স্থানীয় সংবাদ

ফুলতলায় দিনে দুপুরে দুর্বৃত্তদের হাতুড়ি পেটায় প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ঃ
খুলনার ফুলতলায় প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তদের হামলায়ফুলতলারইউনিয়ন পরিষদেরপ্যানেল চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ ফারুক মোল্যা (৪৮) নিহত হয়েছেন। তিনি ফুলতলার পয়গ্রামের মৃতঃ হাসান মোল্যার পুত্র এবং তার বিরুদ্ধে ৪টি হত্যাসহ ১৬টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন।বৃহস্পতিবার লাশের ময়না তদন্ত শেষে বাদ আছর জানাযারপর পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফুলতলা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। তবে পুলিশ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহত ফারুক মোল্যার স্ত্রী মাফুজা বেগম (৪০) বলেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে ফুলতলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার মোবাইল ফোনে পরিষদের বকেয়া সম্মানী প্রদানের কথা বলে স্বামী ফারুক মোল্যাকে যেতে বলেন। ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বর ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক মোল্যা পরিষদে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাজ শেষে চেয়ারম্যান তাকে নিরাপদে মধ্যডাঙ্গা জুড়োকোর্টের রাস্তা দিয়ে চলে যেতে বলে। ফারুক মোল্যা সে অনুযায়ী ওই পথ দিয়েমটরসাইকেল যোগে মধ্যডাঙ্গা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের বাড়ির সামনে পৌছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা লোহার রড দিয়ে তার ঘাড়ে সজোরে আঘাত করলে মটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে হাতুড়ি, লোহার রড ও হকিষ্টিক দিয়ে হাত, পা, কোমর, বুক, মাথাসহ গোটা শরীরে উপর্যুপুরি আঘাতে ক্ষত বিক্ষত করে। তার ডান হাত মটকে এবং মৃত্যু নিশ্চিক করতে দ্রুত রক্ত ক্ষরণের জন্য বাম পায়ের রগ কেটে দেয়। যাওয়ার সময় তার ব্যবহৃত মটরসাইকেলটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বন্দুকের কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করতে করতে একটা সাদা রংয়ের মাইক্রো বাসে করে চলে যায়। অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে স্ত্রী মাফুজা ইউনিয়ন পরিষদে আসে। সেখানে না পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারুককে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে এবং মটরসাইকেলে আগুন জ্বলতে দেখেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মটর সাইকেলের আগুন নিভানো ও ফারুককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেয়। দ্রুত ফারুককে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারুক তার স্ত্রী ও কন্যার সামনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, তার ভাইপো, সাবেক দুই ইউপি সদস্য, দীর্ঘদিন ধরে ওপার বাংলায় আশ্রিত গিয়াস বাহিনীর প্রধান ও তার ভাইপো শুভসহ ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জনের কথা উল্লেখ করেছেন বলে স্ত্রী মাফুজা জানিয়েছেন। তবে ক্রমশ অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ এলাকায় পৌছানোর পর তার মৃত্যু ঘটে।
বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়না তদন্ত শেষে পয়গ্রামস্থ তার বাস ভবনে আনা হয়। বাদ আছর জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ফুলতলা থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মনিরুজ্জামানখান বলেন, বুধবার দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় ইউপি সদস্য ফারুক মোল্যাকে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে রেখেছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তার ব্যবহৃত মটরসাইকেলের আগুন নিভানো হয়। ফারুকের কোমর থেকে এক রাউন্ড গুলিসহ একটি ভাঙ্গাচুরা রিভলবার উদ্ধার করা হয়। থানার সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী তালিকাভূক্ত (নং-০৫) আসামী ফারুক মোল্যার বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ ১৬ টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া দুটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলায় আদালত তাকে ৭৪ বছরের দন্ডাদেশ প্রদান করেন। যদিও উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে রয়েছেন। অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার মোবাইল ফোনে ফারুক মোল্যাকে ডেকে আনার কথা অস্বাীকার করে বলেন, বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদে একটা মিটিং এ তার সাথে স্বাক্ষাত হয়। পরে ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদে ভাতা এবং ভিজিএফ এর চাল প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে তিনি চলে যান। এরপর আর কোন যোগাযোগ হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফুলতলা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। তবে পুলিশ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button