কেসিসির দৌলতপুরস্থ ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয়ের বেহাল দশা

# ঝুঁকিপূর্ন ভবণে চলছে অফিস ও সেবা কার্যক্রম
# ভবনের ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে, ফাটল ধরেছে দেয়ালেও #
# সেবা প্রত্যাশী ও সুধী মহল প্রশ্ন ছুঁড়েছেন: কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে এ দায় কার?
মো. আশিকুর রহমান : ১৯৮৪ সালের ১২ ডিসেম্বর খুলনা শহরের শতবর্ষ পূর্তিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ খুলনাকে মিউনিসিপাল কর্পোরেশন হিসেবে উন্নীত করেন। এরপর ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট খুলনাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের এলাকা বিস্তার লাভ করে ৩১টি ওয়ার্ডে রূপান্তিত হয়। ওই ধারাবাহিকতায় খুলনা নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপশহর দৌলতপুরস্থ কেসিসির ৫নং ওয়ার্ডবাসীদের নাগরিক সেবা প্রদানসহ ওই এলাকার মানুষের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনার সহায়ক হিসাবে ভূমিকা রাখার জন্য বিগত ২০০০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী সেই সময়ের জন প্রতিনিধি (কমিশনার) শেখ কামরুজ্জামানের সময়কালে ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয় ও কমিউনিটি সেন্টারের ফলক উম্মোচন করেন তৎকালীন কেসিসি মেয়র এড. শেখ তৈয়েবুর রহমান। আবারো ২০১২ সালের তৎকালীন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক শেখ মতিয়ার রহমান (সাবেক কমিশনার) নামের কমিউনিটি সেন্টারের ফলক উম্মোচন করেন। সেই হতে এই ওয়ার্ডবাসীর সেবা পূরনের লক্ষে সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত ১৩ টি সেবা প্রদান করে আসছেন। উল্লেখযোগ্য সেবা সমূহ- নাগরিক সেবা, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সেবা, ওয়ারেশ কাম সেবা, ভোটার সংক্রান্ত সেবা, আয়ের সনদ, অবিবাহিত সনদ, পুনঃ বিবাহ সনদ, বৈদ্যুতিক সেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সেবা, বিভিন্ন প্রকার প্রত্যয়ন পত্র প্রদান, ভূমিহীন সনদ প্রদান, বিভিন্ন ভাতা সংক্রান্ত সেবা, গুরুতর অসুস্থ/ দুর্ঘটনা কবলিত শ্রমিকের চিকিসা সহয়তা পেতে সনদসহ সার্বিক সহয়তা প্রদানসহ বিবিধ। দুঃখের বিষয়, ভবনটি নির্মাণের পর দুই যুগ সময় পার হওয়ার পর ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ন ও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, গ্রহন করা হয়নি সংস্কারের জন্য বড় ধরনের কোন উদ্যোগ। এমতাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়ার্ড অফিসের উল্লেখিত সেবা পেতে প্রতিদিনই ৫নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা হতে সেবা প্রত্যাশিরা ছুটে আসেন। সেবা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তিবর্গ ও সুধীমহল বলছেন, বিগত দিনগুলোতে খুলনা শহরের বহুমুখি উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দৌলতপুর উপশহরের গুরুত্বপূর্ন কেসিসির ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয় ও কমিউনিটি সেন্টারটিতে। ভবনটিতে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে চলছে ওয়ার্ডবাসীর সেবা ও অফিস কার্যক্রম। অন্যদিকে কমিউনিটি সেন্টারটিতে চলছে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিও। ঝুঁকিপূর্ন এই ভবনটিতে যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা বোধ করছেন তারা। ওই ব্যক্তিবর্গ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রশ্ন ছুড়েছেন, কোনো বড় দূর্ঘটনা ঘটলে এ দায় কার?
