টিকটক’র নেশায় মত্ত উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীরা, গড়ে উঠছে মানুষিক প্রতিবন্ধী প্রজন্ম

#পাশ্চাত্য সংষ্কৃতিকেই দায়ী করছে সুশীল সমাজ
#ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় অবিলম্বে সরকারকে টিকটক নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন
শেখ ফেরদৌস রহমান ও মুশফিকুর রহমানঃ আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা আর স্মার্ট ফোনে সহজ ইন্টারনেট ব্যবহার দুনিয়া যেন হাতের মুঠোতে। আর স্মার্ট ফোন দিয়ে তৈরি ছোট কয়েক সেকেন্ড এর ভিডিও তৈরি করার নেশায় মত্ত হয়ে উঠছে স্কুলে গন্ডি শেষ না করা অনেক কিশোর-কিশোরিরা। ফলে মানসিক প্রতিবন্ধি হিসেবে তৈরি হচ্ছে নতুন প্রজন্মের এক অসুস্থ জনগোষ্ঠি। পাশাপাশি সমাজে চলছে অশ্লিলতা আর অপরাধ। বিকৃত বাচনভঙ্গি ও নগ্নতার প্রতিযোগিতায় যেন মত্ত হয়ে পড়েছে এই প্রজন্ম। অবিলম্বে দেশ থেকে এই ছোট ভিডিও টিকটক নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। এমনকি টিক টকের নেশায় এসব তরুণেরা ভবিষ্যতে এই ছোট ভিডিও তৈরি করতে করতে এক সময়ে বিরাট বড় তারকা খ্যাতি হবে এমন প্রত্যাশা কাজ করে । নিজের মধ্যে আর কতিপয় অর্থ লোভি অভিভাবকেরা যুক্ত হয়ে উৎসাহ দিচ্ছে তার সন্তানদের। শুধু যুক্ত হচ্ছে হলে ভুল হবে, এমনকি এসব অভিভাবকেরা নিজেরাও সন্তানদের সাথে টিক-টক ভিডিওতে অংশ নিচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রথম এ্ই টিক টক এর জন্ম দেন চীনা নাগরীক ঝাং ইয়ামিং।এর পর যেন ধীরে ধীরে এই ছোট ভিডিও তৈরি করা মানুষিক একটি ব্যাধিতে পরিনত হচ্ছে। বিশেষ ব্যাঙ্গ অঙ্গভঙ্গির সাথে বিভিন্ন গান বা লেখা ব্যাবহার করে করা হচ্ছে এই টিক-টক।পাশাপাশি কার কত ফলোয়ার, কত লাইক বা কমেন্ট হলো এর প্রতিযোগীতা চলতে থাকে স্কুলের সহপাঠিদের সাথে।তেমনটি দেখা যায় খালিশপুরে দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে। এমনকি তার একই ছবি দিয়ে তিনটি থেকে চারটি টিক-টক এ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর এই টিক টক করার সময়ে মেয়েটি স্কুলের ই্উনিফর্ম সহ ব্যবহার করছে শ্রেণী কক্ষ,এমনকি তার সাথে যুক্ত হচ্ছে তার সহপাঠিরা। বাদ যাচ্ছেনা তার অভিভাবক। কখনও সে টিক-টক ভিডিও তে দেখাচ্ছে। কখনো বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ফুসকা খাওয়ার ভিডিও বা কোন দোকান থেকে কিছু ক্রয় করছে ।আবার কখনো মেলায় যেয়ে বা নদীর পাশে হাঠতে হাঠতে তার মাথা বিভিন্ন দিক ঘুরপাক করে ক্যামেরার দিক তাকিয়ে ভিডিও বানাচ্ছে। এই ব্যাধিতে শুধু একজন নয়। এরকম রয়েছে লাখ,লাখ কিশোর- কিশোরীরা। এছাড়া ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্র ,তার ও রয়েছে একটি টিক-টক এক্যাউন্ট। তার নিজের স্মার্ট ফোন নেই তার বাবার ফোন দিয়ে সে বানাচ্ছে টিক-টক। এ বিষয়ে কথা হয় সচেতন নাগরিক মোঃ সিরাজুম এর সাথে। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে,উঠতি বয়সি তরুণেরা টিকটকে যুক্ত। আর বিশেষ করে তারা যেসব অঙ্গভঙ্গি করে বা বিভিন্ন সঙ্গিতের সাথে নাচ বা অন্য কোন অঙ্গ ভঙ্গি করে। এতে তারা মনে করে আমি এভাবে করতে পারলে এক সময়ে বিশাল বড় এক তারকা হবো।