স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় চলছে তরমুজ আবাদের কর্মযজ্ঞ : লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার প্রত্যাশা

# দেড় হাজার কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির প্রত্যাশা
# ইতিমধ্যে ৫ টি উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ শেষের পথে
# বেশি আবাদ হচ্ছে দাকোপে

কামাল মোস্তফা ঃ খুলনার তরমুজের খ্যাতি দেশজোড়া। ভোক্তরা অপেক্ষায় থাকেন কখন বাজারে আসবে খুলনার তরমুজ। সেই চাহিদা পূরণে নতুন স্বপ্নে বিভোর পাঁচটি উপজেলার তরমুজ চাষিরা। পার করছেন ব্যস্ত সময়। মহাসমারোহে শুরু হয়েছে তরমুজ চাষের কর্মযজ্ঞ। চাষাবাদ, বীজ রোপন, পানি সেচসহ ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করে এনেছেন দাকোপ, বটিয়াঘাটা, কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়ার চাষীরা। এ বছর তরমুজ উৎপাদনে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে যাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। তবে চিন্তার ভাজ সার, কীটনাশক, শ্রমিকের দাম বৃদ্ধি মিলিয়ে প্রত্যাশিত দাম পাবেন কিনা। গেল বছরের দাম পেলে খুলনায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির প্রত্যাশা এ খাতে যুক্তদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে জেলায় আবাদকৃত জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর। যেখানে তরমুজ উৎপাদন হয় ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ছিল ১ হাজার ৪৭ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। চলতি রবি মৌসুমে গত বছরের মত একই লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ১১ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
খুলনায় তরমুজের আবাদ হওয়া উপজেলাগুলোর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত দাকোপে ৮ হাজার হেক্টর, কয়রায় ৪ হাজার ২০০ হেক্টর, পাইকগাছায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ৫০০ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় সব মিলিয়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হতে যাচ্ছে। সে হিসেবে তরমুজ উৎপাদন হবে ৭ লক্ষ মেট্রিক টন । গেল বছরের দর হিসেবে যার বাজার মূল্য দাঁড়াবে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি।
বাজুয়া ইউনিয়নের রায়বাড়ি গ্রামের তরমুজ চাষী সবুজ বলেন, তরমুজের চারা থেকে ৩/৪ পাতা বের হয়েছে, আবহাওয়া ভালো থাকলে, এবারও ভালো ফলনের আশা করি। তরমুজ প্রন্তিক মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
দাকোপ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, গত রবি মৌসুমে দাকোপে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হলেও এবার ২ হাজার ৩০০ হেক্টর বেড়ে চাষাবাদ হচ্ছে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে।
দাকোপ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুম থেকে এবার দাকোপে তরমুজের আবাদ বেশি হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এবার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা। এজন্য আমরা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
কয়রার সাতালিয়া পূর্ব বিলের কৃষক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, বাম্পার ফলনের আশায় ধার দেনা করে এ বছর ৩৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করিতেছি। কেবল তরমুজের ছোট ছোট পাতা বের হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে বাম্পার ফলন হবে। এতে আমি লাভবান হবো।
কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, তরমুজ একটি লাভজনক ফসল। গতবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবছর গতবারের তুলনায় বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে এবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হবে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খুলনায় ড্রাগন, ড্রাগন সুপার, আস্থা, আস্থা প্লাস, পাকিজা, মালিক-১, এশিয়া সুপার, থাই রেড কিং, বিগ সুপার কিং ও বাংলালিংক জাতের তরমুজ চাষ করছে চাষীরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫০ থেকে ৫৫ মেট্রিক টন ফলন হতে পারে। তরমুজ চাষে কৃষকদের হেক্টর প্রতি খরচ হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।’ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক, ভ্রাম্যমাণ কৃষি পরামর্শ, কৃষকদের নিয়ে ব্লক ভিত্তিক মিটিং করা হচ্ছে। আশা করছি এবারও কৃষকরা লাভবান হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button