স্থানীয় সংবাদ

খেলাধূলার জায়গায় মন্দিরের টিনের চাল স্কুলে প্রবেশে নেই কোন গেটঃ জনমনে ক্ষোভ

# বেদখল হয়ে যাচ্ছে নগরীর ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা #

খলিলুর রহমান সুমন ঃ খুলনা নগরীর ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছ্।ে অভিযোগ রয়েছে স্কুলের জন্য দানকৃত জমির অধিকাংশ বয়রা শ্মশান ঘাট সার্বজনীন পূজা মন্দির কমিটি দখল করে নিয়েছে। গড়ে তুলেছে স্থাপনা। ১০ শতাংশ জমির উপর স্থপিত এ স্কুলটির বর্তমানে এমন অবস্থা হয়েছে যে ভিতরে প্রবেশ না করে বোঝাই যাবে না এখানে কোন স্কুল আছে। স্কুলের নিজস্ব কোন প্রবেশ দ্বার নেই। মন্দির কমিটির দখলদারিত্ব বেড়ে যাওযায় এ্যাসেম্বলি বা ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধূলা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যেটুকু আছে সেখানেও বন জঙ্গলে ভরা। মন্দির কর্তৃপক্ষ সেই জায়গা পরিষ্কার করতেও বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের। এ বিষয় থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং বেদখলদা জমি উদ্ধারের দাবিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা রাণী মজুমদার গত ৭ জানুয়ারী জেলা প্রশ্সাকের নিকট অভিযোগ দাখিল করেছেন। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন ছোট বয়রা এলাকায় পাঁচ শতক জমির উপর ১৯৭৮ সালে গড়ে উঠেছিল ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় স্কুল। দানপত্র দলিলমূলে বিদ্যালয়টি দশ শতক জায়গায় উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২শ’ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। বিদ্যালয়ের সম্পত্তি এবং বিদ্যালয়ের সম্পত্তির সাথে সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক সমাবেশ, জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে সম্মিলিভাবে আলোচনা এবং শিক্ষার্থীদের শারীরিক-মানসিক উৎকর্ষ সাধনে নিয়মিত অনুশীলন হতো। বিদ্যলয়ের সাথে সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের জায়গায় ছোট বয়রা শ্মশানঘাট কালিমন্দির নামে একটি মন্দির আছে। তৎকালীন সময়ে সম্মানিত ব্যক্তিগণ জনগনের কল্যানে রাস্তা করতে সরকারি জায়গা স্কুলের অনুকূলে রাখার সিদ্ধান্তে সরকারি জায়গা রেখে মন্দিরের সামনে স্কুলের জায়গার উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। যার কারনে জরিপের সময়ে স্কুলের সম্পূর্ন জমি রেকর্ড সম্ভব হয়নি। মন্দির কর্তৃপক্ষ স্কুল ও সরকারি জায়গাসহ সমগ্র জায়গায় পাঁকা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। সেখানে মন্দির কর্তৃপক্ষের মন্দিরের সামনে দিয়ে একমাত্র যাতায়াতের গেইট নির্মাণ করলেও বিদ্যালয়ের জন্য পৃথক গেটের ব্যবস্থা করেননি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সম্মানিত শিক্ষা কর্মকর্তা ও অভিভাবক এবং শুভার্থী সকলকে মন্দিরের গেইট দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। বিষয়টি সকলের জন্য বিব্রতকর। তৎকালীন সময়ে সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত ছিল- স্কুল স্কুলের জায়গায়, মন্দির মন্দিরের জায়গায় এবং বাকি জায়গা সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। যেখানে স্কুল ও মন্দিরের কার্যাদি এবং এলাকার ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা করবে এবং এলাকার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানাদি এই সরকারি জায়গায় বা মাঠে সম্পন্ন হবে। এ সমাজ আমাদের সকলের কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, মন্দির কর্তৃপক্ষ সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের ১৫ শতক জায়গা সর্বশেষ জরিপের সময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বা সমাজের দায়িত্বশীল কারো সাথে কোনরূপ আলোচনা না করে একান্তে ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে প্রিন্ট পর্চার ডানপাশের মন্তব্য কলামে মন্দির কর্তৃপক্ষের ব্যবহারের জন্য লিখিয়ে রেকর্ড করে মাঠ দখল করে গাছপালা লাগিয়ে স্কুলের সামনে এলাকার একমাত্র মাঠটিতে খেলাধুলা সম্পূর্ন বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন খেলার মাঠটি মৃত প্রায়। আমরা বিদ্যালয়ের নির্ধারিত জায়গা এবং সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের প্রয়োজনীয় জায়গা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার্যের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের জন্য পৃথক গেটের জায়গায় ব্যবস্থা করা দাবি জানিয়েছে। দলিলমূলে বিদ্যালয়ের জায়গায় সীমানা নির্ধারণ এবং সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের প্রয়োজনীয় জায়গা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের জন্য পৃথক গেটের জায়গায় ব্যবস্থা করার দাবি করা হয়েছে ওই অভিযোগে। মনীন্দ্র রায় সরঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি কনক রাণী গণপতি এ আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। অন্য এক আবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্কুলের পাশেই কোল ঘেঁষে রয়েছে কালী মন্দির। ১৯৯২ সালে স্কুলে চাকুরির শর্তে ওই এলাকারই মেয়ে বর্তমান প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণা মজুমদারের বাবা আরো পাঁচ শতক জমি স্কুলের নামেদানপত্র করে দেন। এর আগে স্কুলটি ১৯৯০ সালে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। নামকরণ করা হয় ছোট বয়রা মনিন্দ্র রায় সরকারি প্রামিক বিদ্যালয়। ছোট বয়রা শ্মশানঘাট সার্বজনীন পূজা মন্দির ও স্কুলের একটি মাত্র প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলেই প্রথমেই চোকে পড়ে মন্দির, তার বাম পাশে স্কুলটির অবস্থান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা মুজমদার জানান,স্কুলে সাতজন শিক্ষ-শিক্ষিকা রয়েছেন। শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২শ’ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে বর্তমানে স্কুলের পরিধি কমেছে, বেড়েছে মন্দিরের টিনের চাল (ছাউনি)। কাছ থেকে খেয়াল না করলে স্কুলটি দেখাই যায় না। এমনকি স্কুলের নিজস্ব কোন প্রবেশ দ্বার নেই। মন্দির কমিটির দখলদারিত্ব বেড়ে যাওয়ায় এ্যাম্বেলি বা ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধূলা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যেটুকু আছে সেখানেও বন জঙ্গলে ভরা। মন্দির কর্তৃপক্ষ সেই জায়গা পরিষ্কার করতেও বাধা দিচেছ। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়ে সুরাহার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তার কোন সমাধান অদ্যবধি হয়নি। অফিসিয়ালি তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত চিঠি প্রদান করেছেন। বাদ যায়নি জেলা শিক্ষা অফিস, থানা শিক্ষা অফিস, খুলনা ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও। তিনি এই বিষয়ের একটি সুষ্ঠু তদন্ত ও একটি সুষ্ঠু পদক্ষেপ আশা করছেন। সরেজমিনে স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য মন্দিরের সামনের সীমানা দিয়ে রাস্তা হওয়ার কথা ছিল। এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাস্তাটা ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। সেভাবেই বর্তমান রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এর কারণে স্কুলের পাঁচ শতক জমির বেশকিছু অংশ রাস্তার ভিতর চলে গেছে। সে সময় মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের মৌখিক চুক্তি হয় সরকারি খাস জমি স্কুলকে প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে মন্দির কর্তৃপক্ষ মৌখিক চুক্তি ভঙ্গ করে তাদের মন্দিরের জায়গাটা ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে। স্কুল