খুলনা ওয়াসায় চোর সিন্ডিকেট সক্রিয়

দু’ আঞ্চলিক অফিস থেকেই ১২ শতাধিক মিটার চুরি
নেপথ্যে আউট সোর্সিং ও নিরাপত্তারক্ষিদের যোগসাজস!
স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা ওয়াসায় চোর সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেট যেন প্রতিযোগিতা করে চুরি করছে ওয়াসা’র সম্পদ-মালামাল। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির দু’টি আঞ্চলিক অফিস থেকেই ১২ শতাধিক পানির মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর নেপথ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত আউট সোর্সিং কর্মচারি ও নিরাপত্তারক্ষিদের যোগসাজসের বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জণ চলছে। ফলে অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, মিটার চুরির পাশাপাশি অন্যান্য মালামাল চুরিরও তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অফিস থেকে ফ্যান চুরি করতে যেয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়ে আউট সোর্সিং নিরাপত্তাকর্মী আবু হেনা আকুঞ্জিকে আটক করে অব্যহতি দেওয়া হয়।
অপরদিকে, চুরির বিষয়টি ওয়াসা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করলেও শুধুমাত্র থানায় জিডি এবং তদন্তের মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রেখেছেন। দীর্ঘ দিন ধরে এ ধরণের ঘটনা অব্যাহত থাকলেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকেই আইনের আওতায় আনা হয়নি।
ওয়াসার একাধিক সূত্র ও থানায় দাখিলকৃত জিডি’র থেকে জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসে ওয়াসার খালিশপুরস্থ চরেরহাট আঞ্চলিক অফিস থেকে ৭৬৬টি পানির মিটার চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। ঘটনার প্রায় দু’ মাস পার হতে চললেও বিষয়টি শুধুমাত্র তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। চুরি হওয়া মিটার উদ্ধার বা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী ও ‘খ’ অঞ্চলের আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. আশেকুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সম্প্রতি দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশায় ওয়াসার আঞ্চলিক অফিস থেকে ৫শতাধিক মিটার চুরির ঘটনা ধরা পড়েছে। এ ঘটনায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিক্রম দাস দৌলতপুর থানায় জিডি করেছেন। কিন্তু ফলাফল শুণ্য, এর দায় কাউকেই নিতে হয়নি। সনাক্ত করা যায়নি কাউকে।
এ বিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিক্রম দাস বলেন, তালাবদ্ধ ছিল রুমটি। তালা ভাঙ্গা হয়নি, কিন্তু চুরি হয়েছে। অফিসে পিয়ন ও নিরাপত্তারক্ষি দায়িত্ব পালন করে। বিষয়টি তারাও স্বীকার করেনি। ফলে কারা, কিভাবে চুরি করেছে-এটি কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবেন।
অপর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ওয়াসার হাদিস পার্ক সংলগ্ন অফিস থেকে ফ্যান চুরি করতে যেয়ে নিরাপত্তাকর্মী আবু হেনা আকুনজি আটক হন। পরে তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এর আগে গত মাসে নগরীর জোড়াগেটস্থ খুলনা ওয়াসার প্রধান ভবন থেকে বাউন্ডারি ওয়ালের উপর নবনির্মিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অ্যাঙ্গেল চুরি করে নিয়ে যায় চোর সিন্ডিকেট। এভাবে একের পর এক খুলনা ওয়াসার অফিস থেকে মালামাল চুরি হচ্ছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ওয়াসাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বেশিরভাগ নিরাপত্তাকর্মী খুলনা ওয়াসার প্রাক্তণ বোর্ড সদস্য ও সাবেক কাউন্সিলর পারভিন আক্তার এবং তার ভাই খুলনা ওয়াসার কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ বিল্লাল হোসেনের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিবাদী ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করে খুলনা ওয়াসার প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ পিইঞজ এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তাদের নিয়োগকৃত বেশিরভাগ নিরাপত্তা কর্মীই ওয়াসার বিভিন্ন অফিস ও পানির রিজার্ভার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। তাদের নিয়োগকৃত নিরাপত্তাকর্মীদের কর্মে গাফিলতি ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খুলনা ওয়াসার অফিস থেকে একের পর এক চুরি সংগঠিত করা হচ্ছে। ওয়াসার চোর চক্রের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
ওয়াসার বিভিন্ন অফিসে চুরির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনা ওয়াসার হাদিস পার্ক সংলগ্ন অফিসের একটি ফ্যান দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী আবু হেনা আকুঞ্জির ব্যাগে পাওয়া যায়। এ কারণে সে আউট সোর্সিং কর্মী হওয়ায় তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এছাড়া অন্যান্য চুরির ঘটনাগুলোর বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।