স্থানীয় সংবাদ

রোজা শুরুর আগেই উর্ধ্বমুখি বেগুন, শসা ও লেবুর দাম, উধাও বোতলজাত সয়াবিন

# নগরীর বাজারে নিত্যপণ্য ও ইফতারী সামগ্রী কিনতে ক্রেতাদের ভীড় #
# নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি #
# গরুর মাংস ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে কেজি প্রতি ৭৫০ টাকা করা হয়েছে #

মোঃ আশিকুর রহমান ঃ রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের সু-সংবাদ নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। মুমিনের দুয়ারে কড়া নাড়ছে ‘মাহে রমজান’, আগামী ১ মার্চ (শনিবার) হতে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজানুল মুবারক (চাঁদ দেখার উপর নির্ভর)। আল্লাহ তালার হুকুম পালন করতে টানা একটি মাসের সিয়াম সাধনা করতে সেহরী ও ইফতারীর প্রয়োজনীয় পণ্য সমূহ কেনাকাটার জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১ মার্চ) দিনজুড়ে নগরীর নিউ মার্কেট, ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, বৈকালি, বয়রা, খালিশপুর, জোড়াগেট, রুপসা, দৌলতপুর, ফুলবাড়ীগেট, শিরোমনিসহ স্থানীয় এলাকার বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ক্রেতা সাড়া মিলছে বলে জানিয়েছেন একাধীক ব্যবসায়ীবৃন্দ, তবে মাসের শেষ সময় হওয়াই ব্যবসায়ীরা কাংক্ষিত যে কেনাবেচার আশা করেছিলেন তা না হলেও দু’এক দিনের মধ্যে কেনাবেচা বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) নগরীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা রমজানকে উপলক্ষে বাজার হতে খেজুর, বিভিন্ন ফল-ফলাদী, ছোলা, মুড়ি, চিড়া, বেসন, গুড়, চিনি, সয়াবিন তেল, মুশরি ডাল, পেয়াজ, রসুন, মাছ, মাংস, কাচা আলু, কাঁচা সবজি ক্রয় করেছে। বাজারে খেজুর মিটজল প্রতি কেজি ১৪’শ, মরিয়ম ১১৫০ টাকা, কলমি ১০০০ টাকা, দাবাস/বরই ৪৫০ টাকা, ফিত ৫৫০ টাকা, জিহাদি ২৪০ টাকা, বস্তা খেজুর ১৭০ টাকা, আপেল ২৮০-৩২০ টাকা, কমলা (চায়না) ৩২০-৩৪০ টাকা, শষা কমলা ২৫০-২৮০ টাকা, বেদানা ছোট ২৪০-৩৮০ টাকা, বড় ৪২০-৪৫০ টাকা, আনার ৩৪০-৩৮০ টাকা, আঙ্গুর সাদা ৩০০-৩২০ টাকা, আঙ্গুর কালো ৪০০-৪৫০ টাকা, মালটা ৩০০-৩২০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অস্থায়ী ফল ঘরের ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলী। ছোলা অস্ট্রেলিয়ান মানভেদে ৯২-১০৫ টাকা, ইন্ডিয়ান ছোলা ৯৭ টাকা, বেসন মানভেদে ৭০-১৪০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, মুসরি ডাল মানভেদে ১০০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী কাওসার। প্রতি কেজি খুচরা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা বলে জানিয়েছেন খুচরা তেল ব্যবসায়ী জয়নাল। এদিকে বাজারগুলোতে বোতলজাত তেলের এখনো চরম সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধীক ব্যবসায়ীরা। বিপরীতে ক্রেতারা বলছেন, বোতলজাত তেল কোম্পানীগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাজারে বোতলজাত তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহের কথা বললেও বাজারে তেলের সাদৃশ্য মিলছে না। যেন বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও! গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাংস বিক্রেতা ফরহাদ। মুরগী দেশি ৫’শ টাকা, ব্রয়লার ১৯০ টাকা, কক ২৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, লাল লেয়ার ৩০০ টাকা, সোনালী ৩০০ টাকা, কয়লার ৩০০ টাকা, প্যারিস ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুরগী ব্যবসায়ী নয়ন। পেয়াজ প্রতিকেজি ৪৫ টাকা ( ৫ কেজি ২’শ টাকা), রসুন চায়না প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, রসুন দেশি (নতুন) প্রতি কেজি ১২০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকা ( ৫ কেজি ১’শ টাকা) দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী কবির। চাল মাঝারী চিকন মানভেদে ৫৬-৬০ টাকা, চিকন (উন্নতমান) ৭২-৮০ টাকা এবং মোটা ৫০-৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাল