স্থানীয় সংবাদ

খুলনার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর টিপু কক্সবাজারে খুন

# খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি পরিবারের #
# তার নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে #
# এ ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালুসহ দুইজনকে আটক
# অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে পরিবারের মামলা, নিহত টিপুর লাশ বাড়ীর পথে, পরিবারে চলছে শোকের মাতম ও আহাজারী #

স্টাফ রিপোর্টার ঃ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও জনপ্রিয়তার কারণে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও খুলনা মহানগর স্বেচ্ছা সেবকলীগের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী টিপুকে কক্সবাজারে ডেকে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এমনটাই দাবি নিহতের পরিবারের। নিহত গোলাম রব্বানী টিপু দৌলতপুর থানাধীন দেয়ানা উত্তরপাড়া হোসেন শাহ রোড এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক মো. গোলাম আকবরের পুত্র। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সিগাল পয়েন্টে রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান। ওই ঘটনায় ওই রাতে কেসিসি’র আরেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালুসহ দুইজনকে আটক করেছে র‌্যাব-১৫। চালু নগরীর ১৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, একই সাথে তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া অপরজন মেজবাহ হক ভুট্টো। তিনি কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা।
র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, ইফতেখারকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী সড়কের হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে রাত ১২টার পর আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক বলেন, ইফতেখারসহ নিহত গোলাম রব্বানী টিপু বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজারে আসেন। হোটেল গোল্ডেন হিলের ‘অতিথি লিপিবদ্ধ বই’ এ দেখা গেছে আটক ইফতেখার, নিহত গোলাম রব্বানী টিপুর সাথে রুমি (২৭) নামের এক নারীও সকাল ৭টায় হোটেলে উঠেন। রুমি নামের ওই নারী পলাতক বলে জানান র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক সাজ্জাদ হোসেন। এদিকে হোটেলটির অভ্যর্থনা কক্ষের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ওই নারীসহ নিহত কাউন্সিলর টিপু হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। এরপর রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সী-গালের সামনের ফুটপাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন গোলাম রব্বানী টিপু। নিহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা অটোরিকশাচালক আব্দুস সালাম বাবু জানান, সিগাল পয়েন্টের সামনে কাঠের ব্রিজের পাশে একটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। কিন্তু কে মেরেছে দেখতে পায়নি। তখন চোখে পড়ে এক ব্যক্তি ঢলে পড়ছে। এদিকে, শুক্রবার (১০ জানুয়ারী) দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে নিহত গোলাম রব্বানীর লাশ নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিহত টিপুর খুলনার দৌলতপুরে বাড়ীর উদ্দেশে রওনা করেছে বলে জানা গেছে। নিহত গোলাম রব্বানী টিপু হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামী করে কক্সবাজার মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। নিহত টিপুর ভগ্নিপতি ইউনুস আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। শনিবার ( ১১ জানুয়ারী) সকালে নিহত কাউন্সিল টিপুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে তার এই মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণে গোটা পরিবারে শোকের মাতম ও আহাজারী চলছে। তার অবুঝ দু’টি সন্তান, বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী ভাই-বোন আতœীয় স্বজনেরা শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে। এমন খবরে এলাকাবাসী ছুটে এসে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। নিহতের বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশা জানান, আমাদেরকে কক্সবাজার থানা থেকে ফোন দেয়। আমরা টিপুর আইডিকার্ড ও গুলিবিদ্ধ ছবিগুলো পাই। আমাদের পরিবারের লোকজন বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) রাত ১০/১১টার দিকে কনফার্ম হই যে, সে আততাঁয়ীর গুলিতে নিহত হয়েছে। আমাদের লোকাল প্রশাসন কোন ফোন দেয়নি। আমার ছোট ভগ্নিপতি পুলিশ ইন্সপেক্টর ইউনুসকে পাঠানো হয়েছে ছোট ভাইয়ের লাশ আনতে। যেহেতু আমার ভাই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল, এলাকায় জননন্দিত কাউন্সিলর ছিল। ধারণা করছি, তার এই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তার কারণে টিপুকে কক্সবাজারে ডেকে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহত টিপুর পিতা প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক গোলাম আকবর কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমার ছেলে ছোট বেলার থেকেই পরোপকারী ছিলেন। তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে টিপু ছিলো সেজ। টিপুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, কলেজে পড়ার সময় আমি বই কিনে দিতাম, সেই বই বিক্রি করে দিছে। পরে জানতে পারি সেই টাকা অন্য যারা ভর্তি হতে পারতো না তাদেরকে দিছে। তার মৃত্যুর খবর শুনে এলাকাবাসী মর্মাহত, কাল রাত (বৃহস্পতিবার) থেকেই বহু মানুষ বাড়িতে এসে ভিড় জমাচ্ছে। আমার ছেলে এমন কি অপরাধ করেছে যে, তাকে হত্যা করা হলো। দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক তদন্তপূর্বক আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই। এলাকাবাসী জানায়, টিপু একজন সাদামনের মানুষ ছিলেন। টিপুর শূন্যতা কখনোই পূরণ হবে না। দিন নেই, রাত নেই মানুষের উপকারের জন্য টিপু দিন রাত ছুটে বেড়াতো। মানুষ বিপদে পড়ে ওর কাছে ছুটে গেলে উপকৃত হতো। এমন মানুষ হারিয়ে আমরা সত্যই মর্মাহত। কক্সবাজার মডেল থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান জানান, শুক্রবার (১১ জানুয়ারী) সকাল ১১টার দিকে নিহত সাবেক কাউন্সিলরের ভগ্নিপতি ইউনুস আলী শেখ থানায় আসেন। এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১৮। দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী জানান, নিহত কাউন্সিলর টিপুর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় দু’টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ বিপ্লবী পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা হুজি শহীদ হত্যা মামলা এবং অপরটি মারামারি মামলা। মামলা দু’টি আদালতে বিচারাধীন। উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে দেয়ানা উত্তরপাড়া স্কুল মাঠে জানাযা নামাজ শেষে সরকারি দেয়ানা উত্তরপাড়া সংলগ্ন কৃষি কলেজ কবরখানায় দাফন সম্পন্ন করা হবে বলে পরিবারসূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button