স্থানীয় সংবাদ

নগরীর আবাসিক হোটেল শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল!

আত্মগোপনে থেকে সন্ত্রাসীরা নিয়ন্ত্রণ করছে অপরাধ জগত
হোটেল থেকে তালিকাভুক্ত ৪ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

কামরুল হোসেন মনি : আবাসিক হোটেলগুলো দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে আত্মগোপনে এসব হোটেলে থাকছের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। নগরীর রেলস্টেশ সামনে কয়েকটি আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধে অপরাধীরা আত্মগোপনে থেকে মাদকের চালান নিয়ন্ত্রণ করছেন এমন তথ্যও রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরীর সঙ্গীতা হোটেল থেকে কেএমপি’র পুরষ্কার ঘোষিত তালিকাভুক্ত ৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছেন গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে সাকিবুর রহমান ওরফে জিতু (৩৩), জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া (৪৫), শাওন (২৪) এবং সোহেল রানা ওরফে উজ্জ্বল শেখ(২৮)। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কেএমপি’র ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুলনা মহানগরী সঙ্গীতা হোটেল থেকে তাদের আটক করা হয়। কেএমপি’র সদর দপ্তরে মঙ্গলবা বিকেলে এক প্রেসবিফ্রিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন কেএমপির এডিশনাল পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এ- অপারেশন ) মো: কুতুব উদ্দিন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা কেএমপির তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। এদেরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ইতিমধ্যে কেএমপির কমিশনার পুরষ্কার ঘোষনা করেছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসী জিতুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতি, দস্যুতা, চাদাবাজিসহ ১৪ টি মামলা রয়েছে। এছাড়া জাহাঙ্গীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় সে যাবতজীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। শাওনের বিরুদ্ধে ২টি হত্যা মামলাসহ ৬টি মামলা এবং সোহেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৯টি মামলার রয়েছে। এর আগে কেএমপি’র ডিবি পুলিশের ওসি তৈমুর ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম মঙ্গলবার ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনার রেলস্টেশনের সামনে সড়কে অবস্থিত সঙ্গীতা হোটেলে অভিযান চালিয়ে উক্ত ৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেন।
একাধিক গোয়েন্দার সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত সাকিবুর রহমান ওরফে জিতু খুলনার পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর অপরাধ জগতের ডান হাত ছিলো। জিতু নগরীর পশ্চিম টুটপাড়া ফরিদ মোল্লার মোড়ের বাসিন্দা অলিয়ার রহমানের ছেলে। গ্রেনেড বাবু আত্মগোপনে থেকে তার নির্দেশনায় জিতু খুলনায় নানা অপরাধ কর্মকা- পরিচালনা করতো। অপর গ্রেপ্তারকৃত শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া খালিশপুর মেঘার মোড় এলাকার বাসিন্দা মৃত ইদ্রিস আলী মিয়ার পুত্র। সে এলাকায় একজন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী। জাহাঙ্গীর খুলনা রেলস্টেশরে সামনে সড়কে বিভিন্ন হোটেলে আত্মগোপনে থাকতেন। এর মধ্যে সঙ্গীতা হোটেল ছাড়াও হোটেল মৌসুমী ও হোটেল সুগন্ধীতে মাঝে মধ্যে থাকতেন। তার মাদকের বড় চালান ট্রেনে করে যশোর ও বেনাপোল থেকে খুলনায় রেলস্টেশনে আসে। ভোরে আসা ট্রেনের মাদকের চালানগুলো সে হোটেলে বসেই নিয়ন্ত্রণ করতেন। কারণ রেলস্টেশনের সামনে রাস্তায় হোটেলেই বসেই সে সবকিছু নজরদারী করতো। সেখান থেকেই মাদকের চালান তার সহযোগীদের দিয়ে বিভিন্ন রুটে পৌছায় দিতেন। গ্রেপ্তারকৃত শাওন খালিশপুর মেঘার মোড় এলাকার বাসিন্দা মো: জাহাঙ্গীরের পুত্র। সে এলাকায় একজন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়া সোহেল রানা ওরফে উজ্বল শেখ খালিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমানের পুত্র। এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৯টি মামলাও রয়েছে।
কেএমপি’র সূত্র জানায়, কেএমপি’র পুরস্কার ঘোষিত ও তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে সাকিবুর রহমান ওরফে জিতু ও গ্রেপতারকৃত অপর তিন জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে জিতুকে গ্রেপ্তারের জন্য ২ লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেন কেএমপি কমিশনার। এছাড়া বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তারের জন্য এক লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষনা করা হয়।
কেএমপি’র একাধির সূত্র মতে, আবাসিক হোটেলগুলো দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে আত্মগোপনে এসব হোটেলে থাকছের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে হোটেলগুলোর মালিকরা সঠিক নির্দেশনা মানছেন না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অপরাধীরা এখানে এসে গা ঢাকা দিচ্ছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে আবাসিক হোটেলে বোর্ডার প্রবেশের সময়ে তার ছবি তুলতে হবে। বোর্ডারের জাতীয় পরিচয়পত্র পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইন্সের কপি সংগ্রহ করতে হবে। বোর্ডারের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা এবং ফোন নম্বর রাখতে হবে। বোর্ডারের দেয়া মোবাইল নম্বরে তাৎক্ষণিক কল করে এর সঠিকতা যাচাই করতে হবে। আর্চওয়ে দিয়ে দেহ তল্লাশি করতে হবে। আর্চওয়ে না থাকলে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে। বোর্ডার যতবার হোটেলে প্রবেশ করবে ততবারই দেহ তল্লাশি করতে হবে। সব লাগেজ স্ক্যানার দিয়ে চেক করতে হবে। স্ক্যানার না থাকলে ম্যানুয়াল চেকের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বোর্ডার হোটেলে অবস্থানকালে যতবার লাগেজ, ব্যাগ, মালামাল নিয়ে প্রবেশ করবে ততবারই ওই লাগেজ, ব্যাগ, মালামাল স্ক্যান ও ম্যানুয়াল চেক করতে হবে। কোনো অতিথি এলে অনুরূপভাবে তার দেহ ও ব্যাগ তল্লাশি করতে হবে। সিসি ক্যামেরা (রাতের ছবি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন) স্থাপন করতে হবে এবং হোটেলের চার পাশে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button