এ বই মেলার আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে শুধু ওয়াজ মাহফিল নয়; এখানে হজ্বের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিনোদনেরও ব্যবস্থা ছিল।
আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের পাবলিক রিলেশনস অফিসার তরিকুল ইসলাম তারেক সাংবাদিকদের জানান, দেশের প্রখ্যাত ৬ জন আলেম নিয়ে এটাই প্রথম কোন বড় অনুষ্ঠান। এ ব্যতিক্রমী আয়োজনে জন্য আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ১৫০ বিঘা জমিসহ আশেপাশের আরও ২০০ থেকে ৩০০ বিঘা জমি জুড়ে এ মাহফিলে মাঠ ব্যবহার করা হয়। ৮-১০ লাখ লোকের জন্য আলো, পানি বাথরুম ও ওযু খানার ব্যবস্থা ছিল। ২০টি এলইডি স্কিন মাধ্যমে লাইভ দেখানো হয়। মূল মাঠসহ আশেপাশে ৪টি মাঠে ছিল এ এলইডি স্কিন। এছাড়া বিশেষ করে নারীদের বসার জন্য পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলেরহাট বালিকা বিদ্যালয় এবং আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ গেট এলাকায় স্থান করা হয়।