স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় ঈদকে ঘিরে কেনাবেচার প্রস্তুতি

# ব্যবসায়ীরা বলছে: রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে কমতে পারে কেনাবেচা
# ছিনতাইকারী, অজ্ঞান ও মলম পার্টির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন #

মো. আশিকুর রহমান ঃ রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের সু-সংবাদ নিয়ে মুসলিম উম্মেহার মাঝে হাজির হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। মহামান্বিত এই রমজান মুসলমানের জন্য নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আত্মশুদ্ধির। গত ২ মার্চ (রবিবার) শুরু হয়েছে রমজানের প্রথম দশক। একটি একটি করে রোজা শেষ হচ্ছে, আর সন্নিকটে আসছে মুসলিম উম্মেহার সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এক মাস সিয়াম সাধনার পর পরিবারের সকলে মিলে মিশে নতুন পোশাকে ঈদের বাড়তি আনন্দটুকু ভাগাভাগি করে নিবে রোজাদারগন, এমনই প্রত্যাশা তাদের। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ব্যস্ততম নগরী খুলনার প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা সব আধুনিক বিপনীবিতান, শপিংমল, মার্কেটসহ ভ্রাম্যমান দোকানগুলোতে ব্যবসায়ী বাহারী রঙ ও ডিজাইন পোশাক সরবরাহ শুরু করেছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) নগরীর বিভিন্ন শপিংমল, মার্কেট, আধুনিক পোশাক বিতানগুলো ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নানা তথ্য।
ব্যবসায়ীর বলছেন, সাধারন তারা বছরের দুইটি ঈদে কাংক্ষিত কেনাবেচা করে থাকেন। তাছাড়া বাকি দিনগুলোতে কোনো রকম কেনাবেচা করে বছর পার করে দেন। মাহে রমজানের ইতোমধ্যে দশটি রোজা শেষ হয়েছে। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা রাজধানী ঢাকা হতে নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন্য নানা রঙের ও ডিজাইনের পোশাক, জুতা, প্রসাধনী সরবরাহ শুরু করেছেন। আসন্ন ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা পুরাদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেনাবেচার, দোকানে রেখেছেন বাড়তি কর্মচারীও। তবে প্রস্তুতি গ্রহন করলেও দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে কাংক্ষিত কেনাবেচা নিয়ে শঙ্কাবোধ করছে, তারা ধারণা এ কারণে কেনাবেচা কমতে পারে। তারপরও আসন্ন ঈদকে ঘিরে ভালো কেনাবেচার প্রত্যাশা তাদের। ব্যবসায়ীরা আরো বলেছেন, প্রতি বছর ভারতীয় সিরিয়ালের নামের পোশাক চাহিদা বেশি থাকলেও এবছর নেই নতুনত্ব, ক্রেতা চাহিদাও কম। সেই আগের আকর্ষণ সারারা,গারারা ও নাইরা । তবে আফগান নামের থ্রী-পিস ও টু-পিস এসেছে। এদিকে আসন্ন ঈদকে আসনে রেখে ঈদকে ঘিরে কেনাকাটার মার্কেট সমূহ, গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহে ব্যস্ততা বিষয়টি নিয়ে ওইসব স্থান সমূহে নিরাপত্তা রক্ষার্থে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত সকল পর্যায়ের টহলও জোরদার করা হয়েছে। ছিনতাইকারী, অজ্ঞান ও মলম পার্টির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন বলে জানিয়েছে সংশ্লিস্টরা।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) খুলনার বিভিন্ন শপিংমল, বিপনীবিতান, মার্কেট সমূহ ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে দোকানগুলো সাজানো হয়েছে আধুনিক ডিজাইন ও বাহরি রঙের পোশাক, জুতা-সেন্ডেল, নামি দামি কোম্পানীর প্রসাধনী, ব্যাগ, ব্যাল্টসহ ঘড়ি ও চশমা দিয়ে। তারা বলছেন, মাহে রমজানের ইতোমধ্যে দশটি রোজা শেষ হয়েছে, প্রতিদিনই ক্রেতারা ঈদ বাজারে আসছে, টুকিটাকি কেনাকাটা করছে। ঈদ যত নিকটে আসবে, ততই ক্রেতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নগরীর সত্ত্বাধিকারী বিমল সাহা জানান, প্রতি ঈদে প্রায় সব বয়সী মহিলাদের বেশি ঝোক থাকে শাড়ির উপর। বিশেষ উঠতি বয়সী তরুনীদের। তাই বাহারি পাকা রঙ ও ডিজাইনের গ্যাস সিল্ক, বেনারসি, জামদানি, ঝুট জামদানি, কারচুপি, কাতান, কাঞ্জীবরন, মাচরাইচ কটন প্রভৃতি শাড়ি সরবরাহ করেছি। বয়স্কদের জন্য টাঙ্গাইল ও প্রিন্টের শাড়ির বেশ চাহিদা রয়েছে। তবে এবার ঈদে শাড়ীর মধ্যে নতুনত্ব হিসাবে চকলেট জর্জেট শাড়ী ও সাটন সিল্কের শাড়ি। আসন্ন ঈদকে ঘিরে ভালো কেনাকাটার জন্য পুরাদমে প্রস্তুতি শেষ করে বসে আছি। তবে প্রস্তুতি গ্রহন করলেও দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে কাংক্ষিত কেনাবেচা নিয়ে শঙ্কা বোধ করছি। তাছাড়া মানুষের হাতে তেমন টাকাও নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটু কেনাকাটা হচ্ছে।
মহিলা ও শিশু পোশাক বিক্রয় প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি জানান, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে আমরা কেনাবেচার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে মহিলা ও শিশুদের জন্য বাহারি রঙের ও ডিজাইনের পোশাক তোলা হয়েছে। দোকানে বড়দের ল্যাহেংঙ্গা, থ্রী-পিস ওয়ান, টু, লং গাউন, সারারা, গারারা। এবার নতুন আকর্ষন বাচ্চাদের আফগান থ্রী-দু’ পিস।
এফ.আর ব্যাগ হাউজের সত্ত্বাধীকারি মো. ইমন খান জানান, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে দোকানে বেবি ব্যাগ, চাইনিজ ব্যাগ, পার্টি ব্যাগ, শিকলি ব্যাগসহ পুরুষদের বেল্ট বিক্রি করছি। রোজা দশটা শেষ হলো। প্রতিদিন ক্রেতা বাড়ছে। টুকটাক কেনাবেচা হচ্ছে। সামনে কেনাবেচা বাড়বে।
নগরীর পায়ে পায়ে সু’র বিক্রয় প্রতিনিধি বাবলু জানান, ঈদের আগেই সকল বয়সীদের জন্য বাহারি রঙ ও ডিজাইনের জুতা সরবরাহ করা হয়ে থাকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে। ইতোমধ্যে দোকান ঢেকে সাজানো হয়েছে। পুরুষদের জন্য সু- লুফার, সাইকেল সু, দুই ফিতার সেন্ডেল, স্পোর্স সেন্ডেল, মহিলাদের জন্য সু-সেন্ডেল, পেন্সিল সু, নাগড়া, চায়না সেন্ডেল, ও বাচ্চাদের লেদার জুতা, চায়না জুতা, লুফার, কেসসহ বাহরি ডিজাইনের জুতা সেন্ডেল বিক্রি করা হচ্ছে। মিশন ও লিখন গার্মেন্টস্ এর সত্ত্বাধীকারি ও দৌলতপুর বাজার বণিক সমিতির নব-নির্বাচিত প্রচার সম্পাদক ইকবাল হোসেন ডলার জানান, সাধারন বছরের দুইটি ঈদে কাংক্ষিত কেনাবেচা করে থাকে আমরা। বাকি দিনগুলোতে কোনো রকম কেনাবেচা করে বছর পার করতে হয়। ইতোমধ্যে দশটি রোজা শেষ হলো। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে আমি আমার প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন্য নানা রঙের ও ডিজাইনের পোশাক সরবরাহ করেছি। ঈদ যত নিকটে আসবে,ততো বেচাকেনা বাড়বে।
প্রসাধনী বিক্রেতা ইলিয়াজ জানান, আমার দোকানে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন ব্যান্ডের প্রসাধনী তুলেছে ঈদ উপলক্ষ্য । তাছাড়াও মেহেদী, আয়লারান, ফ্রেশ ওয়াজ, বিভিন্ন ডিজাইনের চুড়ি, গলার হার, কানের দুল, চুলে থোপা, লিপস্টিকসহ অন্যান্য প্রসাধনীও তুলেছি। সামনে কেনাবাচা বাড়বে।
ঈদ বাজারে আসা ক্রেতা রফিকুল জানান, ঈদের এখনো বাকি ২০ দিন। তবে ছেলে প্রতিদিন বাইনা ধরেছে তাকে পোশাক কিনে দিতে হবে। যে কারণে গতকাল মার্কেটে এসেছি পোশাক কেনার জন্য। ঈদের আগে কিছু পোশাক কিনে রাখা ভালো কারণ নইলে শেষে দিকে মার্কেটে প্রচুর ভীড় থাকে। দৌলতপুর ঈদ বাজারে আসা ক্রেতা সাদিয়া জানান, ঈদ মার্কেটে ঘুরতে ভালো লাগে। এক বছর পর ঈদ আসে। ঘুরে ঘুরে মার্কেট করতে ভালো লাগে। যে কারণে গতকাল মার্কেটে এসেছি ভাইয়ের মেয়ের জন্য পোশাক কিনতে।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর আতাহার আলী জানান, রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের সু-সংবাদ নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। ইতোমধ্যে মাহে রমজানের একটি একটি দিন করে, দশটি দিন অতিবাহিত হলো। পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। ঈদকে ঘিরে খুলনাসহ দৌলতপুর এলাকায় কেনাকাটার মার্কেট সমূহ, গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহে ব্যস্ততা বাড়বে। এ সময় ওই স্থান সমূহে বাড়তি নিরাপত্তা রক্ষার্থে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত সকল পর্যায়ের টহলও জোরদার করা হয়েছে। ছিনতাইকারী, অজ্ঞান ও মলম পার্টির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button