স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় এসে প্রেমের বলি নড়াইলের তাজকীর

# ওই ঘটনায় প্রেমিকাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ #
# সাবেক স্ত্রীর মেসেঞ্জার ব্যবহার করে ডেকে হত্যা করা হয় তাজকীরকে #

স্টাফ রিপোর্টার : খুলনায় বস্তাবন্দি মরদেহের পরিচয় মিলেছে, তার নাম তাজকীর আহমেদ। ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয়েছেন নড়াইল জেলার এই যুবক। এ ঘটনায় ওই যুবকের প্রেমিকাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জার দিয়ে তাকে ঢাকা থেকে খুলনায় ডেকে নেয় প্রেমিকার সাবেক স্বামী। পরে সুযোগ বুঝে রাতের আধারে খুন করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতে মরদেহের বুঝে নেন নিহতের বাবা। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে তাজকীরের মরদেহ খানজাহান আলী থানা এলাকার গফফার ফুড বালির ঘাটে ভেসে উঠলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত নিহতের বাবার দায়ের করা অপহরণ মামলায় প্রেমিকাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো, নিহত তাজকীরের প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমা, ঘাতক অভির মা লাবনী বেগম এবং শহিদুল ইসলাম শহীদ। খালিশপুর থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম জানান, নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ঝউডাঙ্গ এলাকার নওখোলা গ্রামের জনৈক মুরাদ হোসেনের ছেলে তাজকীর আহমেদ। খুলনা ম্যানগ্রোভ ইনস্টিটিউটে পড়াশুনা শেষ করে ঢাকা প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি ঢাকার কলাবাগান এলাকার একটি বাড়ির কেয়াটেকারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আরও বলেন, খুলনায় লেখাপড়া কালীন তাজকীরের বাবার চাচাতো ভাইয়ে ছেলের এখলাছুর রহমান রনির সাথে সীমার বড়বোনের বিয়ে হয়। এভাবে সীমার সাথে তাজকীরের পারিবারিক পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাজকীর সীমার প্রতি দুর্বল হতে থাকে। এক সময়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সীমা গ্রহণ করে। কিন্তু ওই প্রেমিকার আগে একটি বিয়ে ছিল সেটি সে জানত না। জানত না সীমার সাবেক স্বামী খালিশপুর এলাকার একজন বখাটে। পারিবারিক চাপে পড়ে সীমা এবং অভি একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায়। এর পর অভি দেশের বাইরে চলে যায়। কিন্তু ভাই রনি শালিকাকে সুপাত্রস্থ করার জন্য সীমাকে তাজকীরের পেছনে লেলিয়ে দেয়। তাদের উভয়ের প্রেমের সম্পর্কের স্থায়িত্বকাল ছিল দেড় বছরে মতো। গত কয়েকদিন আগে তাজকীরের বাবা বিষয়াট আচ করতে পেরে ছেলেকে এ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসতে বলেন। এর মধ্যে সীমার সাবেক স্বামী অভি দেশে ফিরে আসে। সীমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। সীমাও একই সাথে তাদের দু’জনের সাথে কথপোকথন চালিয়ে যেতে থাকে। এ কারণে সীমা একই সাথে দু’টি ফোন ব্যবহার করতে থাকে। পরে সীমার সাবেক স্বামী ঘটনাটি টের পায় এবং তাদের উভয়ের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়। হত্যাকান্ডের কায়েকদিন আগেও তাজকীরকে ফোন করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৩ টার দিকে নিহত তাজকীর মামাতো ভাই আসিফের স্ত্রী শারমিনকে জানায় সে খুলনায় আসছে এবং সে তখন বাগেরহাটে গাড়িতে আছে এবং দুপুর ৪টার দিকে সে মামাতো ভাইয়ের বাড়িতে যায়। পরবর্তীতে ভাবীকে জানায় সীমা খুব জরুরী দেখা করার জন্য খুলনায় ডেকেছে এবং খালিশপুর থানাধীন বিআইডিসি রোডস্থ নিউজপ্রিন্ট মিল গেটের বিপরীতে এতিমখানার সামনে যাচ্ছে। কিন্তু তখনও তাজকীর জানে না অভি সাবেক স্ত্রীর মেসেঞ্জার ব্যবহার করে তাকে হত্যার জন্য এভাবে ডেকে নিচ্ছে। ওই মাদ্রাসার সামনে থেকে ডেকে নিয়ে অভি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাতে তাজকীরকে হত্যা করে। পরবর্তীতে সুযোগ পেয়ে তাকে বস্তাবন্দি করে রাতের আধারে যে কোন সময়ে নদীতে ফেলে দেয়। এর আগে রাত ৮ টা থেকে নিহতের বাবা তাকে একাধিকবার ফেন দিয়ে না পেয়ে থানায় পরেরদিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী এবং পরবর্তীতে অপহরণ মামলা দায়ের করেন, যার নং ২২। তিনি আরও বলেন, খানজাহান আলী থানায় উদ্ধার হওয়া মরদেহের খবর পেয়ে তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাজকীরকে শনাক্ত করে। তবে এ ঘটনার মূল নায়ক অভি পলাতক রয়েছে। তাকে পেলে জানা যাবে হত্যার রহস্য। অপহরণ মামলাটি পরবর্তীতে হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button