যশোরে গত এক বছরে কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে চিকিৎসা নিয়েছে ১৯,৮১৯জন
মোঃ মোকাদ্দেছুর রহমান রকি যশোর থেকে ঃ গত বছরে যশোর জেলার সদরের পৌরসভাসহ ৮ উপজেলা এলাকায় কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্তর শিকার হয়ে ১৯ হাজার ৮শ’ ১৯জন । যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আক্রান্তকারী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে কুকুরের কামড়ের চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৭শ’ ৪জন ও বিড়াল,ইঁদুর, বানর,হনুমানসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১১ হাজার ১শ’ ১৫জন। আক্রান্ত কারীদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিষেধক ইনজেকশন দেয়া হয়েছে । যশোর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানাগেছে, যশোর জেলা সদর উপজেলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে,অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চৌগাছা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহন করার হিসাব থাকলেও ঝিকরগাছা,শার্শা, মণিরামপুর,কেশবপুর ও বাঘারপাড়া থানা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ের আক্রান্ত নারী,পুরুষ,শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের কোন হিসাব নেই। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন দপ্তর।
সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্রে জানাগেছে,গত বছর ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর জেলার যশোর সদরসহ ৮ উপজেলায় কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৮শ’ ১৯জন। এর মধ্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেছেন ১৫ হাজার ৬শ’ ৮২জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ৭ হাজার ৪শ’ ৮৪জন ও অন্যান্য প্রানীর কামড়ে আক্রান্ত ৮হাজার ১শ’ ৯৮জন। আক্রান্ত রোগীদের শরীরে এআরভি ৪,৯২৭ এ্যাম্পুলের মধ্যে ৪,০১২ এ্যাম্পুল ব্যবহৃত ও মুজত থাকে ৮শ’১৫ এ্যাম্পুল, আরআইজি ১,৫৪৯ এ্যাম্পুলের মধ্যে ১০৪০ এ্যাম্পুল ব্যবহৃত ও মজুত রয়েছে ৫০৯ এ্যাম্পুল। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১ম ডোজ গ্রহন করেন ৫,৪৯৮জন,২য় ডোজ গ্রহন করেন ৫,৩২৬জন,৩য় ডোজ গ্রহন করেন ৫,১৩৮জন ও ৪র্থ ডোজ গ্রহন করেন ১২৬জন। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্তর শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২,৪৭৯জন। এর মধ্যে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫০৮জন ও অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে রোগীর সংখ্যা ১,৯৭১জন। আক্রান্ত রোগীদের শরীরে এআরভি ৪,২৫৬ এ্যাম্পুলের মধ্যে ১,৪৬৮ এ্যাম্পুল ব্যবহৃত ও মজুত থাকে ২৭৮৮ এ্যাম্পুল। আরআইজি ৩৬৪ এ্যাম্পুলের মধ্যে ১৪২ এ্যাম্পুল ব্যবহৃত ও মজুত থাকে ২২২ এ্যাম্পুল। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১ম ডোজ গ্রহন করেন ২৪০৬জন,২য় ডোজ গ্রহন করেন ২২৭৪জন,৩য় ডোজ ২৪৮১জন গ্রহন করে। ৪র্থ ডোজ কেউ নেয়নি। চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুরসহ অন্যান্য প্রানীর কামড়ে আক্রান্তর শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১,৬৫৮জন। এর মধ্যে কুকুরে কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১২জন ও অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৪৬জন। এ উপজেলায় আক্রান্ত রোগীর শরীরে এআরভি ১৫০৮ এ্যাম্পুলের মধ্যে ৫১২ এ্যাম্পুল ব্যবহৃত ও মজুত থাকে ৯৯৬ এ্যাম্পুল। আরআইজি ২৭৬ এ্যাম্পুলের মধ্যে ১৪২ এ্যাম্পুল ব্যবহৃত ও মজুত থাকে ১৩৪ এ্যাম্পুল। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১ম ডোজ গ্রহন করেন ৭৯৪জন,২য় ডোজ গ্রহন করেন ৭২০জন ও ৩য় ডোজ নেন ৫৯৮জন। ৪র্থ ডোজ কেউ গ্রহন করেননি এই উপজেলায়।
বিভিন্ন সূত্রগুলো জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে কুকুর ও অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এ্যাম্পুল মজুত থাকলেও অনেক সময় গরীর রোগীদের দেয়া হয়না। দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুরা কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতাল গুলিতে চিকিৎসা গ্রহন নিতে গেলে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের মধ্যে কতিপয় অনেকে রোগীকে বাইরে থেকে প্রতিষেধক ইনজেকশন কিনে আসতে বলেন। সরকারিভাবে সরবরাহ থাকলেও সংকট দেখিয়ে বাইরে বিভিন্ন ফার্মেসী দোকান থেকে কিনে আসতে বাধ্য করা হয় বলে অনেকে অভিযোগ করেন। সম্প্রতি যশোর পুলিশের এক এএসআই নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন,যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এক গরীব রোগী কুকুরের কামড় খেয়ে চিকিৎসা গ্রহন করতে গেলে তাকে প্রতিষেধক ইনজেকশন সরবরাহ নেই। অথচ ওই সময় একজন ধনী ব্যক্তির আত্মীয় কুকুরের কামড়ে চিকিৎসা গ্রহন করতে গেলে তিনি সরকারিভাবে সরবরাহ কৃত প্রতিশেধক ইনজেকশনের ব্যবস্থা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুরের ও অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত নারী পুরুষ ও শিশুরা চিকিৎসা গ্রহন করতে গেলে জরুরী বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রথমে বলেন সরকারি ভাবে বরাদ্ধকৃত ঔষধ শেষ হয়ে গেছে। বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে বলে শ্লিপে ইনজেশনের নাম লিখে দেন। বিষয়টি দেখার জন্য এ ব্যাপারে অর্ন্তবর্তী কালীন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ।