দৌলতপুর বাজার বণিক সমিতির নির্বাচন স্থগিত

# ভোটারের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র না থাকা, বিলম্বে ভোট গ্রহণ শুরুসহ নানান অভিযোগ #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা নগরীর দৌলতপুর বাজার বণিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক সাধারণ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন স্থগিতের কারণ হিসাবে দেখা গেছে, ভোটারের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র না থাকা, বিলম্বে ভোট গ্রহণ, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বের প্রতি অবহেলাসহ নানান অভিযোগে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) বাজারটির নির্বাচন বানচাল হয়েছে। এদিকে ভোট বানচালের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বহিরাগতরা বাজার কমিটির অফিস সম্মুখে বিশৃঙ্খলার করার চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেন। করে। ওই ঘটনার পর বিভিন্ন প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরসহ কর্মীদের উপর হামলা করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
জানা যায়, সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৮টায় বাজারের মৎস পট্টিতে ভোট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ৪০০ ভোটারের ছবিসহ পরিচয়পত্র না থাকায় ভোট গ্রহণ শুরু হয় বেলা ১১টায়। এরপর ভোটারের ছবিযুক্ত কার্ডবিহীন ভোট প্রদান চলছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। ভোট গ্রহণ স্থগিত করে সকল প্রার্থী, জেডিএল এবং বাজারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বাজারের অফিসে আলোচনায় বসে। কিন্তু ১০টি পদের বিপরীতে ৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিরা ভোট গ্রহণের বিষয়ের সিদ্ধান্তে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) পুনরায় সম্ভব্য নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেও সেটা কয়েকজন প্রার্থী মানতে রাজি হয়নি। এমনকি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অবহেলায় নির্বাচন বানচাল হয়েছে বলে অভিযোগও করেন। পাশাপাশি আগামীতেও এই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন করতে রাজি নয় একাধিক প্রার্থীরা।
বাজারের সভাপতি প্রার্থী আলহাজ¦ শেখ আসলাম নির্বাচন বন্ধের কারন জানিয়ে জানান, ৪’শ অধিক ভূয়া ভোটার করা হয়েছে। যে কারণে আমরা ভোট বর্জন করেছি। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সম্পূর্নরুপে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন পরিচালনায়। নির্বাচন বানচাল করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, ওই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে সম্পূর্নরুপে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। তারা সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনি। আগামী সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারী) যদি নির্বাচন হয়, তবে অবশ্যই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে হতে হবে, নতুবা আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহন করবো না। সভাপতি প্রার্থী শেখ কামাল হোসেন জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হচ্ছিল। সভাপতি প্রার্থী আসলাম ও তার অনুসারীরা যখন দেখেছে আমার ভোট বেশি পড়ছে, আর তার ভোট কম পড়ছে। তখন ওই গোষ্ঠী ঈর্ষান্বিত হয়ে নির্বাচন বন্ধের পাঁয়তারা করে। বর্তমান নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রতি আমার পূর্ন আস্থা রয়েছে। আমি আশাবাদী ব্যবসায়ীদের কাছে আমার যে জনপ্রিয়তা আছে ভোটাররা পরবর্তী নির্বাচনে আমাকে পুনরায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে ।
নির্বাচন বানচাল বিষয়ে সাঃ সম্পাদক প্রার্থী এমএম জসিম জানান, যারা সমাজের কিট, অশুভ আত্বা নিকৃষ্ট ও টাকা দিয়ে ভোট কিনছে তারাই এই নির্বাচন বানচাল করে দিয়েছে। ওদের কারনে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একটি সাজানো গোছালো নির্বাচন প- হয়ে গেল। ব্যবসায়ীরা এই নির্বাচন স্থগিত হওয়ার বিপক্ষে। ওই গোষ্ঠী আমার জনপ্রিয়তা মেনে নিতে না পেরে এ জঘন্য কাজটি করেছে। পরবর্তী নির্বাচনের সম্ভব্য তারিখ আামি সমর্থন করেছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে নির্বাচন বানচাল করে কেবল ক্ষান্ত হয়নি আমার কর্মীর উপর হামলা করে তাকে আহত করেছে। আমার কর্মী বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। নির্বাচন বানচালের বিষয়ে সাঃ সম্পাদক প্রার্থী নান্নু মোড়ল জানান, নির্বাচন বন্ধ করা উদ্দেশ্যে পূর্বের থেকে ছক আকা ছিল আমার বিপরীত প্রার্থীর। ক্ষমতায় আসার জন্য আমার বিপরীত প্রার্থী তোড়পাড় ছিল। যদি পুনরায় এই নিবার্চন পরিচালনা কমিটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়ার দায়িত্বভার গ্রহন করেন, তাহলে পুনরায় তাদের অধিনে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবো। নির্বাচনে আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ঈর্ষান্বিত হয়ে তার ভাই ও অনুসারীরা আমার অফিস ভাংচুর ও কর্মীদের উপর হামলা চালায়। ওই গোষ্ঠী আমাকে হেনস্থা করার উদ্দেশে গালমন্দও করেছে। দৌলতপুর বাজারের নির্বাচন বন্ধের বিষয়ে সাবেক কাউন্সিলর এসএম হুমায়ূন কবির জানান, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এবং দৌলতপুর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ মুশার্রফ হোসেন জানান, আমরা নির্বাচন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছি এটা স্বীকার করছি। তারপরও আমরা পুনরায় সকল প্রার্থীদের নিয়ে বসে একটা সমাধানের চেষ্টা করব। যদি প্রার্থীরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিবর্তন চায় এটাতে আমাদের সকল সম্মতি আছে। ছবিযুক্ত ভোটারের বিষয়ে তিনি বলেন, ভাইরাসের কারণে কম্পিউটারের প্রিন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছিলাম ভোটারদের আবেদনপত্রের ভিত্তিতে ভোটার স্লিপ দিয়ে ভোট চালিয়ে নেওয়ার জন্য। তবে এতে অনেক প্রার্থী আপত্তি করে। এসব কারণেই ভোট গ্রহণ দেরীতে শুরু হয়। তিনি আরও বলেন, জেডিএল আমরা এবং প্রার্থীরা বসেও কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় ভোট বাতিল করা হয়েছে। অনেক প্রার্থী জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগও করেছে। এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মীর আতহার আলী জানান, নির্বাচনে যেন আইন-শৃঙ্খলার কোনো অবনতি না ঘটে ওই দায়িত্বে আমরা ছিলাম। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যেভাবে দায়িত্ব পালন করা দরকার সেভাবে দায়িত্বপালন করার চেষ্টা করেছি। যতটুকু জানি কিছু ভোটারের নাম ও ছবিসহ আই.ডি কার্ডের জটিলতার কারণে প্রার্থীদের মতের বিরোধ থাকায় সংশ্লিষ্টরা ভোট বন্ধের ঘোষনা দেন। কেউ ভোট বন্ধের পক্ষে ছিল, আবার কেউ ভোট বন্ধের বিপক্ষে ছিল। এই দুই বিষয়টি নিয়ে একটা উত্তেজনা ছিল। তবে নির্বাচনী কেন্দ্র বা এলাকায় কোনো গন্ডগোল হয়নি, ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি।