স্থানীয় সংবাদ

খুলনার বাজারে আগাম ‘তরমুজ’

দাম বাড়তির অভিযোগ ক্রেতাদের, মনিটরিংয়ের দাবি

মোঃ আশিকুর রহমান ঃ শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বাড়তি পুষ্টির আশায় সারা বছরই খুলনার বাজারে ফলের চাহিদা লেগেই থাকে। পবিত্র মাহে রমজানে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারির নানা আয়োজনের মধ্যে ফল একটি বড় জায়গা দখল করে রাখে। তাই রমজানের সময় অধিকাংশ রোজাদাররা রসালো ফল তরমুজকে ইফতারির তালিকায় রাখেন।
এদিকে ধীরে ধীরে শীতের আমেজ শেষে গরম পড়তে শুরু করেছে। সবমিলিয়ে রমজানের প্রাক্কালে তরমুজের দেখা মিলেছে। ইতোমধ্যে খুলনার বাজারে তরমুজ কেনাবেচার হাঁকডাক বেড়েছে। খুলনার বাজারে ৭/১০ দিন হলো পুরোদমে নতুন তরমুজ আসতে শুরু করেছে। নগরীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে দেখা গেছে।
খুচরা তরমুজ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এখন তরমুজের সরবরাহ মোটামুটি রয়েছে, সামনে আরো বাড়বে। সূত্রে জানা গেছে, তরমুজের প্রধান উৎপাদন অঞ্চল দক্ষিণাঞ্চল। বিশেষ করে চরঞ্চল পটুয়াখালী, যেখানে দেশের মোট তরমুজ উৎপাদনের প্রায় ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ আসে। এছাড়া পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা ও ভোলা জেলার তরমুজ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সাধারনত ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময়, তবে অনেক কৃষক জানুয়ারীতে তরমুজ আবাদ শুরু করে থাকেন। এপ্রিল-মে মাস জুড়ে থাকে তরমুজের ভরা মৌসুম। তবে ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের শুরুতে বাজারে কিছু আগাম (আগে আবাদ করা) তরমুজ আসে। বর্তমানে বাজারে এ ধরনের আগাম তরমুজই বেশি বিক্রি হচ্ছে। নগরীর ফল বাজারে তরমুজ কিনতে আসা একাধীক ক্রেতারা জানিয়েছেন, যতই আগাম তরমুজ হোক না কেন, তাই বলে কেজি হবে কি ৬০ টাকা ? সংশ্লিষ্টদের যাচাই-বাছাই করতে হবে যে সকল ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত হতে পাইকারি কিনছে, তারা কত টাকা কেজি দরে কিনছে। আর খরচ-খচরা বাদ দিয়ে কত টাকা দরে বিক্রি করা উচিত, আর কত টাকায় বিক্রি করছে। এটা ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই না, সাধারন ক্রেতাদের জিম্মি করে ব্যবসা। এ ব্যপারে সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন তারা। সোমবার (৩ মার্চ ) বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অঞ্চল দক্ষিণাঞ্চল, বিশেষ করে চরঞ্চল পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা ও ভোলা জেলা হতে বর্তমান বাজারের দৃশ্যমান তরমুজ আসছে। চর এলাকা যে সকল চাষীরা আগাম বাজার ধরতে আগাম তরমুজের চাষাবাদ করেছিলেন, ওই সকল তরমুজই বাজারে আসছে। তবে স্থানীয় এলাকা বাজুয়া, দাকোপ, শান্তাহারসহ অন্যান্য অঞ্চলের তরমুজ এখন হতে প্রায় এক/দেড় মাস পড়ে বাজারে আসতে শুরু করবে। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, খুলনা কদমতলা ফলের আড়ৎগুলোতে বড় সাইজের ১’শ পিস তরমুজ কেনা লাগছে ২২-২৫ হাজার টাকা, মাঝারী সাইজ ১৪-১৬ হাজার টাকায় এবং ছোট (ক্যাট) ৭-১০ হাজার টাকায়। বাজারে বর্তমানে ভালো মানের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০-৬০ টাকা দরে। আবার মানভেদে কোনো কোনো তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়ও বলে নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর বাজারের খুচরা তরমুজ বিক্রেতা মহিউদ্দিন আহমেদ রাজু।