ব্যবসায়ী শাহিন। সবজি বাজারে বেগুন ৭০-৮০ টাকা, ঢেড়শ ১০০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, সীম ৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, শষা ৫০-৬০ টাকা, পেপে ৩০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, পাতা কপি ১০ টাকা, টমেটো ১০ টাকা, বিট কপি ৩৫ টাকা, কুশি ৫০-৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৩৫-৪০ টাকা বলে জানিয়েছেন খুচরা সবজি বিক্রেতা কামরুল। আশ্চার্যের বিষয় রোজা আসার আগেই উর্ধ্বগতি শরবতি লেবুর। এক লাফে একটি ছোট লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকা এবং বড় লেবু বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকায়। মাত্র ৩/৪ দিনের ব্যবধানে আকাশ ছোয়া লেবুর বাজার। উর্ধ্বগতি বেগুনেরও, হাতে গোনা কয়েকদিন আগের ৪০ টাকা বেগুন ইতোমধ্যে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। পবিত্র মাহে রমজানের আগেই এভাবে হাঁটি হাঁটি পা পা করে প্রতিটি পণ্যর দাম বৃদ্ধির শঙ্কা করেছেন সাধারন ভোক্তারা। রোজাকে সামনে রেখে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যেন বাজার সিন্ডিকেট করে রাতারাতি দাম বৃদ্ধি করতে না পারে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি নিয়মিত বাজার মনিটরিংও দাবি জানিয়েছেন তারা। ক্রেতা নাসির উদ্দিন জানান, রমজানে ইফতার ও সেহরীর জন্য বাজার করতে এলাম। রোজার জন্য খেজুর ছোলা, চিড়া, মুড়িসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যে কিনলাম। বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে বাজার মোটামুটি আমাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে, তবে মাহে রমজানকে সামনে রেখে প্রতি বছর অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্য পণ্যের দাম হুড়হুড় করে বাড়িয়ে দেয়। যার নমুনা ইতোমধ্যে বেগুন ও লেবুর গায়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানাচ্ছি। ক্রেতা ফারুক হোসেন সুমন জানান, নতুন চিত্র নয়, রোজার মাসে অসাধু ব্যবসায়ীদের ডাকাতি আরো বেড়ে যায়। বর্হিবিশ্বে রমজানে দাম কমে, আর আমাদের দেশে রমজানে দাম বাড়ে। এ বছর সব কিছুর দাম মোটামুটি স্বাভাবিক আছে, জানি না এমন অবস্থা কতো দিন থাকবে। দাম স্বাভাবিক থাকলে খেটে খাওয়া মানুষেরা দু’টো ডাল ভাত খেতে রোজা রাখতে পারবে। ক্রেতা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, রমজান আসলেই ব্যবসায়ীদের হরিলুট শুরু হয়। কয়েকদিন আগে কাচা সবজির দাম যে দাম ছিল, বর্তমানে হাটি হাটি পা পা করে বেগুন, লেবু, শশা, খিরাই এর দাম বাড়ছে। সঙ্কিত সামনে অন্যান্য সবজির দাম বাড়বে কিনা?
মুরগী ব্যবসায়ী নয়ন জানান, যে সময় যে দামে মুরগী কিনি তা হতে খরচ-খচরা বাদে সামান্য লাভে মুরগি বিক্রি করি। রোজার মাস বিধায় যে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে, এমনটা নয়। বর্তমানে ব্রয়লার ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। সামনে বাড়লে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে, কমলে কম দামে বিক্রি করবো। সবজি ক্রেতা কামরুল জানান, ৪/৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে লেবুর দাম বেড়েছে। ৪/৫ টাকার লেবু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭/৮ টাকায়, বেচবো কয় টাকায়? এছাড়া পাইকারি বাজারে বেগুনের দামও বাড়তি। আমরা খুচরা ব্যবসায়ী পাইকারি বাজার হতে কিনে তবে বিক্রি করি। খরচ-খরচা বাদে সামান্য লাভ করি। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব জানান, ভোক্তাদের অধিকার রক্ষার্থে এবং মাহে রমজানকে সামনে রেখে আমাদের নিয়মিত বাজার তদারকী অভিযান অব্যহত আছে। ভোক্তার অধিকার পরিপন্থি কাজের জন্য ব্যবসায়ীদের জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হচ্ছে। যেহেতু বেগুন, লেবু ও খিরাইয়ের দাম বাড়তির কথা বলা হয়েছে, মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেব।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button