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেসিসির ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয় ও কমিউনিটি সেন্টারটি দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ন ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে, এ বিষয়ে সকলে অবগত। ভবনটি নতুন করে নির্মানের জন্য বিগত দিনে খুলনা শহরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রস্তবণা করে কেসিসি। কিন্তু ওই প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার দরুন ৫নং ওয়ার্ডের ভবনটি নতুন করে নির্মান করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ৫নং ওয়ার্ডের এই ভবনটির বেহাল দশা, তারপরও ঝুঁকি ও জরাজীর্ণ অবস্থায় ভবনে ওয়ার্ডবাসীর সেবা দেওয়াসহ অফিসের নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অফিসের আসবারপত্র ও ভাঙা বলে জানিয়েছেন তারা ।
সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, ভবনটির ছাদের বিভিন্ন স্থান হতে প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে, তাকিয়ে রয়েছে লোহার রডগুলো, বিভিন্ন দেয়ালে ও পিলারে ফাটল ধরেছে। কমিউনিটি সেন্টারের সিলিং ও স্টেজ ভাঙা, অভাব রয়েছে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের। সেবা নিতে আসা সেবা প্রত্যাশীদের বাথরুমের প্রয়োজন হলেও তা ব্যবহারের সম্পূর্ন অনুপযোগী। সম্পূর্ন অফিসে পানি সাপ্লাইয়ের জন্য যে দু’টি প্লাস্টার ট্যাংকি রয়েছে তাও ছিদ্রযুক্ত। ছাদের উপর রান্নায় জায়গাটাও বেহাল। তাছাড়া বর্ষার মৌসুমে এই দূর্ভোগ আরো বাড়ে। সামান্য বৃষ্টি হলেই কমিউনিটি সেন্টারের টিনের চাল ছিদ্রসহ পশ্চিম পাশ খোলা থাকার দরুন চালের পানি ভেতরে ঢুকে মেঝতে পানি জমে থাকে। এমন একাধীক সমস্যা রয়েছে কেসিসির ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয়ে। এমতাবস্থায় দ্রুততম সময়ের ঝুঁকিপূর্ন ও জরাজীর্ণ ভবনটি সংস্কার বা অন্যত্র অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছেন সেবা নিতে আসা ব্যক্তিবর্গসহ সচেতন মহল, নতুবা যে কানো সময়ে বড়সড় দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর বিয়ন মনি থিয়েটারের সাঃ সম্পাদক মো. শরীফ খান বলেন, দৌলতপুর উপশহরের মধ্যে ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামটি অত্যন্ত গুরুত্ববহন করছে এই অঞ্চলের মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান মালা উদ্যাপন করতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় দীর্ঘদিন ধরে অডিটোরিয়ামটি বেহাল দশায় পড়ে আছে। সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, এখনে একটি বহুতল ভবন নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহন করার জন্য। যেখানে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রোগ্রামের জন্য আলাদা একটা ফ্লোর ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য একটা সাউন্ড প্রুফ অডিটোরিয়ামের প্রয়োজনীয়তার রয়েছে বলে আমি মনে করি।
এ ব্যাপারে ৫নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা আলামিন সরদার রতন জানান, কেসিসির ৩১ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয় ও কমিউনিটি সেন্টারটি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। কারণ এই অঞ্চলের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিবাহ-সাদি এখানে হয়ে থাকে। আমার জানা মতে এটি একটি মডেল ওয়ার্ড হিসাবে পরিচিত। মডেল ওয়ার্ডের একি দশা! ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ন, জরাজীর্ণ ও বেহাল দশায় পড়ে আছে। এমতাবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনটি নতুন নির্মান বা সংস্থার করা না হলে দূর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করছি।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানা বিএনপির সাঃ সম্পাদক ও ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ ইমাম হোসেন জানান, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কেসিসির মেয়র ছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি খুলনার উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকার হাতিয়ে নিয়েছেন। সমগ্র খুলনায় তিনি এমন উন্নয়ন করেছেন যে, বর্ষা হলে সমগ্র খুলনা পানিতে তলিয়ে যায়। উন্নয়নের এমন উদাহরন অহরহ। দুঃখের বিষয় ৫নং ওয়ার্ড অফিস ও কমিউনিটি সেন্টারটি দীর্ঘ দিন ধরে ঝুকিপূর্ন ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এটার ছাদের প্লাস্টার খুলে খুলে পড়ছে, লোহার রড বেড়িয়ে রয়েছে। অধিকাংশ দেয়ালে ও পিলারে ফাটল ধরেছে। অত্যন্ত ঝুঁকি ও শঙ্কার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সেবা নিচ্ছে, ঝুঁকির মধ্যে চলছে অফিসের কার্যক্রমও। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ন ও জরাজীর্ণ ভবটির কমিউনিটি সেন্টারে নিয়মিত এই এলাকার মানুষের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কার্যক্রমও চলছে। ভবনটি নতুন নির্মান বা সংস্কারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কারো কোনো মাথা ব্যথা দেখি নাই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনটি নতুন নির্মান বা সংস্থার করা না হলে ঘটতে পারে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে কেসিসি ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয়ের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও এস্টেট অফিসার গাজী সালাউদ্দিন জানান, খুলনা শহরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কেসিসির ৫নং ওয়ার্ড অফিসটিকে ভেঙে নতুন করে নির্মানের জন্য প্রস্তাবণা পাঠানো হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার নতুন করে ভবনটি নির্মান করা সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় পূর্ত বিভাগ যদি মনে করে ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী তবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে অফিস সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আর যদি তারা মনে করেন মেরামত করে ব্যবহার করা যাবে, তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনের যে অংশগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে মেতামতের ব্যবস্থা করবো। আমি আশঙ্কা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন না করলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা বোধ করছি। এ ক্ষেত্রে একটি টেকনিক্যাল টিমের মাধ্যমে ভবনটি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমি কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী স্যারের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি এবং সংশ্লিষ্ট এসও ভবনটি পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান জানান, বিষয়টির ব্যাপারে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি। বিগত সময়ে খুলনা শহরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভবনটি নতুন করে নির্মানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। ভবনটি পরিদর্শনের জন্য ইতোমধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী (ক’ অঞ্চল) ও এস্টেট অফিসারকে নির্দেশনা দিয়েছি। পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এ ব্যাপারে কেসিসির প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।