স্থানীয় সংবাদ

জিরোপয়েন্ট-ময়লাপোতার ৪ কিলোমিটার সড়কে জ্বলেনা সড়কবাতি !

# সন্ধা নামলেই অন্ধকারে ডুবে সড়কটি, ঘটছে খুন, মারামারি, দুর্ঘটনা।
# বছর পার হলেও বরাদ্দ চাওয়া হয়নি সড়কবাতির।
# সড়কে আলোর উৎস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন।
# পুরো শহরের রাস্তায় ক্যামেরা লাগানোর সক্ষমতা নেই কেএমপি’র।

কামল মোস্তফা ঃ সূর্য ডুবলেই অন্ধকারে ডুবে যায় খুলনা মহানগরীর চার লেনে উন্নিত হওয়া ময়লাপোতা মোড় থেকে গল্লামারী হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে যনবাহন ও পথচারিরা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আর যানবাহনের হেডলাইটের আলোতে নির্ভর করেই চলাচল করে। ফলে হর হামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা, ছিনতাই, খুনোখুনি। সরেজমিনে দেখা যায়, রাত বাড়লেই দু’পাশের দোকানপাট বন্ধ হতে শুরু করলে এ সড়কে অন্ধকারের গভীরতা বাড়তে থাকে, শুরু হয় সুনসান নিরাবতা। বিশেষত ময়লাপোতা মোড় পার হয়ে জোহরাখাতুন স্কুল, হাজিবাড়ি মোড়, কমার্স কলেজ হোস্টেল, তাবলীগ মসজিদ, এসওএস স্কুল, লায়ন্স স্কুল, গল্লামারী ব্রিজ থেকে জিরো পয়েন্ট অব্দি রাস্তাগুলো সূর্য ডুবতেই আধার গ্রাস করে। বাকি রাস্তাগুলো রাস্তার দু’পাশের বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আলোতে কিছুটা আলোকিত হয়। তালুকদার কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন রাস্তায় কেএমপির চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, সেখানে অন্ধকারেই কার্যক্রম করতে দেখা যায় পুলিশকে।
এদিকে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে এ রাস্তায় প্রতিনিয়তই ঘটছে চুরি, ছিনতাই, সড়ক দুর্ঘটনা; হচ্ছে খুন, জখম। গত বছরের ২ নভেম্বর রাতে আলকাতরা মিল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে পঙ্গু রাসেল নামে এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করে। এ সময় সজীব ও ইয়াসিন নামে দুই যুবককে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। ৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে নিরালা এলাকায় ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে এসে একদল সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে পথচারী ইউনুস শেখ গুলিবিদ্ধ হন। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি নগরীর হাজীবাড়ি সংলগ্ন বেসিক ফার্নিচার ব্যবসায়ী রকি(৩০) এর দোকানের সামনে ৭/৮ টি মটরসাইকেল যোগে ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি এসে কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রকি দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়। এমন ভীতি, আতঙ্ক নিয়ে এ রাস্তায় চলাচল করেন সাধারণ মানুষ।
নাজিরঘাট এলাকার বাসিন্দা সুমাইয়া খাতুন বলেন, ‘সবার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রশাসনের উচিত সতর্ক হওয়া। প্রতিটি সড়কে যেমন সড়কবাতি ও সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল করা দরকার, ঠিক তেমনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর টহলও জোরদার করা প্রয়োজন।’ বিশেষত এই রাস্তায় সড়কবাতি খুবই জরুরী।
সড়ক সংলগ্ন দোকান মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, বছর খানেক হলো রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু এ রাস্তায় এখনো রোড লাইট ও সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়নি। রাতে দোকান রেখে বাসায় গিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকি কখন চুরি হয়।
টিউশনি থেকে হলে ফিরছিলেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, টিউশনি করে ফিরতে ফিরতে অনেক সময় রাত সাড়ে দশটা কোনদিন এগারোটাও বেজে যায়। সে সময় রাস্তায় গাড়ি ও পথচারির সংখ্যা কমে আসে, দ’ুপাশে থাকা দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাস্তাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এক ধরণের ভীতি নিয়ে হলে ফিরি প্রতিদিন।
খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা প্রতিনিধি মিনহাজুল আবেদিন সম্পদ বলেন, জিরো-পয়েন্ট ময়লাপোতা সড়কটিতে সৈ¦রাচারের আমলে উন্নয়নের নামে মূলত লুটপাট হয়েছে। শুনেছি একশো কোটি টাকার উপর বরাদ্দ ছিল এই সড়ক নির্মাণে। কিন্তু সেই সড়কে এখনো সড়ক বাতিই লাগানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে অবিলম্বে সিসি ক্যামেরা এবং সড়কবাতি লাগানোর দাবি জানাচ্ছি।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাড. মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, চার লেনের এই মেগা প্রকল্পটিতে নানান অসঙ্গতি রয়েছে। রোড ডিভাইডারগলো করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে, চলাচলের জন্য রাখা হয়নি কোন ফুটপাত। রাস্তার কাজ শেষ হলেও সড়কবাতি না থাকায় প্রতিনিয়িত ঘটছে দুর্ঘটনা। অনতিবিলম্বে সড়কবাতিসহ এই ব্যস্ততম রাস্তাটির অসংগতি দূর করা জরুরী।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার(দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু, সড়কবাতি না থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরই বলতে পারবে। আমরা কেএমপি’র পক্ষ থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক বৈঠক করছি। নগরবাসি যেন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগায় এ বিষয়ে আহবান জানাচ্ছি। সড়কে সিসি ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পুরো শহরের রাস্তায় রাস্তায় কেএমপির পক্ষে ক্যামেরা লাগানোর সক্ষমতা নেই।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরীর ময়লাপোতা মোড় থেকে গল্লামারী হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল। সড়ক বিভাগের কাগজ-কলমে প্রকল্পের নাম ‘খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহরাংশে (৪ কিলোমিটার) ৪ লেনে উন্নীতকরণ।’। সড়কটি শেরে বাংলা সড়ক নামেই নগরবাসীর কাছে পরিচিত। প্রায় চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পের সব কাজ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়েছে ২০২৪ এর মাঝামাঝি সময়ে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক দৈনিক প্রবাহকে বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। শেরেবাংলা সড়কে সড়কবাতি না থাকার কথা জানতাম না, আপনার মাধ্যমে জেনেছি। যতদ্রুত সম্ভব আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানাবো।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button