কমিটির সাবেক সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, এই স্কুল আর মন্দির নিয়ে চলছে রাজনীতি। যার জন্য সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। মন্দিরকে পরগাছা উল্লেখ করে বলেন, পরগাছা এখন মূল গাছটিকে গিলে খাচ্ছে। এখন স্কুলের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বিষয়টি সবাই দেখছে শুনছে। কিন্তু সমাধান করছে না। এ সুযোগে দখলদার মন্দির কমিটি স্কুলের জায়গা ক্রমে গিলে ফেলছে। তিনি তিনটি দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে, স্কুলের জন্য নিজস্ব গেট তৈরী, খেলাধুলার জন্য মাঠকে উন্মুক্তকরণ এবং মাঠে তৈরীকৃত অবৈধ স্থাপনা অপসারণপূর্বক মাঠ দখলমুক্ত করা। স্কুলের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম কবিরুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে বহুদিন ধরেই চেষ্টা চলছে সুষ্ঠু সমাধানের। জনপ্রতিনিধিদের কাছেও গিয়েছিলাম কিন্তু তারাও কোন সঠিক ফয়সালা দিতে পারেনি। শুরু থেকে দেখে আসছি এই মন্দিরটি ছিল অল্প একটু জায়গার ভিতরে। আমরা হিন্দু মুসলমান সবাই মিলে এই মন্দির রাত জেগে পাহারাও দিয়েছি। অথচ বর্তমানে স্কুলে বাচ্চাদের এ্যাসেম্বলি করার জায়গাটুকুও নেই। তারা খেলাধুলা করতে পারে না। এমনকি একটা শহিদ মিনারও নেই। শিক্ষার্থীরা এক সময় কলা গাছ কেটে শহিদ মিনার তৈরি করতো। অথচ কষ্টের বিষয় বর্তমানে এই ছোট গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে মন্দির কর্তৃপক্ষ থানা পুলিশও করেছে। স্কুলের সহকারি শিক্ষিকা তানিয়া সুলতানা জানান, একটু একটু করে মন্দিরের চাল (ছাউনি) বেড়ে যাচ্ছে। আমরা চাই পাশাপাশি স্কুল এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ দ্বন্দ্ব সংঘাত ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করুক। স্কুলের একটা নিজস্ব প্রবেশ দ্বার থাকুক। আমরা চাই সহ অবস্থান। খেলাধূলার মাঠ না থাকায় ওই এলাকায় ইয়ং ছেলেরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কোমলমতি শিশুরা মোবাইল আসক্ত হচ্ছে। স্কুল মাঠে খেলার কোন সুযোগ নেই। উপাসনা বাধাগ্রস্ত হওয়ার অজুহাতে মন্দির কর্তৃপক্ষ শিশুদের খেলাধূলায় বাধা প্রদান করে। বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী ও নাগরিক নেতা মাহফুজুর রহমান মুকুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। স্কুল তার যৌক্তিক দাবি জানালেও মন্দির কমিটি তা আমলে না নিয়ে অনেকটা পা পাড়িয়ে ধরে গোলমাল করার চেষ্টা করছে বলে তিনি মনে করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ অহিদুল ইসলাম জানান, ডিসি সাহেবের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য সদর এটিও শাহাজাহানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। মন্দির কমিটির সদ্য পদত্যাগকারী সভাপতি বিধুভূষণ মন্ডল বলেন, স্কুল কমিটির গাফেলতির কারণে সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। কমিটির নেতাদের মাঝে সমস্যা সমাধানে ভক্তি শ্রদ্ধা নেই বলে তিনি মনে করেন। জমির আইনগত সমস্যা সমাধান না করে শুধু শুধু মৌখিক আর চিঠি চালাচালি করে পরিবেশ ঘোলাটে করছেন তারা। মন্দির কমিটি কোনভাবেই স্কুলের জায়গা দখল করেনি। মন্দির কমিটি যা করেছে সবই তাদের জায়গার ওপর করেছে। স্কুল কমিটি যা বলছে তার কোন সত্যতা নেই বলে তিনি দাবি করেন। নাগরিক নেতা সুতপা বেদজ্ঞ বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি গড়ে ওঠার সংস্কৃতি আমাদের দেশে বহুপুরোনো। সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান মানুষের কল্যানের জন্য পরিচালিত হয়। এখানে জায়গা নিয়ে বিবাদ অনাকাংক্ষিত। যেহেতু দু’ প্রতিষ্ঠানেরই যথাযথ দলিলপত্র রয়েছে। সেহেতু মন্দির ও বিদ্যালয় কমিটি একত্রে বসে এ ব্যাপারে স্থায়ী সমাধান করবেন সেই প্রত্যাশা করি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button