তবে, এসব তরুণেরা বোঝেনা যে যুক্ত্হিীন এসব ভিডিও নতুন প্রজম্মের অবক্ষয় জানান দিচ্ছে। তারা দিন দিন অন্ধকারের দিক ধাবিত হচ্ছে। আমরা এই বিষয়টি সহজ ভাবে নিতে পারছিনা। এসব তরুণেরা নিজেরা কিছু শিখবে। দেশকে তারা নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে। ভালো ভালো কিছু নতুনত্ব তৈরি করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি আমি বলব এর জন্য মূলত অভিভাবকরা দোষি। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে তাহলে দিন দিন এসব টিকটকারদের সংখ্যা আরও বাড়বে। সৃষ্টি হবে অশ্লিলতা আর অপরাধ।এছাড়া আপনারা দেখবেন সোনাডাঙ্গা ময়ুরী আবাসিক এলাকায় সকাল-বিকাল চলছে টিক-টক আর ছোট কন্টেন্ট। এ এবিষয়ে কথা হয় দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিদয়ের সাথে সে নতুন করে একটি টিক-টক আইডি খুলেছে। তবে, এটা সে শখের জন্য করছে। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলা বা খেলাধুলা,শারিরিক ব্যায়াম ভিডিও করছি।তবে, অন্য কোন উদ্দেশ্য এখনও নেই। এ বিষয়ে খুলনা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ শেখ মোহাম্মাদ কামাল হোসেন বলেন, টিক-টক এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম চিন্তা ভাবনা, পড়া লেখা বাদ দিয়ে তারা টিক টক নিয়ে ভাবছেন। এর কারণে তরুণরা মেধা কাজে লাগাতে পারছেনা। সমাজে ঘটছে অপরাধ আর অশ্লিলতা। স্ত্রী ছাড়ছেন তার স্বামীকে, ভাংছে সংসার। এছাড়া দীর্ঘ সময় স্মার্ট ফোনের দিকে তাকালে বা টিক টক করলে মাথায় সব সময় এই চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে, কিভাবে এর পরের ভিডিও তৈরি করব। এতে করে এক সময়ে হতে পারে মানসিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।
তবে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই এপ্লিকেশনের মাধ্যমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর । সম্প্রতি বেশ কিছু অনলাইন , প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। সাউথ কোরিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন মডেল-গায়ক-নায়কদের সাথে দেখা করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় বেশ কয়েকজন তরুণী। পরে জানা যায়, এসকল তরুণীরা টিকটকের মাধ্যমে এই বিভ্রান্তিকর তথ্য পায়। একদল অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলকারী টিকটকার গ্রুপ, ভুয়া আইডি খুলে বিদেশী টিকটকারদের সাথে দেখা করানোর প্রলোভন দেখায়। এছাড়া বেশ কয়েকটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের প্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত অনেকের ব্যাক্তিগত ও স্পর্শকাতর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে টিকটকের মাধ্যমে। যার কারনে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকে। এ বিষয়ে কে এম পি’র গোয়েন্দা বিভাগের উপ- পুলিশ কমিশনার মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা কে এম পির চলমান সুধী সমাবেশে এই সকল বিষয়ে সচেতন করেছি। পাশাপাশি, আমরা উঠতি বয়সী তরুণদের অঙ্গভঙ্গি সন্দেহজনক হলে জিজ্ঞাসাবাধ করছি। এছাড়া অভিভাবকদের সচেতন করছি।