খুচরা তরমুজ বিক্রেতা শেখ ফিরোজ জানান, সিজিনের প্রথম বাজার ধরতে চর এলাকার চাষীর এখন হতে দু’মাস আগেই তরমুজের চাষাবাদ করে। ওই চাষাবাদের আগাম তরমুজই এখন বাজারে দৃশ্যমান। তবে স্থানীয় এলাকার উৎপাদিত তরমুজ আর মাস খানের পরে বাজারে আসছে। বাজারে যতই সরবরাহ বাড়বে, ততই দাম কমে আসবে। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা দরে। ছোট তরমুজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা দরে। রমজানের কারণে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে।
দৌলতপুর বাজার ফল ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু জানান, ইতোমধ্যে আগাম তরমুজ বাজারে এসে গেছে। পবিত্র মাহে রমজানের কারণে বাজারে তরমুজের দারুন ক্রেতা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমি খুলনার কদম তলা হতে পাইকারী তরমুজ কিনি নিয়ে, দৌলতপুর বাজারে খুচরা বিক্রি করি। বর্তমানে ভালো মানের প্রতি কেজি তরমুজ ৫০-৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। সিজিনের আগাম ফল হওয়াতে পাইকারী বাজারে তরমুজের দাম একটু বেশি, তবে স্থানীয় এলাকার গ্রীষ্মকালীন তরমুজ বাজারে আসা শুরু করলে দাম হাতের নাগালে চলে আসবে। খুচরা তরমুজ বিক্রেতা সালাউদ্দিন জানান, যেসব তরমুজ বর্তমানে বাজারে দৃশ্যমান, তা খুলনার স্থানীয় অঞ্চলের নয়, এসব তরমুজ পটুয়াখালীর কুয়াকাটার চর এলাকার। আগাম ফল হওয়ার কারনে দাম একটু বেশি। তবে স্থানীয় এলাকার তরমুজ বাজারে আসা শুরু করলে দাম এমনিতেই কমে যাবে।
তরমুজ কিনতে আসা ক্রেতা ¯িœগ্ধা হামিদ জানান, মাহে রমজান চলছে। বর্তমানে বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। গরমের কারনে ইফতার করার সময় তরমুজ বেশ ভালো লাগে। পরিবারের সবাই তরমুজ বেশ পছন্দ করে। তরমুজের প্রচুর দাম, ৫০-৬০ টাকা কেজির নীচে ভালো মানের তরমুজ নাই। একটি ভালো মান ও ভলো সাইজের তরমুজ কিনতে গেলে ৫/৬ কেজির নীচে হয় না। আমি মনে করি যতই সিজিনের শুরুই হোক না কেন, দাম সর্ব্বোচ ২০/৩০ টাকা প্রতি কেজিতে হওয়া উচিৎ ছিল। ব্যবসায়ী ইচ্ছা-স্বাধীন দাম হাকাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানাচ্ছি। দিনমুজুর রহিম জানান, মেয়ের বয়স সাড়ে ৮ বছর। প্রতিদিনই বাড়ি হতে বের হওয়ার সময় তরমুজ নিতে বলে। এতো দাম একটি তরমুজ কিনতে গেলে আড়াই’শ হতে ৩’শ টাকা লাগে। আমার প্রতিদিনে এক বেলার যে আয়, তাই দিয়ে একটা তরমুজ কেনা লাগবে। তাই কেনা হচ্ছে না, দাম কমলে কিনবো। ভ্যাপসা গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ও শরীরে প্রশান্তি যোগাতে বাজারে আগাম তরমুজের বেশ কদর রয়েছে ক্রেতা সাধারনের। তবে এখন যে দামে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কয়েকদিন পরই স্থানীয় এলাকার তরমুজ বাজারে ঢুকলে দাম আপনা আপনি কমে যাবে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ীবৃন্দ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button