‘খুলনা’ শিশু হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বাড়ছে

# সর্বশেষ তথ্যানুসারে হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তিকৃত শিশু রোগীর সংখ্যা ২০৩ জন #
# নতুন ভর্তি ২৭ জন, যার মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৪ জন, সুস্থ হয়ে বাড়ীতে ফিরে গেছেন ৫২ জন শিশু #
# এ সময়ে শিশুর সুস্থতায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহনসহ পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের #
মোঃ আশিকুর রহমান : সম্প্রতি খুলনা বিভাগ দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তীব্র শীতে জবুথবু খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন জনপথ। কনকনে ঠান্ডার কারণে অনেকটাই বিপর্যস্ত জনজীবন। বিশেষ করে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, ভারী কুয়াশা বিরাজ ও সূর্যের উপস্থিতি কম থাকায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। খুলনায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে, যে কারণে ডায়রিয়ায় প্রবণতা ব্যাপক আকারে বেড়েছে।। পাশাপাশি তীব্র শীতের কারণে শিশুরা জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায়ও আক্রান্ত হচ্ছে। প্র্রতিদিনই খুলনার আশপাশের জেলা শহর, বাগেরহাট, মংলা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, নড়াইল কালিয়া, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, যশোরসহ খুলনার স্থানীয় অঞ্চল হতে ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে খুলনা শিশু হাসপাতালসহ খুলনার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে হাজির হচ্ছেন রোগাক্রান্ত শিশুর স্বজনেরা। তবে বর্তমানে শিশু হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের বাড়তি যতœ নেওয়ার পাশাপাশি খাবার স্যালাইন খাওয়ানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা, ওষুধ প্রয়োগসহ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চলার পরামর্শ দিয়েছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা।
খুলনা শিশু হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিশু হাসপাতালের আন্তঃ বিভাগের শয্যা রয়েছে ২৬১টি। রবিবার (৫ জানুয়ারী) বিকাল ৪টা পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্যনুসারে হাসপাতালে আন্তঃ বিভাগে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ২৭ জন। যার মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ১৪ জন। এছাড়া জ্বর, সর্দি, কাঁশি, শ্বাসকষ্ট (ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত) রোগী ভর্তি হয়েছে ১৩ জন। সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন ৫২ জন রোগী বলে নিশ্চিত করেছেন ভর্তি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নাসরিন সুলতানা। অপরদিকে, একই দিনে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্যনুসারে বর্হিবিভাগে ৩৪১ জন অসুস্থ শিশুকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে শিশু রোগীরা ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রবণতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলে জানিয়েছেন সংশিষ্টরা। তবে বর্তমানে শিশু হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা বেশি আসছেন বলে জানা গেছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর পানি শূন্যতা থাকলে ভর্তি করা হচ্ছে। পানি শূন্যতা না থাকলে মুখে খাবার স্যালাইন চালিয়ে যাওয়াসহ ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সাথে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের খাবার স্যালাইন খাওয়ানো পাশাপাশি বাড়তি যতœ নেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি খেয়াল রাখা, ওষুধ প্রয়োগসহ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রবিবার ( ৫ জানুয়ারী) দুপুরে খুলনা শিশু হাসপাতালে গিয়ে ঘুরে দেখা গেছে, খুলনার স্থানীয় অঞ্চল হতে বর্হিবিভাগে সর্দি, কাশি, জ্বর ও ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছেন একাধিক রোগাক্রান্ত শিশুর অভিভাবক। একই সাথে আন্তঃবিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, খুলনাসহ আশপাশের জেলা শহর হতে আসা শিশু রোগী কোল্ড ডায়রিয়াসহ জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। তবে বর্তমানে হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।
সাতক্ষীরা সদর হতে আসা আন্তঃ বিভাগে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীর অভিভাবক সাদিয়া জানান, গত মাসের ৩১ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বাচ্চা জ্বর, সর্দি, কাশিসহ পাতলা পায়খানায় ভুগছিল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। বাচ্চা এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ। পায়খানা কমে গিয়েছে। ডাক্তারা নিয়মিত আসেন। হাসপাতালে চিকিৎসার মান খুবই ভালো।
নড়াইল জেলা হতে আসা আন্তঃবিভাগে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীর অভিভাবক বকুল জানান, আমার বাচ্চার বয়স ৬ মাস। বাচ্চা হঠাৎ করে বমি ও পাতলা পায়খানা করতে শুরু করে। বাচ্চার এমন অসুস্থতা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়ি। অবশেষে শনিবার (৪ জানুয়ারী) রাতে বাচ্চাকে শিশু হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। চিকিৎসা চলছে, এখন বাচ্চা অনেক সুস্থ আছে। হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার মান অনেক ভালো। অপর অভিভাবক নড়াইল কালিয়া হতে আসা ফাতেমা জানান, বাচ্চার বয়স ২ মাস। গত ৩ তারিখ হাসপাতালে বাচ্চাকে নিয়ে ভর্তি হয়েছি। বাচ্চা পাতলা পায়খানা করছিল। হাসপাতালের চিকিৎসায় বাচ্চা এখন অনেক সুস্থ। হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা খুব আন্তরিক। চিকিৎসার মানও খুব ভালো।
খুলনা শিশু হাসপাতালের (পেয়িং-১) এ ব্লকের সেবিকা সালমা খাতুন জানান, বর্তমানে ঠান্ডার কারণে ডায়রিয়া প্রবণতা বেড়েছে। আমার ওয়ার্ডে ১৪ টা বেডের একটাও ফাঁকা থাকছে না। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের খাবার স্যালাইন খাওয়ানোসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে।
খুলনা শিশু হাসপাতালের (আর.এম.ও) ডা. মো.মাজহারুল ইসলাম জানান, ঠান্ডাজনিত কারণে বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী সংখ্যা বেশি। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর পানি শূন্যতা থাকলে ভর্তি করা হচ্ছে। পানি শূন্যতা না থাকলে মুখে খাবার স্যালাইন চালিয়ে যাওয়াসহ চিকিৎসাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের খাবার স্যালাইন খাওয়ানো পাশাপাশি বাড়তি যতœ নেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা, ওষুধ প্রয়োগসহ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সাথে শিশুরা জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলেও চিকিৎসকের সরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।